ফেসবুকে ১৮ মিনিট ১৮ সেকেন্ডের একটা ভিডিও দেখে মনটা বিষাদে ছেয়ে গেলো । মনে হয় দুতিন দিন আগে সিলেটের মিরটুলাবক্স এলাকায় ফিনল্যান্ডের এক নাগরিক অসুস্থ হয় একটি মার্কেটের সামনে পড়ে যান। সম্ভবত লোকটি চেতনা হারিয়ে ফেলেন। এরপর দেখলাম উৎসুক জনতাকে। পুলিশ, সাংবাদিক,পাবলিক সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়লো মোবাইল ফোনে ছবি ও ভিডিও করা নিয়ে। কেউ লোকটিকে উদ্ধারে এগিয়ে আসলো না। কিছুক্ষণ পর একটি এম্বুলেন্স আসলো। এম্বুলেন্সের চালক নামলেন, অনেক চিন্তাভাবনা করে তিনি একা গিয়ে লোকটিকে একবার তোলার চেষ্টা করলেন। একা পারলেন না এবং অন্য কেউ এগিয়ে আসলেন না। এম্বুলেন্স চালকের অসহায় ও ভীতিকর চেহারাটা ফুটে ওঠলো। পুলিশদের দেখলাম ছবি তুলতে ব্যস্ত আর পাবলিক মজা নিচ্ছে। এরপর এম্বুলেন্স চালক হাতে গ্লাভস ও পিপিই পরে স্ট্রেচার নিয়ে আসলেন। এসময় আরেকজন বৃদ্ধলোক ও আরেক যুবক এগিয়ে আসলেন। তিনজনে অনেক অবহেলা করে লোকটিকে স্ট্রেচারে করে গাড়িতে তুললেন। কিন্তু গাড়ির দড়জা খোলা থাকায় চাকাযুক্ত স্ট্রেচারটি গড়িয়ে পড়ে যায় এবং অসুস্থ লোকটিও নিচে পড়ে যায়। এ দৃশ্যটা দেখে এতোই খারাপ লাগলো যে আমার কান্না চলে আসে। পুরো দৃশ্যটা দেখে মনে হয়েছে এটা আফ্রিকার কোনো জংলী আদিবাসী সমাজে ঘটছে। লোকটিকে আবার তিনজনে টানাটানি করে এম্বুলেন্সে তুললেন । কোথায় এম্বুলেন্স দ্রুত চলে যাবে, তা নয়, এবার শুরু হলো ফটো সেশন। দেখলাম এম্বুলেন্সের পেছনের দড়জা খুলে পুলিশের লোকজন ছবি তুলছে। তাদের ছবি তোলা শেষে চলতে শুরু করলো এম্বুলেন্স।
পুরো দৃশ্যটা দেখে আমার মনে প্রশ্ন আমরা কোন সমাজে বাস করছি? একটা বিভাগীয় শহরের প্রাণকেন্দ্রে একজন মানুষ, তাও বিদেশী নাগরিক অসুস্থ হয়ে পড়লো তাকে উদ্ধারে কেউ এগিয়ে আসলো না? পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকেও অসুস্থ লোকটিকে এম্বুলেন্সে উঠানোর সহায়তা করলো না। শত শত মানুষ তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলো অথচ একজনও এগিয়ে আসার মানবিকতাটা দেখালো না? সবাই করোনার ভয়ে আতঙ্কিত ছিলেন? একজনও কী শিক্ষিত মানুষ ছিলেন না যিনি জানেন, যে করোনা আক্রান্ত হয়ে হঠাৎ করে রাস্তায় চেতনা হারিয়ে কেউ পড়ে যায় না। করোনা হলে জ্বর হবে,কাশি হবে, কিছুদিন এগুলো হওয়ার পর কেউ বিছানায় পড়ে যাবে। করোনা হয়ে এভাবে রাস্তাঘাটে কেউ পড়ে থাকবে না।
শিক্ষিত নামধারি এই লোকগুলোর ভূমিকা দেখে আমি বিষ্মিত। বিশেষ করে পুলিশের লোকগুলোর আচরণ দেখে আমি লজ্জিত। আমি ঘৃণা প্রকাশ করছি এদের মূর্খতা দেখে। পুলিশ এতো দায়িত্বহীন তা ভাবাই যায় না।
জানিনা এই বিদেশী নাগরিকটির শারীরিক অবস্থা এখন কেমন। প্রার্থণা করি লোকটি সুস্থ হয়ে নিজ দেশে ফিরে যাক। এই দেশের একজন নাগরিক হিসেবে তার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী এমন অমানবিক আচরণের জন্য।
(ভিডিওটি চাইলে কেউ দেখতে পারেনঃ Syl News BD এদের ফেসবুক পেজে)।