ফাইভস্টার সুযোগ সু্বিধার হাসপাতাল। রোগীও সব বড়লোক। ভর্তি হলেই লাখ টাকা বিল। কিন্তু ভেতরের অবস্থা কাহিল। চিকিৎসাসেবা নিয়ে যেমন প্রশ্ন রয়েছে ঢের, তেমনি প্রশ্ন রয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও। বিশেষ করে, আগুন লাগলে যে সেখানে বাঁচার উপায় নেই তা ৫ জনকে মরে প্রমাণ করতে হলো। আগুন নেভানোর সরঞ্জাম নেই, লোক নেই। যা আছে তাও অকেজো মেয়াদোত্তীর্ণ । অথচ বাইরে দিয়ে সব ফিটফাট। আর এ হাসপাতালটি হলো রাজধানীর গুলশানের অভিজাত ইউনাইটেড হাসপাতাল।
বুধবার হাসপাতালটির করোনা ইউনিটে অগ্নিকাণ্ডে পাঁচজন রোগীর মৃত্যুতে বেড়িয়ে আসে থলের বেড়াল । এই হাসপাতালটিতে করোনা রোগী ভর্তি করা হতো না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চাপে মাসখানেক হয় হাসপাতালের আঙ্গিনায় জোড়াতালি দিয়ে একটা ইউনিট করা হয়েছে। সেখানেই ভর্তি ছিলেন কয়েকজন করোনাআক্রান্ত রোগী।
অগ্নিকাণ্ডে পাঁচজনের মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতাল পরিদর্শন করে ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত দলের চোখ কপালে ওঠার অবস্থা। অভিজাত এ হাসপাতালটির অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থায় নানা অব্যবস্থাপনা আর অসঙ্গতি চিত্র দেখে বিষ্মিত তদন্ত দল। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামও হাসপাতালটি পরদর্শনে গিয়ে একই দৃশ্য দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এদিকে অব্যবস্থাপনার জন্য ৫ জনের মৃত্যুর দায় কে নেবে এ নিয়েও এখন প্রশ্ন ওঠেছে। কারণ ফায়ারসার্ভিসের প্রাথমিক তদন্তে এটা নিশ্চিতই যে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণেই আগুনে পুড়ে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তের জন্য ফায়ারসার্ভিসের উপপরিচালক দেবাশীষ বর্ধনের নেতৃত্বে ৪ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটির সদস্যরা বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে হাসপাতালটির অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার অপ্রতুলতার কথা সাংবাদিকদের জানান। বলেন, হাসপাতালটিতে ১১ টি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র পাওয়া গেছে যার মধ্যে ৮ টি যন্ত্রেরই মেয়াদ ছিলো না। এ ছাড়া ফায়ার ফাইটার, ফায়ার ড্রিল এবং ফায়ার টিমও ছিল না। হাসপাতালটিতে আগ্নিনির্বাপনের দায়িত্বে একজন কর্মকর্তা থাকলেও ঘটনার সময় তিনি ছিলেন অনুপস্থিত। ফলে ফায়ার হাইড্রেন্ট থাকলেও সেটার মুখ খুলে দেয়ার মত কেউ ছিল না। আগুনের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন গিয়ে ফায়ার হাইড্রেন্টের মুখ খুলে দেয়।
প্রাথমিক তদন্তে ফায়ারসার্ভিসের তদন্ত কমিটি মনে করে, হাসপাতালের আঙ্গিনায় যেখানে করোনা ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে সেখানে বাতাস চলাচলের কোনো ভেন্টিলেশন ছিলনা, সবগুলো এসি ছিল নেগেটিভ প্রেসারের। এ ছাড়া পুরোটা জুড়ে বৈদ্যুতিক তার এলোমেলো করে রাখা ছিল, আর ছিল প্রচুর পরিমান হ্যান্ড স্যানিটাইজার । ফলে আগুন লাগার সাথে সাথে এসব দাহ্য পদার্থের স্পর্শে তা মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে।
ফায়ারসার্ভিস কর্মকর্তারা এতোবড় হাসাপাতালটির অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা দেখে বিষ্ময় প্রকাশ করেন।
এ দিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম পরিদর্শন করে হাসপাতালটির অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, হাসপাতালে মানুষ ভর্তি হয় আরোগ্য লাভের জন্য কিন্তু আগুনে পুড়ে যদি মারা যায় সেটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। মেয়র বলেন তদন্ত কমিটি তদন্ত করছে। হাসপাতালের গাফিলতি প্রমাণ হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্যঃ ইউনাইটেড হাসপাতালের চীফ অব কমিনিউকেশন ডা. সেগুফা প্রেস ব্রিফিং এ দাবি করেন বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লেগেছে বলে তাদের ধারণা। তিনি বলেন অগ্নিনির্বাপণের সব ব্যবস্থাই হাসপাতালে ছিল। কিন্তু ঝড়বৃষ্টি ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে রোগীদের দ্রুত উদ্ধার করা সম্ভব হয় নি। জানান, এ ঘটনায় গুলশান থানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছে। নিহত রোগীর স্বজনদের কোনো ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে কী না এমন প্রশ্নের জবাব দেননি ডা. সেগুফা।