বিদ্যুৎ বিল নিয়ে তুঘলকি কাণ্ড ঘটিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। করোনাভাইরাসের অজুহাতে গ্রাহকের মিটার রিডিং না করেই মনগড়া বিল ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। এই বিলের পরিমান স্বাভাবিক বিলের চেয়ে তিনগুণ থেকে দশগুণ পর্যন্ত বেশি। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হলে বিদ্যুৎ বিভাগ একটি ব্যাখ্যা দিয়ে জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের কারণে গ্রাহকদের মিটার রিডিং না করায় অনুমানের ওপর বিল করা হয়েছে। কেউ আপত্তি জানাল তা পরবর্তী মাসে সমন্বয় করা হবে।
আইন বিশেষজ্ঞরা বিদ্যুৎ বিভাগের এই বক্তব্যকে বেআইনী বলে দাবি করেছেন। তারা বলছেন অনুমানের ওপর কোনো আইন কার্যকর হতে পারে না। এই ভুতুড়ে বিলের বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টে রিট করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত করোনাভাইরাসের কারণে গ্রাহকদের ফেব্রয়ারী,মার্চ ও এপ্রিল তিন মাসের বিল একসঙ্গে দেয়া হয়েছে। এ বিল স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা। করোনাভাইরাসের কারণে সবকিছু বন্ধ থাকায় মানুষের আয় রোজগারে ধ্বস নেমেছে। সরকার যেখানে মানুষকে আর্থিক প্রণোদনা দিচ্ছে সেখানে বিদ্যুৎ বিভাগ অস্বাভাবিক বিল দিয়ে মরার উপর খাড়ার ঘা দিয়েছে। গত তিন মাসের এসব বিল বাতিল করার দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন, বিইআরসিকে চিঠি দিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। রোববার বিইআরসির চেয়ারম্যানকে এ-সংক্রান্ত চিঠি দেন ক্যাব-এর জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম।
বিইআরসির চেয়ারম্যানকে লেখা চিঠিতে বলা হয়, ক্যাবের অভিযোগ কেন্দ্রে পাওয়া অভিযোগ এবং সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত অভিযোগসমূহ বিশ্লেষণে দেখা গেছে প্রকৃত বিল অপেক্ষা ১০ গুণেরও বেশি বিল করা হয়েছে। করোনার কারণে মিটার রিডিং নেওয়া সম্ভব না হওয়ায় ওই তিন মাসের বকেয়া বিল মনগড়া হিসাবের ভিত্তিতে দেওয়া হয়েছে এবং একসঙ্গে তা পরিশোধ করতে বলা হয়েছে। প্রদত্ত বিল বিইআরসি আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বেআইনি। এই বেআইনি কৃতকর্মে ভোক্তারা একদিকে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এ ঘটনার দ্রুত প্রতিকার ও প্রতিরোধ জরুরি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া আবশ্যক।
ক্যাবের পক্ষ থেকে বিইআরসির কাছে ছয়টি দাবি করা হয়। এগুলো হলো, বিইআরসির কাছে সকল বিতরণকৃত বিল বাতিল/প্রত্যাহারের আদেশ চাওয়া । এ আদেশ না হওয়া পর্যন্ত উক্ত বিলসমূহের ওপর স্থগিতাদেশ দেওয়ার দাবি জানানো হয়।
এ ছাড়া প্রত্যেক ভোক্তাকে মাসভিক্তিক আলাদা নতুন বকেয়া বিল প্রদানের জন্য পল্লী বিদ্যুৎসহ দেশের ছয়টি বিতরণ সংস্থাকে নির্দেশ দিতে হবে। ভোক্তাভেদে কিস্তিতে সে বিল পরিশোধেরও সুযোগ রাখতে হবে।
উল্লেখ্য, প্রকৃত বিদ্যুৎ বিলের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি বিল করেছে দেশের ছয়টি বিতরণ সংস্থা।
বিদ্যুতের বিল করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) বেঁধে দেওয়া নিয়মের বাইরে বিতরণ সংস্থাগুলো এই বিল করেছে।
ভুতুড়ে ও অযৌক্তিক বিল করার কারণে বিতরণ সংস্থার বিরুদ্ধে বিইআরসিকে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, আইন অনুযায়ী বিইআরসি বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্য নিয়ন্ত্রণ সংস্থা। এই সংস্থাটির বেঁধে দেওয়া নিয়মের বাইরে বিদ্যুতের বিল করার সুযোগ নেই। কেউ সেটির ব্যতয় ঘটালে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।