ঢাকা   মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০   দুপুর ১:৫২ 

সর্বশেষ সংবাদ

স্যালুট আইনমন্ত্রী আনিসুল হক

সদিচ্ছা থাকলে সবকিছুই সম্ভব। নিজে সৎ থাকলে সৎ চিন্তা থাকলে চারপাশও সৎ রাখা সম্ভব। দেশের মানুষ শান্তি চায়, নিরাপত্তা চায়। রাষ্ট্র যারা পরিচালনা করেন, সরকার যারা চালান তারা যেনো সৎ হন দেশের নাগরিকরাও সেটাই চায়। ফলে দেখা যায় সরকার পরিচালকদের মধ্যে কেউ একটু ভালো কাজ করলেই তিনি প্রশংসার জোয়ারে ভাসেন। মানুষ তাঁর প্রশংসা করেন। এর সর্বশেষ উদাহরণ আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর একটা ছবি রীতিমত ভাইরাল হয়ে যায়। ছবিতে দেখা যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় মুজিববর্ষ উপলক্ষে যে আশ্রয়ণ প্রকল্প হচ্ছে সেই প্রকল্পের কাজে সরেজমিনে দেখতে গিয়ে এলাকার সংসদ সদস্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হক মই বেয়ে উপরে ওঠে কাজের মান পর্যবেক্ষণ করেছেন। রোদ আর প্রচণ্ড গরমে নেয়ে-ঘেমে প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে এই আশ্রয়ণ পকল্পের কাজ দেখে প্রশংসিত হয়েছেন আইনমন্ত্রী। সামাজিক যোগাযোগমা মাধ্যমে এ ছবি এবং খবর ব্যাপক প্রচার হয়েছে। মানুষ প্রশংসা করেছে।
স্থানীয় পরিচিত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি, আখাউড়ার এই আশ্রয়ণ প্রকল্পটিতে ঘর নির্মাণে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় সেখানকার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি)কে ইতিমধ্যে বদলী করা হয়েছে।
জানা গেছে, আখাউড়ার ইউএনও রুমানা আক্তার ও এসি ল্যান্ড সাইফুল ইসলামসহ চারজনের বিরুদ্ধে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠলে স্থানীয় জেলা প্রশাসক তা তদন্ত করেন। তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেলে নিম্নমানের কাজ, নিয়ম অনুযায়ী রড, সিমেন্ট না দেয়াসহ অন্যান্য অভিযোগের ভিত্তিতে ৮৮টি ঘরের নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক।

পরে ইউএনও রুমানা আক্তারকে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলামকে বান্দরবানের থানচি উপজেলায় বদলি করা হয়। অভিযোগ ওঠে, একজন ঠিকাদারকেই ইউএনও ১৬৯টি ঘর নির্মাণের কাজ দেন। যেখানে অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এটা বলার অপেক্ষা রাখেনা প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে যেসব কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন তার মধ্যে সবচেয়ে প্রশংসিত ও ভাল উদ্যোগ ছিলো ভূমিহীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে সারাদেশে ভূমিহীনদের জন্য সরকারি খাস জমিতে ঘর বানিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু এই প্রকল্প নিয়ে দুর্নীতির আভিযোগ ওঠে। নিম্ন মানের মালামাল দিয়ে ঘর বানানোর ফলে অনেক স্থানে ভেঙ্গে পড়ে ঘর। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। সরকার তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্তে অনেক অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।
এ অবস্থায় আইনমন্ত্রী তার নিজের সংসদীয় এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের অনিয়মের খবর পেয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেন এবং নিজেই বিষয়টি মনিটর করেন। আইনমন্ত্রীর এলাকার মতো সারাদেশেই মন্ত্রী এমপিদের এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্প হচ্ছে। কিন্তু যেসব অনিয়ম দুর্নীতির খবর প্রকাশ হয় তাতে মন্ত্রী এমপিরা খুব একটা গায়ে মাখেন নি। স্থানীয় প্রশাসনের ওপরই ছেড়ে দিয়েছেন। অর্থাৎ রাজনৈতিক অবস্থান থেকে মন্ত্রী এমপিরা দায়িত্ব নেননি। অথচ মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষ করেই শুধু নয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের যেসব ভাল কর্মসূচি রয়েছে তারমধ্যে সবচেয়ে ভাল ও শ্রেষ্ঠ কর্মসূচি হলো ভূমিহীনদের জন্য ঘর নির্মাণ করে আশ্রয় দেয়ার প্রকল্প। মাথার ওপর যার আশ্রয় নেই তার অসহায়ত্ব সে ছাড়া কেউ বুঝবে না। গরীব এই রাষ্ট্রের এই উদ্যোগটি বিশ্বের অনেক গরীব দেশের কাছে মডেল হিসেবে স্থান পেয়েছে। কিন্তু মুজিব বর্ষে শেখ হাসিনার এই কর্মসূচী আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক নেতৃত্ব এই সফলতার কথা রাজনৈতিকভাবে তুলে ধরে পারছেন না। তারা এটাকে আমলাদের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। ফলে স্থানীয়ভাবে তারা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হননি। কোনো মন্ত্রী বা এমপি যদি শুরু থেকেই নিজ নিজ এলাকায় এই প্রকল্পটির সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করতেন, নজরদারি করতেন তাহলে মাঠ পর্যায়ের ছোট আমলারা এই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত হতে পারতেন না।
যেমনটা সম্ভব হয়নি আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের নিজ এলাকায়। তিনি এলাকার সংসদ সদস্য, গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী। এতো ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি তার এলাকার এই প্রকল্পটিতে নজর রেখেছেন। প্রধানমন্ত্রীর আবেগের একটি প্রকল্প আশ্রয়ণ প্রকল্পে কোনো অনিয়ম সহ্য করেন নি। অনিয়মের খবর পেয়ে প্রশাসনের ক্ষুদে আমলাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
এটা সম্ভব হয়েছে আইনমন্ত্রীর তাঁর নিজের সততার কারণে। রাজনৈতিক আঙ্গীকারের কারণে। রাষ্ট্রের গরীব মানুষ যাদের মাথা গোঁজার ঠাই নেই, এতটুকু আশ্রয় নেই, সেই তাদের জন্য নির্মিত একটি ঘর বানাতেও যদি দুর্নীতি হয় তা হলে দেশপ্রেম বলতে কিছু থাকে না। কিন্তু অনেক মন্ত্রী এমপির এলাকাতেই দেখলাম এই অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে চুপ থাকতে।
ব্যতিক্রম করলেন আইনমন্ত্রী। একটি ভালো কাজের প্রশংসা করতেই হয়। তাঁর ছবি দিয়ে নেটিজেনারই বলছেন, স্যালুট আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। এ জামানায় একজন মন্ত্রী ও রাজনৈতিক নেতার জনগণের কাছ থেকে স্যালুট পাওয়া অনেক বড় পাওয়া। এটা স্বীকার করতেই হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সবচেয়ে আলোচিত