অগ্নিকাণ্ডে ৫ জন রোগীর মত্যুর ঘটনায় ফেঁসে যাচ্ছে ইউনাইটেড হাসপাতাল। অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ এনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন নিহত এক রোগীর নিকটাত্মীয়। বুধবার রাতে ডিএমপির গুলশান থানায় এ মামলা করেন আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া ভেরন এ্যান্থনী পলের জামাতা রোনাল্ড মিকি গোমেজ। দন্ডবিধির ৩০৪ (ক) ও ১০৯ ধারায় মামলাটি রেকর্ড করা হয়। মামলায় আসামী করা হয়েছে ইউনাইটেড হাসপাতালের চেয়ারম্যান, এমডি ,সিইও,পরিচালক, সেদিন দায়িত্বপালনকারি চিকিৎসক নার্সসহ সংশ্লিষ্টদের।
গত ২৭ মে ইউনাইটেড হাসপাতালের করোনা ইউনিটে আগুন লাগে আর এতে পুড়ে নিহত হন ৫ জন রোগী।
মামলায় বাদি উল্লেখ করেন, দুবার করোনা টেস্ট নেগেটিভ আসার পরও তার স্বজনকে ইচ্ছেকৃতভাবে করোনা ইউনিটে রাখা হয়। চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনেকটা জোর করে আরো কয়েকজন নন- কোভিড রোগীকে রাখে। তাই অগ্নিকাণ্ডে ৫ জন নিহতের পিছনে পুরো দায় ইউনাইটেড হাসপাতালের।
ঘটনার পর কয়েকদিন পরিবারের সবাই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকায় মামলা করতে দেরি হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
উল্লেখ্য দণ্ডবিধির এ ধারায় অভিযোগ প্রমাণিত হলে আসামীদের ৫ বছরের কারাদণ্ডসহ অর্থদণ্ড হতে পারে।
এর আগে গত ২ জুন এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ইউনাইটেড হাসপাতালে ৫ রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন চায় হাইকোর্ট। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের ভার্চুয়াল কোর্টে দুই আইনজীবীর করা রিটের শুনানি শেষে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), ফায়ারসার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স এবং পুলিশের আইজিকে ১৪ জুনের মধ্যে আলাদাভাবে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
গত ২৭ মে হাসপাতালটির করোনা ইউনিটে অগ্নিকাণ্ডে পাঁচজন রোগীর মৃত্যুতে বেড়িয়ে আসে থলের বেড়াল । এই হাসপাতালটিতে করোনা রোগী ভর্তি করা হতো না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চাপে মাসখানেক হয় হাসপাতালের আঙ্গিনায় জোড়াতালি দিয়ে একটা ইউনিট করা হয়েছে। সেখানেই ভর্তি ছিলেন কয়েকজন করোনাআক্রান্ত রোগী।
অগ্নিকাণ্ডে পাঁচজনের মৃত্যুর ঘটনায় ওই দিনই হাসপাতাল পরিদর্শন করে ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত দল হাসপাতালটির অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থায় নানা অব্যবস্থাপনা আর অসঙ্গতি চিত্র দেখে বিষ্মিত হয়। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামও হাসপাতালটি পরদর্শনে গিয়ে একই দৃশ্য দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
ফায়ারসার্ভিসের উপপরিচালক দেবাশীষ বর্ধনের নেতৃত্বে ৪ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে সংস্থাটি। কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে হাসপাতালটির অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার অপ্রতুলতার কথা সাংবাদিকদের জানান। বলেন, হাসপাতালটিতে ১১ টি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র পাওয়া গেছে যার মধ্যে ৮ টি যন্ত্রেরই মেয়াদ ছিলো না। এ ছাড়া ফায়ার ফাইটার, ফায়ার ড্রিল এবং ফায়ার টিমও ছিল না। হাসপাতালটিতে আগ্নিনির্বাপনের দায়িত্বে একজন কর্মকর্তা থাকলেও ঘটনার সময় তিনি ছিলেন অনুপস্থিত। ফলে ফায়ার হাইড্রেন্ট থাকলেও সেটার মুখ খুলে দেয়ার মত কেউ ছিল না। আগুনের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন গিয়ে ফায়ার হাইড্রেন্টের মুখ খুলে দেয়।
প্রাথমিক তদন্তে ফায়ারসার্ভিসের তদন্ত কমিটি মনে করে, হাসপাতালের আঙ্গিনায় যেখানে করোনা ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে সেখানে বাতাস চলাচলের কোনো ভেন্টিলেশন ছিলনা, সবগুলো এসি ছিল নেগেটিভ প্রেসারের। এ ছাড়া পুরোটা জুড়ে বৈদ্যুতিক তার এলোমেলো করে রাখা ছিল, আর ছিল প্রচুর পরিমান হ্যান্ড স্যানিটাইজার । ফলে আগুন লাগার সাথে সাথে এসব দাহ্য পদার্থের স্পর্শে তা মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ারসার্ভিস কর্মকর্তারা এতোবড় হাসাপাতালটির অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা দেখে বিষ্ময় প্রকাশ করেন।