ঢাকা   সোমবার, ৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১   সকাল ৯:৩৯ 

Home Blog Page 166

ফেঁসে যাচ্ছে ইউনাইটেড হাসপাতাল, আগুনে পুড়ে ৫ রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় স্বজনদের মামলা,নজর রাখছে হাইকোর্টও

0

অগ্নিকাণ্ডে ৫ জন রোগীর মত্যুর ঘটনায় ফেঁসে যাচ্ছে ইউনাইটেড হাসপাতাল। অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ এনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন নিহত এক রোগীর নিকটাত্মীয়। বুধবার রাতে ডিএমপির গুলশান থানায় এ মামলা করেন আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া ভেরন এ্যান্থনী পলের জামাতা রোনাল্ড মিকি গোমেজ। দন্ডবিধির ৩০৪ (ক) ও ১০৯ ধারায় মামলাটি রেকর্ড করা হয়। মামলায় আসামী করা হয়েছে ইউনাইটেড হাসপাতালের চেয়ারম্যান, এমডি ,সিইও,পরিচালক, সেদিন দায়িত্বপালনকারি চিকিৎসক নার্সসহ সংশ্লিষ্টদের।
গত ২৭ মে ইউনাইটেড হাসপাতালের করোনা ইউনিটে আগুন লাগে আর এতে পুড়ে নিহত হন ৫ জন রোগী।
মামলায় বাদি উল্লেখ করেন, দুবার করোনা টেস্ট নেগেটিভ আসার পরও তার স্বজনকে ইচ্ছেকৃতভাবে করোনা ইউনিটে রাখা হয়। চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনেকটা জোর করে আরো কয়েকজন নন- কোভিড রোগীকে রাখে। তাই অগ্নিকাণ্ডে ৫ জন নিহতের পিছনে পুরো দায় ইউনাইটেড হাসপাতালের।
ঘটনার পর কয়েকদিন পরিবারের সবাই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকায় মামলা করতে দেরি হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
উল্লেখ্য দণ্ডবিধির এ ধারায় অভিযোগ প্রমাণিত হলে আসামীদের ৫ বছরের কারাদণ্ডসহ অর্থদণ্ড হতে পারে।
এর আগে গত ২ জুন এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ইউনাইটেড হাসপাতালে ৫ রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন চায় হাইকোর্ট। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের ভার্চুয়াল কোর্টে দুই আইনজীবীর করা রিটের শুনানি শেষে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), ফায়ারসার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স এবং পুলিশের আইজিকে ১৪ জুনের মধ্যে আলাদাভাবে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
গত ২৭ মে হাসপাতালটির করোনা ইউনিটে অগ্নিকাণ্ডে পাঁচজন রোগীর মৃত্যুতে বেড়িয়ে আসে থলের বেড়াল । এই হাসপাতালটিতে করোনা রোগী ভর্তি করা হতো না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চাপে মাসখানেক হয় হাসপাতালের আঙ্গিনায় জোড়াতালি দিয়ে একটা ইউনিট করা হয়েছে। সেখানেই ভর্তি ছিলেন কয়েকজন করোনাআক্রান্ত রোগী।
অগ্নিকাণ্ডে পাঁচজনের মৃত্যুর ঘটনায় ওই দিনই হাসপাতাল পরিদর্শন করে ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত দল হাসপাতালটির অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থায় নানা অব্যবস্থাপনা আর অসঙ্গতি চিত্র দেখে বিষ্মিত হয়। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামও হাসপাতালটি পরদর্শনে গিয়ে একই দৃশ্য দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
ফায়ারসার্ভিসের উপপরিচালক দেবাশীষ বর্ধনের নেতৃত্বে ৪ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে সংস্থাটি। কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে হাসপাতালটির অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার অপ্রতুলতার কথা সাংবাদিকদের জানান। বলেন, হাসপাতালটিতে ১১ টি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র পাওয়া গেছে যার মধ্যে ৮ টি যন্ত্রেরই মেয়াদ ছিলো না। এ ছাড়া ফায়ার ফাইটার, ফায়ার ড্রিল এবং ফায়ার টিমও ছিল না। হাসপাতালটিতে আগ্নিনির্বাপনের দায়িত্বে একজন কর্মকর্তা থাকলেও ঘটনার সময় তিনি ছিলেন অনুপস্থিত। ফলে ফায়ার হাইড্রেন্ট থাকলেও সেটার মুখ খুলে দেয়ার মত কেউ ছিল না। আগুনের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন গিয়ে ফায়ার হাইড্রেন্টের মুখ খুলে দেয়।
প্রাথমিক তদন্তে ফায়ারসার্ভিসের তদন্ত কমিটি মনে করে, হাসপাতালের আঙ্গিনায় যেখানে করোনা ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে সেখানে বাতাস চলাচলের কোনো ভেন্টিলেশন ছিলনা, সবগুলো এসি ছিল নেগেটিভ প্রেসারের। এ ছাড়া পুরোটা জুড়ে বৈদ্যুতিক তার এলোমেলো করে রাখা ছিল, আর ছিল প্রচুর পরিমান হ্যান্ড স্যানিটাইজার । ফলে আগুন লাগার সাথে সাথে এসব দাহ্য পদার্থের স্পর্শে তা মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ারসার্ভিস কর্মকর্তারা এতোবড় হাসাপাতালটির অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা দেখে বিষ্ময় প্রকাশ করেন।

হাইকোর্টে ১১ টি ভার্চুয়াল বেঞ্চে বিচার পরিচালনা হবে

0

আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত ভার্চুয়াল কোর্টের মেয়াদ বাড়িয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। একই সঙ্গে হাইকোর্টে বাড়ানো হয়েছে ভার্চুয়াল বেঞ্চের সংখ্যা।
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারপতিদের সঙ্গে পরামর্শক্রমে শনিবার এ সিদ্ধান্ত নেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এখন থেকে হাইকোর্টের ১১ টি একক ভার্চুয়াল বেঞ্চে বিচার কাজ চলবে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে। যা আগে ছিল ৪ টি।

জেনে নিন হাইকোর্টের ১১টি বেঞ্চের নামঃ
হাইকোর্ট বিভাগের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (প্রশাসন ও বিচার) মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামান ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সংশ্লিষ্ট সবার অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে দেশব্যাপী করোনাভাইসারের সংক্রমণ রোধে এবং শারীরিক উপস্থিতি ছাড়া ৩১ মে (রোববার) হতে ১৫ জুন (সোমবার) পর্যন্ত আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ, ২০২০ এবং এই কোর্ট কর্তৃক জারি করা প্র্যাকটিস ডাইরেকশন (ব্যবহারিক নির্দেশনা) অনুসরণ করে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে শুধু ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারকার্য পরিচালনার জন্য প্রধান বিচারপতি নিম্নরূপ বেঞ্চসমূহ গঠন করেছেন।
এর মধ্যে বিচারপতি বোরহান উদ্দিন অতি জরুরি ভ্যাট, কাস্টমস ও ইনকাম ট্যাক্স–সংক্রান্ত রিট মোশন ও তৎসংক্রান্ত আবেদন গ্রহণ করবেন। বিচারপতি ওবায়দুল হাসান অতি জরুরি সব ধরনের ফৌজদারি মোশন ও তৎসংক্রান্ত জামিনের আবেদনপত্র গ্রহণ করবেন। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ভ্যাট, কাস্টমস, ইনকাম ট্যাক্স অর্থঋণ আদালত, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যতীত সব প্রকার জরুরি রিট মোশন ও তৎসংক্রান্ত আবেদনপত্র গ্রহণ করবেন। দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের বিষয়াদি ব্যতীত অতি জরুরি সব প্রকার ফৌজদারি মোশন ও তৎসংক্রান্ত জামিন আবেদন গ্রহণ করবেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন এবং বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেনের পৃথক বেঞ্চ। ভ্যাট, কাস্টমস ও ইনকাম ট্যাক্স ব্যতীত অতি জরুরি সব প্রকার রিট মোশন এবং তৎসংক্রান্ত আবেদনপত্র গ্রহণ করবেন বিচারপতি জে বি এম হাসান। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার অতি জরুরি দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, মানি লন্ডারিং আইন এবং দুদক আইন–সংক্রান্ত সব প্রকার ফৌজদারি ও রিট মোশন এবং তৎসংক্রান্ত জামিনের আবেদনপত্র গ্রহণ করবেন। বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের আওতাধীন বিষয়াদি ব্যতীত অতি জরুরি সব প্রকার ফৌজদারি মোশন ও তৎসংক্রান্ত জামিনের আবেদনপত্র গ্রহণ করবেন। অতি জরুরি সকল প্রকার দেওয়ানি মোশন এবং তৎসংক্রান্ত আবেদনপত্র গ্রহণ করবেন বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া।

বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার আদিম অধিক্ষেত্রাধীন অতি জরুরি বিষয়, সাকশেসন আইন, বিবাহবিচ্ছেদ আইন অনুযায়ী মোকদ্দমা, প্রাইজ কোর্ট বিষয়সহ অ্যাডমিরালিটি কোর্ট আইন, ব্যাংক কোম্পানি আইন ও সালিস আইনসহ কয়েকটি আইনের অধীনে আবেদনপত্র গ্রহণ ও আপিল শুনানি গ্রহণ করবেন। বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান অতি জরুরি অর্থঋণ আইন–সংক্রান্ত রিট, দেউলিয়া বিষয়াদি, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং অর্থঋণ আইন হতে উদ্ভূত রিট মোশন এবং তৎসংক্রান্ত আবেদনপত্র গ্রহণ করবেন। হাইকোর্টের এই ১১টি বেঞ্চে আবেদন করার জন্য পৃথক ই–মেইল ঠিকানাও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য ‘আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ, ২০২০’ শিরোনামে ৯ মে অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। এতে অডিও-ভিডিও বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে শারীরিক উপস্থিতি ছাড়া ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে বিচারকাজ পরিচালনার সুযোগ তৈরি হয়। অধ্যাদেশ জারির পর আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের ক্ষেত্রে ভার্চ্যুয়াল কোর্টের জন্য পৃথক প্র্যাকটিস ডাইরেকশন, আইনজীবীদের জন্য আমার আদালত (ভার্চ্যুয়াল কোর্টরুম ব্যবহার) ম্যানুয়াল, অধস্তন আদালত এবং ট্রাইব্যুনালে শুধু জামিনসংক্রান্ত বিষয়াদি ভার্চ্যুয়াল শুনানির মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে বিশেষ প্র্যাকটিস নির্দেশনা সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। প্র্যাকটিস ডাইরেকশনসহ ম্যানুয়ালে ব্যবহারিক দিকনির্দেশনা রয়েছে।
এ দিকে নিম্ন আদালতেও ১৫ জুন পর্যন্ত ভার্চুয়াল কোর্টের মাধ্যমে বিচারকাজ পরিচালনা করা হবে।

দু’দফা ক্ষমতায় থেকেও স্বামী হত্যার বিচার করেন নি খালেদা জিয়া,বিষয়টি রহস্যজনকঃ ড. হাছান মাহমুদ

0

খালেদা জিয়া দুই দফা ক্ষমতায় থেকেও তার স্বামী জিয়াউর রহমান হত্যার বিচার না করা রহস্যজনক বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়া দুই দফায় দশ বছর প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। আরও একবার বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে এক মাসের বেশি ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছিলেন। এটি সত্যিই রহস্যজনক, জিয়াউর রহমান হত্যার বিচার তিনি করেননি। সে কারণে জনগণের মনেও প্রশ্ন, জিয়া হত্যার বিচার করলে থলের বিড়াল বেরিয়ে যাবে, এজন্যই কী তিনি বিচার করেননি!

শনিবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সমসাময়িক বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত মতবিনিময়কালে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপিকে অনুরোধ জানাব, মিথ্যাচার না করে জনগণের পাশে এসে দাঁড়ান। আর আমাদের দুয়ার খোলা আছে, প্রয়োজনে আমাদের সঙ্গে আপনারা একযোগে জনগণকে সহায়তা করার জন্য কাজ করতে পারেন।
করোনা প্রসঙ্গে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, সরকারের সুদক্ষ ব্যবস্থাপনার কারণেই এখনও আশপাশের দেশ ও ইউরোপ-আমেরিকার চেয়ে আমাদের দেশে করোনায় আক্রান্তদের মৃত্যুহার অনেক কম। কিন্তু রুহুল কবির রিজভী সাহেব সহ বিএনপি নেতারা যেভাবে কথাবার্তা বলছেন, তাতে মনে হয়, তারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উপদেষ্টার দায়িত্ব পেয়েছেন।
বিএনপিকে আশপাশের দেশসহ বিশ্বের দিকে তাকানোর অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, পাকিস্তানেও করোনা সংক্রমণের হার আমাদের চেয়ে বেশি। ভারতে সংক্রমণ চীনকে ছাড়িয়ে গেছে। আর বেলজিয়ামে সংক্রমিতদের মৃত্যুহার ১৫ শতাংশ, ব্রিটেনে ১৪, যুক্তরাষ্ট্রে ৬, ভারতে ৩ দশমিক ২, পাকিস্তানে ২ এর বেশি আর আমাদের দেশে ১ দশমিক ৩৬ শতাংশ। আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা যদি ভালো না হতো, তাহলে মৃত্যুহার ভারত-পাকিস্তানের মতো বা তার চেয়ে বেশি হতো। প্রধানমন্ত্রীর সার্বক্ষণিক মনিটরিং ও সংশ্লিষ্ট সবার অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলেই আমরা মৃত্যুহার কমিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছি।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, যাদের প্রয়োজন, তাদের খুঁজে খুঁজে ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে। কেউ চায়নি, কিন্তু মোবাইলে আড়াই হাজার করে টাকা পৌঁছে গেছে। দাবি না থাকা সত্ত্বেও কওমি মাদ্রাসা ও মসজিদগুলোতে সহায়তা পৌঁছেছে। সাংবাদিক, শিল্পীসহ বিভিন্ন পেশার অসহায় মানুষের জন্যও প্রধানমন্ত্রী সহায়তা দিচ্ছেন। আমি বিএনপিকে একটু চক্ষু মেলিয়া আশপাশের দেশে কোথাও এমন ত্রাণ ও সহায়তা দেওয়া হয়েছে কি-না দেখতে অনুরোধ জানাই।
আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ড. রোকেয়া সুলতানা, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন ও উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান এসময় উপস্থিত ছিলেন।

বিড়ি খাওয়ার পক্ষে ৫০ সংসদ সদস্যঃ দাম বাড়াতে চায় এনবিআর

0

ধুমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তামাক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ধুমপান ও তামাক নিরোধের জন্য সরকার আইন করেছে। সংসদের মাধ্যমে এ আইন পাস হয়েছে। অথচ এই সংসদেরই অন্তত ৫০ জন সদস্য ধুমপান তথা তামাকের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তাও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বিড়ির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন তারা। তামাকবিরোধী সংগঠনগুলো যেখানে জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে বিড়ি সিগারেটে শুল্ক বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছে তখন এই সংসদ সদস্যরা বিড়ি শিল্পের মালিকদের পক্ষ নিয়ে বিড়ির ওপর শুল্ক ও কর কমানোর দাবি জানিয়েছেন যা নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠেছে।
শুল্ক কমানোর দাবিতে তারা প্রধানমন্ত্রী এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে পৃথক পৃথকভাবে ডিও লেটার পর্যন্ত দিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে করোনা পরিস্থিতির কারণে বিড়ি শিল্প ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে এমন দাবি করে গত ১৮ মে ৫০ জন সংসদ সদস্য প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে ডিও লেটার দেন। এতে বলা হয়, করোনার কারণে বিড়ি উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। কয়েকলাখ শ্রমিক বেকার। শ্রমিকদের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে হচ্ছে বিড়ি শিল্প মালিকদের। এ অবস্থায় আসন্ন বাজেটে বিড়ির ওপর থেকে কর কমানোর অনুরোধ জানানো হয়।
যেসব সাংসদ ডিও লেটার দিয়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আহসান আদিলুর রহমান, আবু হোসেন বাবলা।
এদিকে ৫০ জন সংসদ সদস্য বিড়ির ওপর শুল্ক কমানোর জন্য ডিও লেটার দেয়ার ঘটনায় বিষ্ময় প্রকাশ করেছে তামাকবিরোধী সংগঠনগুলো। তারা বলছে, এটা শুধু অনৈতিকই নয়, সংবিধানেরও লঙ্ঘন।

শুল্ক বাড়াতে চায় রাজস্ব বোর্ডঃ
৫০ জন সাংসদ বিড়ির ওপর শুল্ক কমানোর দাবি জানালেও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চায় শুল্ক বাড়াতে।
* বিড়ি শিল্প নিয়ে এক গবেষণায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বেশ কিছু সুপারিশ করছে। গবেষণা প্রতিবেদনে বিড়ির কার্যকর মূল্য বৃদ্ধির জন্য সম্পূরক শুল্কের পাশাপাশি সুনির্দিষ্ট কর (specific excise tax) আরোপ করার সুপারিশ করা হয়েছে।  বিড়ির কর ও মূল্য কার্যকরভাবে বৃদ্ধি করা হলে, কয়েক লাখ ধূমপায়ীর অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে এবং বিড়ি থেকে রাজস্ব আয় বেড়ে যাবে দ্বিগুণেরও বেশি।  গবেষণায় বলা হয়েছে, বিড়ি খাত থেকে প্রাপ্ত বাড়তি রাজস্ব দিয়ে শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হলে খুব সহজেই এই ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নিয়োজিত ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের পুনর্বাসন করা সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে বিড়ি শ্রমিকদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য সরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন অর্থনৈতিক কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। সরকারিভাবে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়া হলে  ৭৮.৪ শতাংশ বিড়ি শ্রমিক এই ক্ষতিকর পেশা ছেড়ে দিতে চায় বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।
* গবেষণা প্রতিবেদনে বিড়ির করকাঠামো পরিবর্তনসহ কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে:

১.বিড়ির সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি করা এবং এখান থেকে অর্জিত বাড়তি রাজস্ব দিয়ে বিড়ি শ্রমিকদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য বিশেষ তহবিল গঠন করা।

২.বিড়ির ওপর আরোপিত সম্পূরক শুল্ক/এক্সাইজ ট্যাক্স এর একটি অংশ সুনির্দিষ্ট কর আকারে আরোপ করা।

৩.শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সাথে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল এবং এনবিআরের যৌথ সমন্বয়ের মাধ্যমে যেসব জেলায় বিড়ি কারখানা রয়েছে সেখানে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বিকল্প কর্মসংস্থান অনুসন্ধান করা।

৪. বিড়ি শ্রমিকদের ক্ষতিকর পেশা থেকে সরিয়ে নিতে এনজিও, বিড়ি শ্রমিকদের সংগঠন এবং সিভিল সোসাইটি সংগঠনকে নিয়ে সম্মিলিতভাবে কাজ করা।

৫.নারী, শিশু, বয়স্ক এবং শারীরিকভাবে অক্ষম বিড়ি শ্রমিকদের জন্য স্থানীয় পর্যায়ে উপযুক্ত শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা।
বিড়ি শ্রমিকদের সংখ্যা নিয়ে মিথ্যাচারঃ
এনবিআরের গবেষণা বলছে দেশে বিড়ি শ্রমিকের সংখ্যা ৪৬ হাজার আর কারখানা মালিকদের দাবি ২০ লাখ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, নীতিনির্ধারকদের প্রভাবিত করতে প্রতিবছর বাজেট ঘোষণার আগে বিড়ি মালিক এবং কিছু সুবিধাভোগী বিড়িশ্রমিক নেতা শ্রমিকদের প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে মিথ্যাচার করেন। তারা দাবি তোলেন বিড়ির কর বাড়ানো হলে দেশের বিড়ি কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাবে এবং ২০ থেকে ৩০ লাখ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বে। বিড়ি শ্রমিকদের সংখ্যা নিয়ে যে কাল্পনিক তথ্য তারা বছরের পর বছর দিয়ে থাকেন, তা মিথ্যা এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্তৃক ২০১৯ সালে প্রকাশিত ‘দি রেভিনিউ অ্যান্ড এমপ্লয়মেন্ট আউটকাম অব বিড়ি ট্যাক্সেশন ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বাংলাদেশে বিড়ি শিল্পে  কর্মরত নিয়মিত, অনিয়মিত এবং চুক্তিভিক্তিক মিলিয়ে পূর্ণসময় কাজ করার সমতুল্য শ্রমিক সংখ্যা মাত্র ৪৬ হাজার ৯১৬ জন। বিড়ি শিল্পের কাজ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং মজুরিও খুব কম, মাসে গড় আয় মাত্র ১,৯৭২ টাকা। একজনের আয়ে সংসার চালানো প্রায় অসম্ভব। তাই অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পরিবারের শিশু, নারীসহ সকলকেই বিড়ি তৈরির ঝুঁকিপূর্ণ কাজে সম্পৃক্ত হতে হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন বিড়ি সিগারেট ও তামাকজাত দ্রব্যে বাড়তি কর আরোপ করলে এবং মূল্য বৃদ্ধি করলে মানুষ ধুমপানে নিরুৎসাহিত হবে।

ফাইভস্টার সুযোগ সুবিধার ইউনাইটেড হাসপাতাল, নেই আগুন নেভানোর সরঞ্জাম, ৫ মৃত্যুর দায় নেবে কে?

0

ফাইভস্টার সুযোগ সু্বিধার হাসপাতাল। রোগীও সব বড়লোক। ভর্তি হলেই লাখ টাকা বিল। কিন্তু ভেতরের অবস্থা কাহিল। চিকিৎসাসেবা নিয়ে যেমন প্রশ্ন রয়েছে ঢের, তেমনি প্রশ্ন রয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও। বিশেষ করে, আগুন লাগলে যে সেখানে বাঁচার উপায় নেই তা ৫ জনকে মরে প্রমাণ করতে হলো। আগুন নেভানোর সরঞ্জাম নেই, লোক নেই। যা আছে তাও অকেজো মেয়াদোত্তীর্ণ । অথচ বাইরে দিয়ে সব ফিটফাট। আর এ হাসপাতালটি হলো রাজধানীর গুলশানের অভিজাত ইউনাইটেড হাসপাতাল।
বুধবার হাসপাতালটির করোনা ইউনিটে অগ্নিকাণ্ডে পাঁচজন রোগীর মৃত্যুতে বেড়িয়ে আসে থলের বেড়াল । এই হাসপাতালটিতে করোনা রোগী ভর্তি করা হতো না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চাপে মাসখানেক হয় হাসপাতালের আঙ্গিনায় জোড়াতালি দিয়ে একটা ইউনিট করা হয়েছে। সেখানেই ভর্তি ছিলেন কয়েকজন করোনাআক্রান্ত রোগী।
অগ্নিকাণ্ডে পাঁচজনের মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতাল পরিদর্শন করে ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত দলের চোখ কপালে ওঠার অবস্থা। অভিজাত এ হাসপাতালটির অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থায় নানা অব্যবস্থাপনা আর অসঙ্গতি চিত্র দেখে বিষ্মিত তদন্ত দল। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামও হাসপাতালটি পরদর্শনে গিয়ে একই দৃশ্য দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এদিকে অব্যবস্থাপনার জন্য ৫ জনের মৃত্যুর দায় কে নেবে এ নিয়েও এখন প্রশ্ন ওঠেছে। কারণ ফায়ারসার্ভিসের প্রাথমিক তদন্তে এটা নিশ্চিতই যে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণেই আগুনে পুড়ে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তের জন্য ফায়ারসার্ভিসের উপপরিচালক দেবাশীষ বর্ধনের নেতৃত্বে ৪ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটির সদস্যরা বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে হাসপাতালটির অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার অপ্রতুলতার কথা সাংবাদিকদের জানান। বলেন, হাসপাতালটিতে ১১ টি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র পাওয়া গেছে যার মধ্যে ৮ টি যন্ত্রেরই মেয়াদ ছিলো না। এ ছাড়া ফায়ার ফাইটার, ফায়ার ড্রিল এবং ফায়ার টিমও ছিল না। হাসপাতালটিতে আগ্নিনির্বাপনের দায়িত্বে একজন কর্মকর্তা থাকলেও ঘটনার সময় তিনি ছিলেন অনুপস্থিত। ফলে ফায়ার হাইড্রেন্ট থাকলেও সেটার মুখ খুলে দেয়ার মত কেউ ছিল না। আগুনের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন গিয়ে ফায়ার হাইড্রেন্টের মুখ খুলে দেয়।
প্রাথমিক তদন্তে ফায়ারসার্ভিসের তদন্ত কমিটি মনে করে, হাসপাতালের আঙ্গিনায় যেখানে করোনা ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে সেখানে বাতাস চলাচলের কোনো ভেন্টিলেশন ছিলনা, সবগুলো এসি ছিল নেগেটিভ প্রেসারের। এ ছাড়া পুরোটা জুড়ে বৈদ্যুতিক তার এলোমেলো করে রাখা ছিল, আর ছিল প্রচুর পরিমান হ্যান্ড স্যানিটাইজার । ফলে আগুন লাগার সাথে সাথে এসব দাহ্য পদার্থের স্পর্শে তা মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে।
ফায়ারসার্ভিস কর্মকর্তারা এতোবড় হাসাপাতালটির অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা দেখে বিষ্ময় প্রকাশ করেন।
এ দিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম পরিদর্শন করে হাসপাতালটির অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, হাসপাতালে মানুষ ভর্তি হয় আরোগ্য লাভের জন্য কিন্তু আগুনে পুড়ে যদি মারা যায় সেটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। মেয়র বলেন তদন্ত কমিটি তদন্ত করছে। হাসপাতালের গাফিলতি প্রমাণ হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্যঃ ইউনাইটেড হাসপাতালের চীফ অব কমিনিউকেশন ডা. সেগুফা প্রেস ব্রিফিং এ দাবি করেন বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লেগেছে বলে তাদের ধারণা। তিনি বলেন অগ্নিনির্বাপণের সব ব্যবস্থাই হাসপাতালে ছিল। কিন্তু ঝড়বৃষ্টি ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে রোগীদের দ্রুত উদ্ধার করা সম্ভব হয় নি। জানান, এ ঘটনায় গুলশান থানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছে। নিহত রোগীর স্বজনদের কোনো ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে কী না এমন প্রশ্নের জবাব দেননি ডা. সেগুফা।

এক্সিম ও ন্যাশনাল ব্যাংক মালিকদের বিরোধের নেপথ্যে নানা কাহিনীঃ ঋণ নিয়ে যথেচ্ছাচার,মানা হয় না বিধিবিধান

0

দেশের দুই বেসরকারি ব্যাংক এক্সিম ও ন্যাশনাল ব্যাংক মালিকদের ঋণ দেয়া-নেয়াকে কেন্দ্র করেই বিরোধ থানাপুলিশ পর্যায়ে গড়িয়েছে বলে মনে করছেন ব্যাংক খাতের লোকজন। তবে এমন পরিস্থিতি দেশের ব্যাংকিং খাতের জন্য অশনিসংকেত বলেও মনে করেন আর্থিক খাত বিশ্লেষকরা। দু’ব্যাংকের বিরোধ এখন কোন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকে সেটাই দেখার বিষয়। বিষয়টি শেষ পর্যন্ত উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপে আপোষে গিয়েই শেষ হবে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। কারণ এটা বেশিদূর এগুলো নিজেদের থলের বেড়ালই বের হয়ে যাবে।
উল্লেখ্য সিকদার গ্রুপের এমডি রিক হক সিকদার ও তার ভাই দিপু হক সিকদারের বিরুদ্ধে এক্সিম ব্যাংকের করা মামলায় বলা হয়েছে সিকদার গ্রুপের ৫০০ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর না করায় ব্যাংকটির এমডি ও ডিএমডিকে জিম্মি করে রাখেন ও হত্যার হুমকি দেন সিকদার গ্রুপের এমডি ও তার ভাই। তারা আবার ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালকও। এর জবাবে ন্যাশনাল ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সিকদার গ্রুপের পক্ষ থেকে এ ধরনের ঋণের কোনো আবেদনই করা হয় নি। সিকদার গ্রুপের এমডি ও তার ভাই এক্সিম ব্যাংকের এমডি-ডিএমডির সঙ্গে দেখা করতে গুলশান অফিসেও যান নি। মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে মামলা করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়।
দু ব্যাংকের এমন পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, মামলায় বিব্রত দেশের ব্যাংকিং সেক্টর। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, মালিকদের ক্ষমতার বলি হন ব্যাংক কর্মকর্তারা। ব্যাংকের পরিচালকরা সাধারণ আমানতকারী ও সাধারণ ব্যাবসায়িদের স্বার্থের দিকে না তাকিয়ে নিজেরা যথেচ্ছভাবে ঋণ নিয়ে নেন। হুমকির মুখে ঠেলে দেন ব্যাংককে। দেশের বেশিরভাগ বেসরকারি ব্যাংকেরই একই অবস্থা। পরিচালকরা জামানতবিহীন ঋণ নিয়ে ফতুর করে দিচ্ছেন ব্যাংককে।
আলোচিত এ ঘটনার বিরোধের উৎপত্তিও একই সূত্র থেকে বলে মনে করছেন ব্যাংকাররা। এক্সিম ব্যাংকের মামলায় বলা হয়েছে, ন্যাশনাল ব্যাংকের দুই পরিচালক যে পরিমাণ ঋণ ( ৫০০ কোটি টাকা) চেয়েছেন তাদের বন্ধকী সম্পদের পরিমাণ তারচেয়ে অনেক কম হওয়ার রিপোর্ট দেয়ায় এমডি ডিএমডিকে জিম্মি করে হত্যার হুমকি দেয়া হয়।
অপর দিকে ন্যাশনাল ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এক্সিম ব্যাংকের কয়েকজন পরিচালক ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে উপযুক্ত জামানত ছাড়াই ঋণ নিয়েছেন। এমন কি মামলার বাদিও উপযুক্ত জামানত ছাড়া ঋণ নিয়েছেন।
দু ব্যাংকের পাল্টপাল্টি বক্তব্য থেকে এটা স্পষ্ট যে ব্যাংক পরিচালকরা কোনো জামানত ছাড়াই কোটি কোটি টাকার ঋণ নিয়ে নেন। এসব ঋণ শেষ পর্যন্ত ফেরত আসে কী না তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই।
এ দিকে এক্সিম ব্যাংকের মামলায় পলাতক আছেন ন্যাশনাল ব্যাংকের দুই পরিচালক সিকদার গ্রুপের এমডি রন হক সিকদার ও তার ভাই দিপু হক। পুলিশ বলছে তাদের গ্রেফতারের জন্য চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তবে ঘটনার ১২ দিন পর মামলা,আর মামলা দায়েরের ১০ দিনেও কোনো আসামী গ্রেপ্তার না হওয়া রহস্যজনক বলে মনে করছেন অনেকেই।
পাল্টাপাল্টি অভিযোগঃ
ন্যাশনাল ব্যাংকের দুই পরিচালক দেশের অন্যতম শিল্পগোষ্ঠী সিকদার গ্রুপের এমডি রন হক সিকদার ও তার ভাই দিপু হক সিকদারের বিরুদ্ধে গত ১৯ মে গুলশান থানায় মামলা করেন এক্সিম ব্যাংকের পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল সিরাজুল ইসলাম। মামলার এজাহারে এই দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ হায়দার আলী মিয়া ও অতিরিক্ত এমডি ফিরোজ হোসেনকে অপহরণ করে হত্যার হুমকি এবং গুলি করার অভিযোগ করা হয়। বলা হয় গুলি এমডি হায়দার আলীর কানের পাশ দিয়ে চলে যায়। মামলায় বলা হয় সিকদার গ্রুপের ৫০০ কোটি টাকা ঋণ আবেদনের বিপরীতে বন্ধকী সম্পত্তির দাম কম হওয়ার কথা বলায় রন হক ও দিপু হক অস্ত্রের মুখে গত ৭ মে পূর্বাচল থেকে বনানীতে সিকদার গ্রুপের অফিসে হায়দার আলী ও ফিরোজকে তুলে নিয়ে যান। সেখানে তাদের ওপর চালানো হয় নির্যাতন। পরে জোর করে সাদা কাগজে সই নেয়া হয়। এজাহারে বলা হয়, দিপু সিকদারের নির্দেশে তাদের বাবা জয়নাল হক সিকদারের কাছে দুই কর্মকর্তাকে নিয়ে ফটোসেশান করানো হয়।
এক্সিম ব্যাংকের এমডি, ডিএমডি ও দুই ড্রাইভারকে প্রায় ৫ ঘন্টা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় ছেড়ে দেয়া হয় বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
ন্যাশনাল ব্যাংকের পাল্টা অভিযোগঃ দুই পরিচালকের বিরুদ্ধে মামলার ঘটনায় গণমাধ্যমে নিজেদের বক্তব্য পাঠিয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক। ব্যাংকটির আইনী পরামর্শক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আব্দুল বাসেত মজুমদার লিখিত বক্তব্যে জানান, রন হক এক্সিম ব্যাংক থেকে ৫০০ কোটি টাকা ঋণ পেতে কোনো আবেদনই করেন নি। তিনি এক্সিম ব্যাংকের গুলশান এভিনিউ শাখায় যাননি,এক্সিম ব্যাংকের এমডি ডিএমডির সঙ্গেও দেখা করেন নি। সেই ক্ষেত্রে ঋণ এবং এই সংক্রান্ত জামানত নিয়ে দরকষাকষির কোনো প্রশ্নই আসে না। ঘটনার ১২ দিন পর উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মামলা দায়ের করা ন্যায়বিচারের পরিপন্থী এবং সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে।
বাসেত মজুমদার বলেন, গুলশান থানায় করা মামলার বাদী সিরাজুল ইসলাম নিজেও ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ঋণ সুবিধা গ্রহণ করেছেন। এসব ঋণের উপযুক্ত জামানত ছাড়াই ঋণ নিয়েছেন। এক্সিম ব্যাংকের একজন পরিচালক গত ১৩ মে ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ৫ কোটি টাকার ঋণ সুবিধা গ্রহণ করেছেন বলেও জানানো হয়।
নেপথ্যে কী আছেঃ
এক্সিম ব্যাংকের মামলার ধরন দেখে মনে হচ্ছে নেপথ্যে অনেক ঘটনা রয়েছে। ঘটনা ঘটেছে ৭ মে আর মামলা হয়েছে ১৯ মে। ব্যাংকের দুই শীর্ষ কর্মকর্তাকে আটক করে, হত্যার হুমকি দেয়া, গুলি করা, সাদা কাগজে সই নেয়ার মতো ঘটনা ঘটলেও তা ১২ দিন গোপন রাখা হলো কেনো? এটা প্রাতিষ্ঠানিক বিরোধ না ব্যক্তি বিরোধ? এ ছাড়া মামলায় যারা ক্ষুব্ধ বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সেই এমডি ডিএমডির কেউ মামলা করলেন না। মামলা করলেন তৃতীয় একজন যিনি এক্সিম ব্যাংকের পরিচালক সিরাজুল ইসলাম। এটাও রহস্যজনক এবং নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
২০০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগঃ সিকদার গ্রুপের মালিকানাধীন একটি ইংরেজী পত্রিকা রয়েছে নাম বাংলাদেশ পোষ্ট। পত্রিকাটির প্রকাশক হলেন সিকদার গ্রুপের এমডি রিক হক সিকদার। পত্রিকাটির গত ১৩ মে সংখ্যায় এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও নাসা গ্রুপের মালিক নজরুল ইসলাম মজুমদারকে নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। এতে বলা হয় নজরুল ইসলাম মজুমদার ২০০০ কোটি টাকা পাচার করেছেন। এ ছাড়া নাসা গ্রপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে বিধিবহির্ভূতভাবে ঋণ নিয়েছেন। তার অর্থিক নানা অনিয়মের কথা তুলে ধরা হয় রিপোর্টে। এসব অনিয়ম কেন্দ্রীয় ব্যাংক তদন্ত করছে বলেও জানানো হয়। উল্লেখ্য নজরুল ইসলাম মজুমদার ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংক ( বিএবি) এর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সুষ্ঠু তদন্ত চান ব্যাংকাররাঃ ব্যাংক খাতের সংশ্লিষ্টরা এ ঘটনার সুষ্টু তদন্ত দাবি করে বলেছেন, ব্যাংকিং খাত এমনিতেই খারাপ অবস্থায়। এর মধ্যে ঋণ নিয়ে যদি পরিচালকরা বিরোধে জড়ান তা হলে সাধারণ গ্রাহকরা আরো দুশ্চিন্তায় পড়বে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, দু’ব্যাংকের পরিচালকদের এ ঘটনার দিকে নজর রাখছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

মনগড়া বিদ্যুৎ বিল বিইআরসি আইনের লঙ্ঘন, ক্যাবের নোটিশ; রিট হচ্ছে হাইকোর্টে

0

বিদ্যুৎ বিল নিয়ে তুঘলকি কাণ্ড ঘটিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। করোনাভাইরাসের অজুহাতে গ্রাহকের মিটার রিডিং না করেই মনগড়া বিল ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। এই বিলের পরিমান স্বাভাবিক বিলের চেয়ে তিনগুণ থেকে দশগুণ পর্যন্ত বেশি। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হলে বিদ্যুৎ বিভাগ একটি ব্যাখ্যা দিয়ে জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের কারণে গ্রাহকদের মিটার রিডিং না করায় অনুমানের ওপর বিল করা হয়েছে। কেউ আপত্তি জানাল তা পরবর্তী মাসে সমন্বয় করা হবে।
আইন বিশেষজ্ঞরা বিদ্যুৎ বিভাগের এই বক্তব্যকে বেআইনী বলে দাবি করেছেন। তারা বলছেন অনুমানের ওপর কোনো আইন কার্যকর হতে পারে না। এই ভুতুড়ে বিলের বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টে রিট করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত করোনাভাইরাসের কারণে গ্রাহকদের ফেব্রয়ারী,মার্চ ও এপ্রিল তিন মাসের বিল একসঙ্গে দেয়া হয়েছে। এ বিল স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা। করোনাভাইরাসের কারণে সবকিছু বন্ধ থাকায় মানুষের আয় রোজগারে ধ্বস নেমেছে। সরকার যেখানে মানুষকে আর্থিক প্রণোদনা দিচ্ছে সেখানে বিদ্যুৎ বিভাগ অস্বাভাবিক বিল দিয়ে মরার উপর খাড়ার ঘা দিয়েছে। গত তিন মাসের এসব বিল বাতিল করার দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন, বিইআরসিকে চিঠি দিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। রোববার বিইআরসির চেয়ারম্যানকে এ-সংক্রান্ত চিঠি দেন ক্যাব-এর জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম।
বিইআরসির চেয়ারম্যানকে লেখা চিঠিতে বলা হয়, ক্যাবের অভিযোগ কেন্দ্রে পাওয়া অভিযোগ এবং সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত অভিযোগসমূহ বিশ্লেষণে দেখা গেছে প্রকৃত বিল অপেক্ষা ১০ গুণেরও বেশি বিল করা হয়েছে। করোনার কারণে মিটার রিডিং নেওয়া সম্ভব না হওয়ায় ওই তিন মাসের বকেয়া বিল মনগড়া হিসাবের ভিত্তিতে দেওয়া হয়েছে এবং একসঙ্গে তা পরিশোধ করতে বলা হয়েছে। প্রদত্ত বিল বিইআরসি আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বেআইনি। এই বেআইনি কৃতকর্মে ভোক্তারা একদিকে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এ ঘটনার দ্রুত প্রতিকার ও প্রতিরোধ জরুরি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া আবশ্যক।
ক্যাবের পক্ষ থেকে বিইআরসির কাছে ছয়টি দাবি করা হয়। এগুলো হলো, বিইআরসির কাছে সকল বিতরণকৃত বিল বাতিল/প্রত্যাহারের আদেশ চাওয়া । এ আদেশ না হওয়া পর্যন্ত উক্ত বিলসমূহের ওপর স্থগিতাদেশ দেওয়ার দাবি জানানো হয়।
এ ছাড়া প্রত্যেক ভোক্তাকে মাসভিক্তিক আলাদা নতুন বকেয়া বিল প্রদানের জন্য পল্লী বিদ্যুৎসহ দেশের ছয়টি বিতরণ সংস্থাকে নির্দেশ দিতে হবে। ভোক্তাভেদে কিস্তিতে সে বিল পরিশোধেরও সুযোগ রাখতে হবে।
উল্লেখ্য, প্রকৃত বিদ্যুৎ বিলের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি বিল করেছে দেশের ছয়টি বিতরণ সংস্থা।
বিদ্যুতের বিল করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) বেঁধে দেওয়া নিয়মের বাইরে বিতরণ সংস্থাগুলো এই বিল করেছে।
ভুতুড়ে ও অযৌক্তিক বিল করার কারণে বিতরণ সংস্থার বিরুদ্ধে বিইআরসিকে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, আইন অনুযায়ী বিইআরসি বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্য নিয়ন্ত্রণ সংস্থা। এই সংস্থাটির বেঁধে দেওয়া নিয়মের বাইরে বিদ্যুতের বিল করার সুযোগ নেই। কেউ সেটির ব্যতয় ঘটালে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

প্রকৌশলী দেলোয়ার হত্যায় জড়িত সহকর্মীসহ ৩ জন গ্রেফতার, নেপথ্যে গাজীপুর সিটির প্রভাবশালী চক্র

0

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন হত্যা রহস্য প্রায় উদঘাটন করে ফেলেছে পুলিশ। হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দেলোয়ার হোসেনের দুই সহকর্মীসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা বিভাগ। এরা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সহকারী প্রকৌশলী আনিসুর রহমান সেলিম, শাহীন ও ড্রাইভার হাবিব। হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত একটি হায়েস মাইক্রোবাস উদ্ধার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির উত্তরা ডিভিশনের উপ-পুলিশ কমিশনার নাবিদ কামাল শৈবাল এসব তথ্য জানান।
দুর্নীতিবাজদের সঙ্গে আপোষ না করা ঠিকাদার সিন্ডিকেট ও সিটি কর্পোরেশনের প্রভাবশালী একটি চক্রের রোষানলে পড়েই জীবন দিতে হয়েছে দেলোয়ারকে, প্রাথমিক অনুসন্ধানে এমনটাই মনে করছে পুলিশ।
ডিসি শৈবাল জানান গত ১১ মে বিকেল আনুমানিক চারটার টার দিকে তুরাগ থানার ১৭ নম্বর সেক্টরে অজ্ঞাতনামা একটি লাশ দেখে স্থানীয়রা পুলিশকে সংবাদ দেয়। সংবাদ পেয়ে তুরাগ থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ঝোপের মধ্যে একটু মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। মরদেহের গলায় এবং মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে ঘটনাটি পরিকল্পিত খুন বলে মনে হয়। অজ্ঞাত পরিচয়ের মৃতদেহটি সনাক্তের জন্য র‌্যাব সদর দপ্তরের সহায়তায় ফিঙ্গারপ্রিন্টের মাধ্যমে পরিচয় উদঘাটন করা হয়। সনাক্তকৃত ঠিকানায় যোগাযোগ করে জানা যায়, মৃত ব্যক্তির নাম দেলোয়ার হোসেন (৫০)। তিনি গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের (অঞ্চল-৭) নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। উক্ত ঘটনায় নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে তুরাগ থানায় অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন।
পুলিশ জানায়, হত্যা মামলাটি তদন্তকালে প্রাথমিকভাবে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের (অঞ্চল-৭) এর সহকারী প্রকৌশলী আনিসুর রহমান সেলিম (৪১)সহ প্রকৌশলী রাশেদ ও প্রকৌশলী সুফিয়ানকে ব্যাপকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ভিকটিমের বাসার রাস্তার আশপাশ এবং ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করতে থাকেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ভিকটিমের বাসার অদূরে একটি হায়েস মাইক্রোবাসে একজন সাদা পিপিই পড়া ও একজন শার্ট প্যান্ট পড়া ব্যক্তি অপেক্ষা করছে। হঠাৎই তারা একটি রিক্সাওয়ালাকে থামিয়ে তার মোবাইল থেকে কাকে যেন কল করে। কিছুক্ষণ পর রিক্সাওয়ালার ঐ মোবাইলে ফিরতি কল আসলে তারা দ্রুত ভিকটিমের বাসার দিকে গাড়ি নিয়ে রওনা দেয়। এখানে সাদা পিপিই পরিহিত ব্যক্তির সাথে সহকারী প্রকৌশলী সেলিমের দেহের আকৃতির মিল পাওয়া যায়। বিষয়টি আরও নিশ্চিত হতে ঐ রিক্সাওয়ালকে আটক করে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, পিপিই পরিহিত ব্যক্তি আর প্রকৌশলী সেলিম একই ব্যক্তি। সেলিমের সাথে আরও একজন ব্যক্তি ছিলেন। রিকশাওয়ালার মোবাইল ফোন থেকে কল করে মাইক্রোবাস নিয়ে যাওয়ার সময় তাকে ১০০ টাকা ধরিয়ে দেয়া হয় বলে রিক্সা চালক জানান।

পুলিশ গ্রেফতারকৃত সেলিমের বাসার সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে, দেখা যায় সাদা পিপিই ও কালো জুতা পরিহিত একজন ব্যক্তি বাসা থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন। উক্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত পিপিই, জুতা ও দেহের আকৃতির সাথে ঘটনার সাথে জড়িত পিপিই পরিহিত ব্যক্তির হুবহু মিল রয়েছে। এসব বিষয় তদন্তকারী কর্মকর্তা নিশ্চিত হয়ে প্রকৌশলী সেলিমকে সিসিটিভি ফুটেজ ও তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য সম্পর্কে জানালে তিনি এক পর্যায়ে নিজের সংশ্লিষ্টতা স্বীকার করেন।
হত্যার মোটিভ সম্পর্কে উত্তরা জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার কামরুজ্জামান সরদার বলেন, নিহত প্রকৌশলী দেলোয়ার ও প্রকৌশলী সেলিম একই অফিসে সহকর্মী ছিলেন। তাদের মধ্যে দীর্ঘদিনের অন্তর্দন্দ্ব ছিল। বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে তাদের মধ্যে বনিবনা হতো না। হত্যাকান্ডে সহযোগী হিসেবে শাহীন ও মাইক্রোসহ ড্রাইভার হাবিবকে সঙ্গে নেন সেলিম। ঘটনার দিন সেলিম ও তার অন্য দুই সহযোগী মাইক্রোবাস নিয়ে প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেনের বাড়িতে গিয়ে তাকে গাড়িতে উঠান। গাড়িটি রূপনগর বেড়িবাঁধে পৌছালে সেলিমের ইশারায় মাইক্রোর পেছনে থাকা শাহীন দেলোয়ারের গলায় রশি দিয়ে পেঁচিয়ে টান দেন এবং সেলিম তাকে চেপে ধরে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। হত্যার পর মৃতদেহটি ১৭ নম্বর সেক্টরের খালি জায়গায় ফেলে রেখে তারা পালিয়ে যান। যাওয়ার সময় দেলোয়ারের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি দিয়াবাড়ির তিন নম্বর ব্রিজ সংলগ্ন লেকে ফেলে দেন। পরবর্তীতে ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় ফোনটি উদ্ধার করা হয়েছে।
তিনি জানান, এই ঘটনায় ২১ মে গ্রেফতারকৃত শাহীন ও হাবিব ফৌজদারি কার্যবিধির ১৫৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছেন এবং তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সহকারী প্রকৌশলী আনিসুর রহমান সেলিমকে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
এডিসি কামরুজ্জামান সরদার বলেন তদন্ত অব্যাহত আছে, অন্য কেউ জড়িত আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এদিকে তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, দেলোয়ার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে অনেক রাঘববোয়ালরা জড়িত। ঠিকাদারদের শত কোটি টাকার ফাইল আটকে রাখা ও সিটি করপোরেশনের অনেক দুর্নীতির খবরও জানতেন প্রকৌশলী দেলোয়ার। বিভিন্ন দ্বন্দ্বের কারণে খোদ মেয়রই দেলোয়ারকে ছয় মাসের ওএসডি করে রাখেন।
ঘটনার ছায়া তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গোয়েন্দাদের একটি সূত্র জানায়, দেলোয়ার হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে দুই সহকারী প্রকৌশলীসহ কয়েকজন ঠিকাদারের সঙ্গে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের শীর্ষ এক জনপ্রতিনিধির ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। কারণ ওই জনপ্রতিনিধির নির্দেশনার সিন্ডিকেটের বাইরে কোনও টেন্ডার কাজ হয়না। যারা ছোট ঠিকাদার রয়েছে তাদের লাইসেন্সে এক কোটি টাকার বেশি কাজ দেওয়া হয়না। আর যারা সিন্ডিকেটে রয়েছেন তাদের প্রত্যেকেরই পাঁচ কোটি টাকার কাজ পান।

কয়েকজন ছোট ঠিকাদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগ করে বলেন, ওই জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে বিনা টেন্ডারেও কোটি কোটি টাকার কাজ করেছেন ওই সিন্ডিকেটের ঠিকাদাররা। তারা বলেন, ওই ফাইলগুলো আটকে রাখেন প্রকৌশলী দেলোয়ার। এসব কারনেই তাকে হত্যা করা হতে পারে বলে ধারনা করছেন তারা।
উল্লেখ্য, গত ১১ মে দুপুরে দিয়াবাড়ী বেড়িবাঁধের জঙ্গল থেকে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কোনাবাড়ী অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী খাদিজা আক্তার বাদী হয়ে তুরাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

করোনা থেকে বাঁচতে ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাবার বর্জন করুন; বিকল হতে পারে হৃদপিণ্ড, কিডনি, লিভার, দাবি বিশেষজ্ঞদের

0

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে সবচেয়ে বেশি বিপদ হয়ে দাঁড়ায় যারা হৃদরোগ, কিডনি, উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিসে ভুগছেন তাদের জন্য। এই মরণঘাতী ভাইরাসটি মুহূর্তেই কাবু করে ফেলে এমন রোগাক্রান্তদের। আর এই অসংক্রামক রোগগুলোর জন্য প্রধানত দায়ী ট্রান্স ফ্যাট যুক্ত খাবার। কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের সময় স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং রোগ- প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। সেইসাথে করোনা ভাইরাসে সেলফ-কোয়েরেন্টাইন এবং আইসলেশনে থাকার সময় শিল্পোৎপাদিত ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাবার বর্জন করে প্রাকৃতিক ও স্বাভাবিক খাবার খেতেও পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হৃদরোগীরা করোনা ভাইরাসে সবচেয়ে বেশি ঝূঁকপূর্ণ। বাংলাদেশে প্রতিবছর ২ লাখ ৭৭ হাজার মানুষ হৃদরোগে মারা যায়। ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাবারের কারণে স্ট্রোক এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায়। উচ্চমাত্রায় ট্রান্স ফ্যাট গ্রহণের কারণে সার্বিকভাবে মৃত্যুঝুঁকি ৩৪ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ২১ শতাংশ এবং হৃদরোগজনিত মৃত্যুঝুঁকি ২৮ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। এছাড়া, লকডাউনের কারণে ঘরে বন্দী থাকায় মানুষের শারীরিক কর্মকান্ড অনেকটাই কমেছে। তাই রোগ- প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাবার এড়িয়ে স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের উপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
ট্রান্স ফ্যাট এক প্রকার হাইড্রোজেনেটেড অয়েল। এই আংশিক হাইড্রোজেনেটেড তেলই শিল্পোৎপাদিত ট্রান্স ফ্যাটের প্রধান উৎস, যা ডালডা বা বনস্পতি ঘি নামেও পরিচিত। ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাদ্যদ্রব্য যেমন, প্রক্রিয়াজাত খাবার, ফাস্টফুড, স্ন্যাক্স ফুড, ভাজাপোড়া খাবার, বিস্কুট, কুকিজ, মার্জারিন এগুলোতে ট্রান্স ফ্যাট থাকে।
খাদ্য প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো খাবার সংরক্ষণের সুবিধার্থে এবং বিভিন্ন ভাজা পোড়া ও বেকারি খাদ্য পণ্যের স্বাদ, ঘ্রাণ এবং স্থায়িত্ব বাড়ানোর জন্য আংশিক হাইড্রোজেনেটেড তেল ব্যবহার করে থাকে। এছাড়া ভাজা পোড়া খাদ্যে একই ভোজ্য তেল উচ্চ তাপমাত্রায় বারবার ব্যবহারের কারণেও খাদ্যে ট্রান্স ফ্যাট সৃষ্টি হয়। সাধারণত খরচ কমানোর জন্য হোটেল-রেঁস্তোরায় সিঙ্গারা, সমুচা, পুরি, জিলাপি, চিকেন ফ্রাইসহ বিভিন্ন ধরনের ভাজা পোড়া খাবার তৈরির সময় একই তেল বারবার ব্যবহার করা হয়। এ কারণে এসব খাবারে ট্রান্স ফ্যাটের পরিমাণ বেড়ে যায়।
সম্প্রতি বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন (বিএসটিআই) দেশে প্রচলিত ফাস্টফুড, বেকারিপণ্য, স্ট্রিট ফুড কিংবা রেস্তোরায় তৈরিকৃত ভাজা-পোড়া খাদ্যপণ্য তৈরিতে হাইড্রোজেনেটেড তেলের ব্যবহার কমাতে এবং ভোজ্যতেল বারবার ব্যবহার থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।
বিএসটিআই এর সহকারী পরিচালক এনামুল হক বলেন, কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের কারণে মানুষ এখন ঘরে অবস্থান করছে এবং অধিকাংশের শারীরিক কর্মকান্ড অনেকটাই কমে গেছে, তাই সুস্থ থাকতে ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। ট্রান্স ফ্যাটের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণে ইতিমধ্যে একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করা হয়েছে, বলে জানা তিনি।
এ বিষয়ে গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর বাংলাদেশ এর কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর মুহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস বলেন, হৃদরোগসহ সকল অসংক্রামক ব্যাধি থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে ট্রান্সফ্যাটযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে। উচ্চমাত্রায় ট্রান্স ফ্যাট গ্রহণের কারণে সার্বিকভাবে মৃত্যুঝুঁকি ৩৪ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী, একজন ব্যক্তির দৈনিক ট্রান্স ফ্যাট গ্রহণের পরিমাণ হওয়া উচিত মোট খাদ্যশক্তির ১ শতাংশের কম, অর্থাৎ দৈনিক ২০০০ ক্যালোরির ডায়েটে তা হতে হবে ২.২ গ্রামের চেয়েও কম। ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাবার পরিহার করার একমাত্র পথ হলো সচেতনতা। তাই সচেতনতাই পারে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে।
শিল্পোৎপাদিত ট্রান্স ফ্যাটি অ্যাসিড নির্মূল ক্রমেই বিশ্বজুড়ে একটি অগ্রাাধিকার হয়ে উঠছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০২৩ সালের মধ্যে শিল্পোৎপাদিত ট্রান্স ফ্যাটমুক্ত বিশ্ব অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। ভারত, থাইল্যান্ড, ইরান, অস্ট্রিয়া, নরওয়ে, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ব্রাজিলসহ মোট ৩০টি দেশে খাদ্য দ্রব্যে ট্রান্স ফ্যাটের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ কার্যকর করেছে। এছাড়া আরো ২৪টি দেশ ট্রান্স ফ্যাটের সর্বোচ্চ মাত্রা ২ শতাংশে নামিয়ে আনতে কাজ শুরু করেছে।
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) সূত্রে জানা গেছে ট্রান্স ফ্যাটের সর্বোচ্চ মাত্রা ২ শতাংশে নামিয়ে আনতে একটি নীতিমালা তৈরির কাজ শুরু করেছে তারা। ভোজ্যতেল এবং অন্যান্য খাদ্যে ট্রান্স ফ্যাটের মাত্রা কমিয়ে আনতে ১০ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং উক্ত কমিটি এরই মধ্যে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারবিশেষজ্ঞ এবং ভোক্তাদের সাথে আলোচনা করেছে। সংস্থাটি বলছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত স্ট্যান্ডার্ড মেনেই শিগগিরই এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হবে।

বিড়ি- সিগারেট উৎপাদন ও কেনাবেচা বন্ধে রাজি হয়নি শিল্প মন্ত্রণালয়, গ্রহণ হয়নি স্বাস্থ্য বিভাগের অনুরোধ; ক্ষুব্ধ তামাক বিরোধীরা

0

বিড়ি-সিগারেট ও অন্যান্য তামাকজাতীয় পণ্যের উৎপাদন, সরবরাহ, বিপণন কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধ গ্রহণ করেনি শিল্প মন্ত্রণালয়।
বুধবার শিল্প মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধ গ্রহণ না করার কথা জানানো হয়।
গত সোমবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল থেকে এক চিঠিতে করোনা পরিস্থিতির কারণে জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে সব ধরনের তামাক পণ্যের উৎপাদন ও বিপণন বন্ধের অনুরোধ জানিয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছিল।
এদিকে শিল্পমন্ত্রণালয়ের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে তামাক বিরোধী সংগঠনগুলো। তাদের মতে করোনাভাইরাসের এই দুর্যোগকালিন সময়ে জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধ বিবেচনা করা দরকার ছিলো। তামাকবিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞা’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, ধুমপানসহ তামাকজাত দ্রব্য সেবনে ফুসফুস ও শ্বাসতন্ত্রে মারাত্বক ক্ষতি করে। আর করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ আক্রান্ত করে ফুসফুসকে। এ দিকটি বিবেচনা করেই সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ তামাক পণ্য উৎপাদন বিপণন ক্রয় বিক্রয় বন্ধ রাখার কথা বলেছিল, যা একটা ভালো উদ্যোগ। প্রজ্ঞার পক্ষ থেকে বলা হয় ভারত দক্ষিণ আফ্রিকাসহ অনেক দেশই সাময়িক ভাবে তামাকজাত পণ্য উৎপাদন বিপণন বন্ধ রেখেছে। বাংলাদেশেও সাময়িক ভাবে হলেও তা বন্ধ রাখা দরকার ছিলো বলে মনে করে প্রজ্ঞা।

এদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধ না রাখার পেছনে কয়েকটি যুক্তি তুলে ধরেছে শিল্প মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে । এতে বলা হয়, অর্থনৈতিক কারণে ও কর্মসংস্থানের বিষয়টি চিন্তা করে হুট করে তামাকের উৎপাদন ও বিপণন বন্ধ করা সম্ভব নয়। আবার সাময়িক নিষিদ্ধ করলেও ধূমপান বন্ধ হবে না। বরং কালোবাজারি হবে, সরকার রাজস্ব হারাবে। সামগ্রিক বিবেচনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে এ শিল্প চালু রাখা যুক্তিসংগত হবে বলে শিল্প মন্ত্রণালয় মনে করে।
শিল্প মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, ২০৪১ সালের মধ্যে ধূমপানমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নীতিকে শিল্প মন্ত্রণালয়ও পূর্ণাঙ্গভাবে সমর্থন করে। এ লক্ষ্যে তারা কাজ করছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছিল, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তামাককে কোভিড-১৯ সংক্রমণে সহায়ক হিসেবে চিহ্নিত করে এর ব্যবহার নিরুৎসাহিত করার কথা বলছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সম্প্রতি জানিয়েছে, অধূমপায়ীদের তুলনায় ধূমপায়ীদের কোভিড-১৯ সংক্রমণে মারাত্মকভাবে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

উল্লেখ্য গত ৪ এপ্রিল ইউনাইটেড ঢাকা টোব্যাকো কোম্পানি লিমিটেড সিগারেট উৎপাদন, তামাক ক্রয় এবং উৎপাদিত সিগারেট বিতরণ ও বিক্রির অনুমতি চেয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. মোখলেছুর রহমান আকন্দকে চিঠি দেয়। তারা উল্লেখ করে যে ১৯৫৬ সালের জরুরি পণ্য আইন অনুযায়ী সিগারেট একটি জরুরি পণ্য। এর পরদিন আবেদন অনুযায়ী তাদের সব ধরনের সহায়তা করতে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও দপ্তরে চিঠি পাঠায় শিল্প মন্ত্রণালয়।

বুধবার শিল্প মন্ত্রণালয় বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলেছে, তামাক বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প। এ শিল্পের সঙ্গে দেশের হাজার হাজার প্রান্তিক চাষি ও শ্রমিকের কর্মসংস্থানের বিষয়টি জড়িত। জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হলেও শিল্পোন্নত দেশসহ গোটা বিশ্বে এখন পর্যন্ত তামাক শিল্প চালু রয়েছে। বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এককভাবে এ শিল্পের অবদান সবচেয়ে বেশি। জাতীয় রাজস্ব আয়ের উল্লেখযোগ্য অংশ এ শিল্প খাত থেকে আসে।

শিল্প মন্ত্রণালয় মনে করে, তামাক শিল্প হুট করে বন্ধ করে দেওয়া হলে একদিকে দেশ বিরাট অঙ্কের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হবে, অন্যদিকে বিপুল পরিমাণে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগও বন্ধ হয়ে যাবে। তামাক পাতা না কিনলে প্রান্তিক চাষিরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এ ছাড়া এ ধরনের সিদ্ধান্ত দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটি নেতিবাচক ধারণা দেবে। ফলে বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রবাহ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

ধূমপান কিংবা তামাক জাতীয় পণ্যের ব্যবহার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হলেও এর সেবনকারীরা তা জেনেশুনেই করছেন বলে উল্লেখ করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে। বলা হয়, এ শিল্প সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিলেও তাঁরা এটি সেবন করবেন। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত ‘মোটিভেশন’ ছাড়া শুধু সাময়িক উৎপাদন বন্ধ করে করোনাকালে ধূমপান প্রতিরোধ করা যাবে না। উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলে কালোবাজারিরা উৎসাহিত হবে।

শিল্প মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অধীন জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল ধূমপায়ী ও তামাক জাতীয় পণ্যসেবীদের মধ্যে এটি পরিহারের জন্য প্রচার জোরদার করতে পারে।

করোনা পরিস্থিতিতে এমনিতেই বৈশ্বিক অর্থনীতির মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যথেষ্ট চাপে হয়েছে বলে উল্লেখ করে শিল্প মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, আগামী দিনে অনিবার্যভাবে এই চাপ বাড়বে। এই অবস্থায় বিদ্যমান কর্মসংস্থানের সুযোগ এবং শিল্প উৎপাদন বন্ধ করলে তা হবে মারাত্মক ক্ষতি।
তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল প্রয়োজনীয় ‘মোটিভেশনাল’ কার্যক্রম গ্রহণ করবে বলে আশা প্রকাশ করে শিল্প মন্ত্রণালয়।