সমুদ্রের গ্যাস অনুসন্ধানের দায়িত্ব পাচ্ছে আমেরিকান কোম্পানি এক্সনমোবিল!
জ্বালানীখাতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় আমেরিকান কোম্পানি এক্সনমোবিল( ExxonMobil) বঙ্গপোসাগরে বাংলাদেশের সীমানায় ১৫ টি ব্লকে গ্যাস অনুসন্ধানের প্রস্তাব দিয়েছিলো বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে। তাদের প্রস্তাবটি নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিল এবং ঝুলিয়ে রাখে।
ফলে নিস্পত্তি হয়নি বঙ্গোপসাগরের গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধানের কাজ। সেই ১৫ টি ব্লক শেষ পর্যন্ত আমেরিকান কোম্পানিই পাচ্ছে।
পেট্রোবাংলার তথ্য মতে বর্তমানে দেশের তেল গ্যাস অনুসন্ধান ব্লকের সংখ্যা ৪৮টি। এর মধ্যে স্থলভাগে ব্লকের সংখ্যা ২২ টি। বঙ্গোপসাগরে ব্লক রয়েছে ২৬ টি। এর মধ্যে ১৫ টির অবস্থান গভীর সমুদ্রে আর ১১ টির অবস্থান অগভীর সমুদ্রে। বর্তমানে অগভীর সমুদ্রের অংশে দুটি ব্লকে ভারতীয় দুটি কোম্পানি ওএনজিসি ভিদেশ লিমিটিড এবং ওয়েল ইন্ডিয়া লিমিটেড অনুসন্ধানকাজ চালাচ্ছে। স্থলভাগের চারটি ব্লকের মধ্যে ৩ টিতে অনুসন্ধান চালাচ্ছে আমেরিকান কোম্পানি শেভরন এবং ১ টিতে সিঙ্গাপুরের কোম্পানি ক্রিস এনার্জি।
জ্বালানী অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, গভীর সমুদ্রে তেল গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য মার্কিন কোম্পানির প্রস্তাব বাংলাদেশের জন্য বড় সুযোগ সামনে এসেছে। বাংলাদেশের জ্বালানি সংকটের মুহূর্তে তেল গ্যাসের এই অনুসন্ধানের জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কোম্পানি এক্সনমোবিল এগিয়ে এসেছে। তারা দু’বছর টু-ডি সিসমিক সার্ভে এবং তিনবছর থ্রি-ডি সিসমিক সার্ভে চালাবে। সরকারের সঙ্গে পিএসসি (উৎপাদন অংশীদারীত্ব চুক্তি) সই হবে। সেখানে নিশ্চিত লেখা থাকবে তেল গ্যাসের খনি পেলে কার ভাগে কতোটুকু থাকবে।
বাংলাদেশ গ্যাসের ওপর ভাসছে, তেলের ওপর ভাসছে এমন নানাকথা গত কয়েকদশক ধরে শুনে আসছি। কিন্তু বাস্তবতা তা নয়। বেশ কয়েকটি বিদেশী কোস্পানী তেল গ্যাস অনুসন্ধান করে লাভজনক না হওয়ায় সরে গেছে। অনেক কোম্পানির পর্যাপ্ত সামর্থ নেই অনুসন্ধানের। অর্থাৎ অর্থ ও প্রযুক্তিগত সামর্থ নেই। সে অবস্থায় মার্কিন জায়ান্ট কোম্পানির প্রযুক্তি সক্ষমতা ও আর্থিক সামর্থ দুটোই রয়েছে। বিশেষ করে গভীর সমুদ্রে অনুসন্ধানের জন্য। ভূতত্ব বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন গভীর সমুদ্রে বিপুল পরিমাণ তেল গ্যাস মজুদ আছে। কিন্তু সেটা অনুসন্ধানের মতো আর্থিক সামর্থ ও প্রযুক্তি নেই আমাদের। আমারিকান কোম্পানি এক্সনমোবিল যদি সফল হয় সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এক নতুন দীগন্তে পৌঁছবে।
বাংলাদেশের গ্যাস রফতানির কোনো সুযোগ নেই কারণ আমরা নিজেরাই গ্যাস সংকটে ভূগছি। আর ৯ বছরের মধ্যে গ্যাসের মজুদ ফুরিয়ে যাবে। এ অবস্থায় নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিস্কার হলে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে বাংলাদেশ। উল্লেখ্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে তেল গ্যাসের অনুসন্ধান ও উৎপাদন কাজে নিয়োজিত মার্কিন এই জায়ান্ট কোম্পানি এক্সনমোবিল।
বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত ও মিয়ানমারের সমুদ্রসীমা নিয়ে যে বিরোধ ছিল আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে তার মীমাংসা হয়েছে। আমাদের বিশাল সমুদ্রসীমায় আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই সমুদ্রসীমায় তেল গ্যাসের খনির অপার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতিমধ্যে মিয়ানমার তার সমুদ্রসীমায় অনুসন্ধান করে গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করে উত্তোলন শুরু করেছে এবং উত্তোলিত গ্যাস চায়নাতে রফতানি করছে। কিন্তু বাংলাদেশ এখনও অনুসন্ধানই শুরু করতে পারে নি। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যতো দ্রুত অনুসন্ধান শুরু করে গ্যাস উত্তোলন শুরু হবে দেশের জন্য ততো লাভ হবে।
শংকর মৈত্র: সিনিয়র সাংবাদিক।