ঢাকা   শুক্রবার, ৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১   রাত ৮:৫৪ 

Home Blog

আপিল খারিজ : শ্রম আদালতে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা চলবে

0

গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ প্রতিষ্ঠানটির চার পরিচালকের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় অভিযোগ গঠন বাতিল চেয়ে করা আবেদন আপিল বিভাগেও খারিজ করে দিয়েছে।
প্রধান বিচারপতি হিাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ আজ (২০ আগস্ট) এ আদেশ দেন।

ফলে শ্রম আদালতে এ মামলার বিচার চলবে বলে জানান আইনজীবীরা।
গত বৃহস্পতিবার আবেদনের ওপর শুনানি শেষে আদেশের জন্য আজ দিন ধার্য ছিল।
আদালতে ড. ইউনূসের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আবদুল্লাহ-আল-মামুন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের পক্ষে ছিলেন এডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ গ্রামীণ টেলিকমের চারজনের নামে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন ঢাকার শ্রম আদালত। শ্রম আদালতের আদেশটি বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন ড. ইউনূস।
গত ২৫ জুলাই চেম্বার কোর্ট স্থগিতাদেশ না দিয়ে ৩ আগস্ট পর্যন্ত মামলাটিতে স্থিতাবস্থা দেয়া হয়। একইসঙ্গে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে আবেদনটি শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ৩ আগস্ট মামলাটির রুল শুনানির জন্য হাইকোর্টে নতুন বেঞ্চ গঠন করে দেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে দুই সপ্তাহের মধ্যে রুল নিষ্পত্তি করতে বলেন আপিল বিভাগ। সে অনুযায়ী শুনানি শেষে ৮ আগস্ট রায় দেয়া হয়। রায়ে গত ১৯ মে শ্রম আদালতের আদেশটি বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে করা আবেদন খারিজ করে দেন। এরপর ড.ইউনূস আপিল বিভাগে আবেদন করেন।

২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামান বাদী হয়ে ড. ইউনূসসহ চারজনের নামে এ মামলা করেন। মামলায় শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে নির্দিষ্ট লভ্যাংশ জমা না দেয়া, শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী না করা ও গণছুটি নগদায়ন না করায় শ্রম আইনের ৪-এর ৭, ৮, ১১৭ ও ২৩৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়।

মামলায় অপর তিন আসামি হলেন গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুরজাহান বেগম ও মো. শাহজাহান। বাসস।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায়: অ্যাটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন

0

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মূলহোতা ও বাস্তবায়নকারী ১৯ জনকে বিচারিক আদালতের দেয়া মৃত্যুদণ্ডের রায়ের ওপর হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স শুনানির জন্যে প্রায় প্রস্তুত।
অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন এ কথা বলেন।
বাসস’কে তিনি আরো বলেন, হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট ডেথ রেফারেন্স বেঞ্চ এখন নিম্ন আদালতের ৩ হাজার পৃষ্ঠার পেপারবুক নিয়ে কাজ করছে যেখানে মামলার বিস্তারিত সবকিছু রয়েছে।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, আমরা আশা করছি ডেথ রোফারেন্স শুনানির জন্যে মামলা প্রস্তুত করতে মাত্র একদিন শুনানির পর বাকি পৃষ্ঠাগুলো পড়া শেষ হবে।
আমিন উদ্দিন বলেন, আমি মনে করি মামলাটি নিষ্পত্তির জন্যে হাইকোর্টের ১০ থেকে ১২টি শুনানি লাগতে পারে।
তিনি আরো বলেন, তার ধারনা চলতি অক্টোবরের মধ্যে হাইকোর্টে শুনানি শেষ হতে পারে।
ঢাকার একটি আদালত ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর এই হত্যা মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ আরো ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে।
তৎকালীন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নুরুদ্দিন আরও ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন এবং তার রায়ে হামলার পটভূমি, উদ্দেশ্য ও পরিণতি সম্পর্কে ১২ দফা পর্যবেক্ষণ ছিল।
বিচারিক আদালতের রায় অনুযায়ী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা হামলার প্রধান লক্ষ্যবস্তু ছিলেন যদিও তিনি অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পান। তবে তিনি শ্রবণশক্তি হারান।
বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সমাবেশে এই হামলায় দলের মহিলা শাখার প্রধান এবং পরবর্তীকালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সহধর্মিনী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত এবং ৫শ’ জন আহত হন।
এই মামলায় মৃত্যুদণ্ডের সাজা থাকায় এবং দোষীরাও রায়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করা হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স ও আপিল একসঙ্গে শুনানি হবে।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘দুই সদস্যের হাইকোর্ট বেঞ্চের সিনিয়র বিচারপতির অসুস্থতার কারণে মামলার শুনানি আংশিকভাবে বিলম্বিত হয়, তবে আশা করা যায় একবার বেঞ্চ পুনরায় শুনানি শুরু করলে এতে বেশি সময় লাগবে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা (অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়) পুরো রায়টি দেখেছি, একে যথার্থ বলে মনে হয়েছে। আমরা আইনের পয়েন্টগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করার পরে নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখার জন্য আবেদন করব।’
অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের মতে, প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী কর্তৃক মনোনীত বিচারপতি শহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে ৫ ডিসেম্বর, ২০২২ তারিখে ডেথ রেফারেন্স এবং দোষীদের আপিলের শুনানির প্রক্রিয়া শুরু হয়।
আমিন উদ্দিন বলেন, ‘এখানে আসলে দুটি মামলা রয়েছে; একটি খুন এবং অন্যটি বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে, দুটিই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ চক্রান্তকারীরা সেই নজিরবিহীন আক্রমণের মাধ্যমে আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছিল।’
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামিরা হলেন- তৎকালীন উপ-মন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, তার ভাই জঙ্গি হুজি নেতা মাওলানা তাজউদ্দিন, গোয়েন্দা কর্মকর্তা সাবেক মেজর জেনারেল রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুর রহিম।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বাকি আসামিরা হলেন জঙ্গি মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, আবদুল মাজেদ ভাট, আবদুল মালেক, শওকত ওসমান, মহিবুল্লাহ, আবু সাঈদ, আবুল কালাম আজাদ, জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ আবু তাহের, হোসেন আহমেদ তামিম, মঈন উদ্দিন শেখ, রফিকুল ইসলাম ও মোহাম্মদ উজ্জল এবং পরিবহন ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হানিফ।
তারেক রহমান ছাড়াও যেসব রাজনৈতিক ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে তারা হলেন-সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরী এবং বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ। জঙ্গি শাহাদাত উল্লাহ ওরফে জুয়েল, আবদুর রউফ, সাব্বির আহমেদ, আরিফ হাসান, হাফেজ ইয়াহিয়া, আবু বকর, আরিফুল ইসলাম, মহিবুল মুত্তাকিন, আনিসুল মুরসালিন, মোহাম্মদ খলিল, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মোহাম্মদ ইকবাল, লিটন, শফিকুর রহমান, আবদুল হাই ও রাতুল আহমেদ বাবুকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়।
আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস বিরোধী শান্তি সমাবেশে হামলাকারীরা ‘আর্জেস’ গ্রেনেড দিয়ে হামলা চালায়।
গ্রেনেড হামলার পরদিন ২২ আগস্ট, ২০০৪ এ হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করা হয়।
ভয়াবহ ওই ঘটনার পর আনীত মামলায় নিরীহ জজ মিয়াকে দিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নিয়ে মূল ঘটনা ও অপরাধীদের আড়ালের অপচেষ্টা চালায় বিএনপি-জামায়াত জোট আমলের প্রভাবশালী মহল।
২০০৭ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় গ্রেনেড হামলার তদন্ত ফের শুরু করলে হামলার নেপথ্যের অনেক তথ্যই দেশবাসীর সামনে বেরিয়ে আসে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের উচ্চপর্যায়ের মদদে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা, সিআইডি ও পুলিশের তখনকার উচ্চ পদস্থ অনেক কর্মকর্তা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ব্যাপারে অবহিত ছিল এবং অনেকেই প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে এতে জড়িতও ছিলেন।
সাক্ষ্য প্রমাণে বের হয় যে, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর বাসভবনে বৈঠক করেই এ হামলার পরিকল্পনা করা হয়। সেখানেই সিদ্ধান্ত হয় গ্রেনেড হামলা চালিয়ে তৎকালীন বিরোধী দলের নেতা শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের হত্যা করার। আবদুল সালাম পিন্টুর ভাই জঙ্গি তাজউদ্দিনের সম্পৃক্ততা এবং আর্জেস গ্রেনেড ঘাতকদের হাতে হস্তান্তর করার তথ্য প্রমাণ বের হয়ে আসে। আসামিদের জবানবন্দীতেই হামলার সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদফতরের ওই সময়ের পরিচালক রেজ্জাকুল হায়দার ও এনএসআইয়ের মহাপরিচালক আবদুর রহিম, জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল ও মন্ত্রী আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ (যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর), জঙ্গীনেতা তাজউদ্দিন, মাওলানা ফরিদ, মুফতি আবদুল হান্নান (অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর), মাওলানা আবদুল সালাম এবং কাশ্মীরী জঙ্গী আবদুল মাজেদ ভাটের নামসহ সংশ্লিষ্ট সব ঘটনা ও জড়িতদের বৃত্তান্ত উঠে আসে।

১১ মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন শুনানি ১৩ সেপ্টেম্বর

0

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতাসহ ১১টি মামলায় অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেছেন আদালত। রোববার (২০ আগস্ট) অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল জানান, ঢাকা মহানগর দায়রা জজ (ভারপ্রাপ্ত) ফয়সাল আতিক বিন কাদের শুনানি মুলতবি করে নতুন এই দিন ধার্য করেন।
বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে আসামিপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুনানি মুলতবি করা হয়। সরকারের নির্বাহী আদেশে কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া খালেদা জিয়া বর্তমানে অসুস্থ হয়ে রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
১১টি মামলার মধ্যে ২০১৫ সালের প্রথম ৩ মাসে অগ্নিসংযোগের অভিযোগে ১০টি এবং মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের নিয়ে দেশদ্রোহী মন্তব্যের অভিযোগে ঢাকার আদালতে একটি মামলা করা হয়। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্যাটকো, নাইকো ও বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতির আরও ৩টি মামলা বর্তমানে ঢাকার ৩টি বিশেষ আদালতে বিচারাধীন। তা ছাড়া, দ্বিতীয় অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতেও আরও ২টি মামলা বিচারাধীন।

তিস্তা চুক্তি নিয়ে ভারত কি নতুন করে আলোচনা চায়?

0

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে তিস্তার জল ভাগাভাগি নিয়ে একটি খসড়া চুক্তির রূপরেখা তৈরি হয়ে আছে প্রায় এক যুগ হতে চলল। যদিও ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, বিশেষ করে পশ্চিববেঙ্গর মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির আপত্তির কারণে তিস্তা চুক্তি আজও সই করা সম্ভব হয়নি।
কিন্তু ভারত এখন সেই চুক্তির বয়ানে পরিবর্তন এনে বা বিকল্প কোনও প্রস্তাব পেশ করে তিস্তা নিয়ে নতুন আলোচনা শুরু করতে চাইছে কি না – সে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। দিল্লিতে একটি সংসদীয় কমিটির রিপোর্টের পর সে প্রশ্ন তৈরি হয়।
গত ২৫শে জুলাই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটি পার্লামেন্টের উভয় কক্ষে তাদের রিপোর্ট পেশ করে বলেছে, তারা সরকারকে আহবান জানাচ্ছে যাতে তিস্তা চুক্তি নিষ্পত্তি করতে বাংলাদেশের সঙ্গে ‘অর্থবহ সংলাপের সূচনা’ করা হয়।
যে কমিটি এই সর্বসম্মত রিপোর্টটি পেশ করেছে তাতে ভারতের প্রায় সব বড় দলের প্রতিনিধিত্ব আছে।
এমনকি পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন যে তৃণমূল কংগ্রেসের বাধায় তিস্তা চুক্তির জট খুলছে না বলে মনে করা হয়, সেই দলের অন্যতম শীর্ষ নেতা অভিষেক ব্যানার্জিও এই কমিটির অন্যতম সদস্য।
বস্তুত তৃণমূলের একাধিক এমপি এই কমিটিতে আছেন, এবং তারা কেউই এই রিপোর্টে কোনও আপত্তি প্রকাশ করেননি বা ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দেননি – যা থেকে ধরে নেয়া যায় এই সুপারিশে তাদেরও সায় আছে।
তিস্তার অমীমাংসিত ইস্যুটি যে ওই কমিটি দ্রুত নিষ্পত্তির ডাক দিয়েছে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকারও।
কিন্তু কমিটি যে একই সঙ্গে তিস্তা নিয়ে ‘নতুন আলোচনার সূচনা’ করতে বলেছে, সেই বিষয়টি তাদের কিছুটা উদ্বেগেও ফেলেছে।
বাংলাদেশের একটি শীর্ষ কূটনৈতিক সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, পুরনো চুক্তির খসড়াটি অবিকৃত রেখেই নতুন করে আলোচনার কথা বলা হচ্ছে, নাকি ভারতের পার্লামেন্টারি কমিটি সম্পূর্ণ নতুন আকারে চুক্তি নিয়ে কথাবার্তা শুরু করার কথা বলতে চাইছে – তারা সে বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন।

এই পটভূমিতে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বিবিসি বাংলাকে জানানো হয়েছে, তাদের দলনেত্রী মমতা ব্যানার্জি তিস্তা চুক্তির বিরুদ্ধে নন – কিন্তু ‘পশ্চিমবঙ্গকে বঞ্চিত করে’ কোনও চুক্তি করার চেষ্টা হলে তৃণমূল সেটা কিছুতেই মেনে নেবে না।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী মাসেই জি-টোয়েন্টি শীর্ষ সম্মেলনে বিশেষ আমন্ত্রিত হিসেবে দিল্লি সফরে আসছেন – ফলে তার ঠিক আগে তিস্তা নিয়ে ভারতে নতুন করে একটা ‘জলঘোলা’ যে চলছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
কী আছে রিপোর্টে?
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পার্লামেন্টারি স্ট্যান্ডিং কমিটির বর্তমান চেয়ারপার্সন হলেন বিজেপি-র এমপি পি পি চৌধুরী। শাসক ও বিরোধী দল মিলিয়ে মোট ৩০জন এমপি এই কমিটিতে আছেন।
দিন পনেরো আগে তারা লোকসভা ও রাজ্যসভায় ভারতের ‘নেইবারহুড ফার্স্ট’ (প্রতিবেশীরা সবার আগে) পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন জমা দেন – যাতে একটা বড় অংশ ব্যয় করা হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে।
ওই রিপোর্টের একটি প্রতিলিপি বিবিসির হাতেও এসেছে – আর তাতে তিস্তা চুক্তি প্রসঙ্গে বলা হয়েছে :
“তিস্তা নদীর জল ভাগাভাগির ইস্যুটি যে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে অমীমাংসিত, কমিটি সে বিষয়ে অবগত। আমাদের অভিপ্রায়, বাংলাদেশের সঙ্গে উন্নততর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের স্বার্থে এই ইস্যুটি যত দ্রুত সম্ভব নিষ্পত্তি করা হোক।”
“বাংলাদেশের সঙ্গে এ ব্যাপারে অর্থবহ সংলাপের সূচনা করতে এবং নিয়মিত আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যে পৌঁছতেও কমিটি মন্ত্রণালয়কে আহবান জানাচ্ছে। সেই আলোচনায় কী অগ্রগতি হল বা কী ফল পাওয়া গেল, সেটাও কমিটিকে জানানো উচিত হবে।”
বস্তুত ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে এই ধরনের সব অমীমাংসিত বিষয় নিয়েই নতুন উদ্যোগ নিতে ও অর্থবহ সংলাপ প্রক্রিয়া শুরু করতে কমিটি প্রস্তাব করছে।
রিপোর্টে অবশ্য পাশাপাশি এটাও বলা হয়েছে, তিস্তা চুক্তি সই করার ব্যাপারে ভারতের অঙ্গীকার সম্পূর্ণ অক্ষুণ্ণ আছে – এ ব্যাপারে শুধু ‘কনসেন্সাস’ বা ঐকমত্য তৈরির অপেক্ষা।
এই বক্তব্যের প্রথম অংশটি নিয়ে বাংলাদেশ যথারীতি খুবই খুশি।
বস্তুত গত ৩রা অগাস্ট ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র সেহেলি সাবরিন ভারতের পার্লামেন্টারি কমিটির ওই রিপোর্টকে খুবই ‘উৎসাহব্যঞ্জক’ ও ‘গুরুত্বপূর্ণ’ বলেও বর্ণনা করেছেন। কিন্তু সমস্যাটা দেখা দিচ্ছে অন্য জায়গায়।
বাংলাদেশেরই একটি শীর্ষ কূটনৈতিক সূত্র বিবিসিকে বলেছেন, “তিস্তা নিয়ে দু’দেশের সমঝোতা কিন্তু অনেক আগে থেকেই হয়ে আছে। শুধুমাত্র ভারতের ভেতরে তাদের নিজস্ব সমস্যার জন্য এটা এখনও সই করা যায়নি।”
“এখন নতুন আলোচনা শুরু করা বা নতুন করে কনসেন্সাস তৈরির কথা বলে তারা আসলে কী বোঝাতে চাইছেন সেটা আমরাও কিন্তু ভাল করে বুঝতে চাইছি”, জানাচ্ছেন তিনি।
বিজেপির অবস্থান
বাংলাদেশের ওই সিনিয়র কর্মকর্তার তোলা এই প্রশ্নটি বিবিসির তরফ থেকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারপার্সন ও রাজস্থানের পালি থেকে নির্বাচিত বিজেপি এমপি পি পি চৌধুরীর কাছে।
মি চৌধুরী প্রথমেই জানান, “যা বলার আমরা তো রিপোর্টেই বলে দিয়েছি। সত্যি কথা বলতে তিস্তা চুক্তি নিয়ে আমার আর বাড়তি কিছু যোগ করার নেই।”

যখন নির্দিষ্ট করে তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয় – কমিটি কি পুরনো খসড়া চুক্তি নিয়েই আলোচনা চাইছে নাকি সম্পূর্ণ নতুন করে নতুন চুক্তি আলোচনা করতে বলছে? তিনি প্রশ্নটি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
একটু ইতস্তত করেই মি চৌধুরী জবাব দেন, “আসলে খুব লম্বা রিপোর্ট ছিল তো, আমার ঠিক অতটা মনে নেই। ভালো করে জিনিসটা আবার না দেখে মন্তব্য করা ঠিক হবে না।”
তবে তিস্তা চুক্তি নিয়ে ভারতের শাসক দল বিজেপির অবস্থান হল, নরেন্দ্র মোদী সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে এই চুক্তি করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ও তার দল তৃণমূলের বাধাতেই তা সম্ভব হচ্ছে না।
তিস্তা যেহেতু পশ্চিমবঙ্গের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েই বাংলাদেশে ঢুকেছে, তাই ভারতের রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে ওই রাজ্যের সম্মতি ছাড়া তিস্তা নিয়ে কোনও আন্তর্জাতিক চুক্তি করা সম্ভব নয়। চুক্তি সম্পাদন না করতে পারার যুক্তি হিসেবে ভারত বরাবরই বাংলাদেশকে এ কথা বলে এসেছে।
মাত্র মাস দুয়েক আগেও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর কলকাতায় এক অনুষ্ঠানে মমতা ব্যানার্জির অবস্থানের প্রতি ইঙ্গিত করেই মন্তব্য করেছিলেন, “কেন তিস্তা চুক্তি করা যাচ্ছে না সেটা আপনারা খুব ভালভাবেই জানেন।”
২০১৯ সালের অগাস্টে বাংলাদেশ সফরে গিয়েও মি জয়শঙ্কর বলেছিলেন, তিস্তা চুক্তি নিয়ে ভারত সরকারের ‘কমিটমেন্ট’ অপরিবর্তিত আছে। অবস্থান এতটুকুও পাল্টায়নি বলেই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য।
তবে এই পটভূমিতে পার্লামেন্টারি কমিটির রিপোর্টে তৃণমূল কংগ্রেসের এমপি-দের সম্মতি বিষয়টিকে একটি ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে নি:সন্দেহে।
কেন্দ্রীয় সরকারের এতদিনের অবস্থানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তৃণমূলও এখন পুরনো খসড়া চুক্তিতেই সায় দিচ্ছে – না কি তারা নতুন আকারে কোনও চুক্তির কথা ভাবছে সেই প্রশ্নটাই তাই এখন সামনে চলে আসছে যথারীতি।
তৃণমূলের বক্তব্য:
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটিতে আছেন তৃণমূল কংগ্রেসের অঘোষিত ‘নাম্বার টু’ অভিষেক ব্যানার্জি, যাকে সকলেই মমতা ব্যানার্জির রাজনৈতিক উত্তরাধিকারী হিসেবে চেনেন।
সেই অভিষেক ব্যানার্জি বিশেষ কিছু না ভেবেচিন্তেই তিস্তা চুক্তি নিয়ে রিপোর্টের বক্তব্যে সায় দিয়ে দিয়েছেন, পর্যবেক্ষকরা কেউই সে কথা বিশ্বাস করছেন না।
বরং ওই চুক্তি নিয়ে ভারতের দিক থেকে নতুন করে ভাবনা-চিন্তা করা হচ্ছে, সেই আভাস পেয়েই হয়তো তৃণমুলের তরফে তিনি রিপোর্টে সম্মতি দিয়েছেন, এমনটাই তারা ধারণা করছেন।
এই মুহুর্তে অভিষেক ব্যানার্জি নিজে বিদেশ সফরে রয়েছেন, এ ব্যাপারে তাঁর বক্তব্যও জানা যায়নি।
তবে কমিটিতে তৃণমূলের দ্বিতীয় যে সদস্য আছেন, সেই শ্রীরামপুরের এমপি কল্যাণ ব্যানার্জি বিবিসি বাংলাকে বলেছেন কমিটিতে যেদিন তিস্তা নিয়ে আলোচনা হয়েছিল তিনি সেদিন উপস্থিত ছিলেন না।
“আমাদের রাজ্যে তখন পঞ্চায়েত নির্বাচন চলছিল, আমি তো প্রায় দু’মাস দিল্লি যেতেই পারিনি। ফলে কমিটির সব মিটিংয়ে হাজির ছিলাম না, তিস্তা নিয়ে কী কথাবার্তা হয়েছে বলতে পারব না”, জানাচ্ছেন তিনি।
কিন্তু ২০১১তে তিস্তা চুক্তি নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের যে অবস্থান ছিল, সেখান থেকে কি আজ দলের অবস্থানে কোনও পরিবর্তন হয়েছে?
রাজ্যে দলের প্রধান মুখপাত্র কুনাল ঘোষ এর জবাবে বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, “প্রথম কথা হল মমতা ব্যানার্জি তিস্তা চুক্তির বিরুদ্ধে, এই ধারণাটা কিন্তু ঠিক নয়। তিনি শুধু পশ্চিমবঙ্গকে বঞ্চিত করে কোনও চুক্তি করার বিরোধী।“
“মমতা ব্যানার্জি বাংলাদেশকে ও সে দেশের মানুষকে খুবই ভালবাসেন প্রধানমন্ত্রী হাসিনার সঙ্গেও তাঁর দারুণ সম্পর্ক … কাজেই তিস্তা চুক্তি সই হলে তিনি তো খুশিই হবেন!”
“কিন্তু শুষ্ক মরশুমে আমাদের রাজ্যে তিস্তা অববাহিকার জেলাগুলো যাতে পর্যাপ্ত জল পায়, সেটা আগে নিশ্চিত করতে হবে। ওই মানুষগুলোকে পথে বসিয়ে তৃণমূল কোনও চুক্তিতে সায় দিতে পারবে না”, সাফ জানাচ্ছেন কুনাল ঘোষ।
অন্যভাবে বললে, যদি এমন কোনও তিস্তা চুক্তির অবতারণা করা যায় যাতে ‘পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থ সুরক্ষিত থাকবে’ – সেটায় তৃণমূলের অনুমোদন থাকবে দলের পক্ষ থেকে এই বার্তাই দেয়া হচ্ছে।
আর ঠিক এ কারণেই ‘নতুন আকারে’ কোনও তিস্তা চুক্তির অবতারণা ভারতের দিক থেকে করা হলেও হতে পারে, এই জল্পনাও ক্রমশ জোরালো হচ্ছে।
কী বিকল্প হতে পারে?
২০১১ সালে যে তিস্তা চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছিল, তাতে নদীর প্রবাহ বজায় রাখার জন্য একটা নির্দিষ্ট অংশ ছেড়ে দিয়ে বাকি জল দুই দেশের মধ্যে সমান ভাগাভাগির কথা বলা হয়েছিল।
যদিও ভারত বা বাংলাদেশ কেউই সেই চুক্তির খসড়াটি প্রকাশ করেনি, তার পরেও দুই দেশের বিশেষজ্ঞরাই পরে বলেছেন এই আধাআধি ভাগের ফর্মুলা নিয়েই তখন ঐকমত্য হয়েছিল।
কিন্তু এখন মমতা ব্যানার্জির দাবি মানতে গেলে সেই পুরনো ফর্মুলা অনুযায়ী চুক্তি করা সম্ভব নয়। বরং এক্ষেত্রে দুটো বিকল্প রাস্তা তৃণমূল সরকারের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে।
এক, শুষ্ক মরশুমে ভারতের হিস্যা কিছুটা বাড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গের তিস্তা অববাহিকার জেলাগুলোকে বাড়তি সেচের জল পাইয়ে দেয়া।
সেক্ষেত্রে তৃণমূল নেত্রী বলতে পারবেন দেশের স্বার্থে চুক্তিতে রাজি হলেও পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থের সঙ্গে তিনি কোনও আপষ করেননি।
কিন্তু এই প্রস্তাব বাংলাদেশের পক্ষে মেনে নেয়া প্রায় অসম্ভব। ভারত যদি অর্ধেকের চেয়ে বেশি জল পায় এবং বাংলাদেশের হিস্যা ৫০ শতাংশর নিচে নেমে যায়, সেটা রাজনৈতিকভাবে শেখ হাসিনার জন্যও ‘রাজনৈতিক পরাজয়ের’ সামিল হবে।
দিল্লিতে বাংলাদেশের সাবেক হাই কমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী প্রায়শই বলতেন, “তিস্তায় পানি কমেছে বুঝলাম, কিন্তু যেটুকু আছে তা আধাআধি ভাগে সমস্যা কোথায়?”
তাঁর যুক্তি ছিল, পানি যদি ষোলো আনার বদলে আট আনা থাকে তাহলে চার আনা চার আনা ভাগ হবে, আর ছয় আনা থাকলে দুই দেশই তিন আনা করে পাবে।
বাংলাদেশ সেই অবস্থানে অনড় থাকলে প্রথম বিকল্পটি কোনও কাজে আসবে না বলাই বাহুল্য।
দ্বিতীয় বিকল্পটি বাতলেছিলেন মমতা ব্যানার্জি নিজেই – যখন সোয়া ছ’বছর আগে ২০১৭র এপ্রিলে শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় দিল্লিতে তাঁদের দুজনের দেখা হয়েছিল।
মমতা ব্যানার্জি তখন বলেছিলেন, তিস্তার জল না-দিতে পারলেও উত্তরবঙ্গে তোর্সা-দুধকুমার-সঙ্কোশ-ধরলার মতো আরও যে সব নদীতে উদ্বৃত্ত জল আছে তা খাল কেটে বাংলাদেশের তিস্তা অববাহিকায় পাঠানো যেতে পারে।
এই প্রক্রিয়াটি অবশ্যই সময় সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল – তবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কিন্তু তাদের এই বিকল্প প্রস্তাব থেকে এখনও সরে আসেনি।
বাংলাদেশ অবশ্য এই প্রস্তাব নিয়ে কখনোই বিশেষ আগ্রহ দেখায়নি, আবার সরাসরি নাকচও করে দেয়নি।
পুরনো তিস্তা চুক্তির খসড়া নিয়েই নতুন করে চুক্তি সম্পাদনের আলোচনা আবার শুরু হলে কোনও সমস্যা নেই – কিন্তু সংসদীয় কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ভারত যদি সম্পূর্ণ নতুন করে তিস্তা নিয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা শুরু করতে চায় তাহলে অবধারিতভাবে ঢাকা-দিল্লির মধ্যে জটিল একটি কূটনৈতিক অধ্যায়ের সূচনা হবে।
সৌজন্যে: শুভজ্যোতি ঘোষ, বিবিসি নিউজ বাংলা, দিল্লি।

জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে দায়িত্ব পালন করেছে পুলিশ: আইজিপি

0

দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে সাহসিকতার সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালনের জন্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত অতিরিক্ত আইজিপিদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ।
বুধবার (৯ আগস্ট) পুলিশ সদর দফতরের হল অব প্রাইড-এ ডিআইজি থেকে অতিরিক্ত আইজিপি পদে পদোন্নতি পাওয়া তিন পুলিশ কর্মকর্তার র‍্যাংক ব্যাজ পরিধান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ আহবান জানান।
পদোন্নতিপ্রাপ্ত অতিরিক্ত আইজিপিরা হলেন–সেলিম মো. জাহাংগীর, দেবদাস ভট্টাচার্য ও হাবিবুর রহমান।
অনুষ্ঠানে আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন এবং অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) মো. কামরুল আহসান পদোন্নতিপ্রাপ্তদের র‍্যাংক ব্যাজ পরিয়ে দেন। এ সময় পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের স্ত্রীরাও উপস্থিত ছিলেন।
পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের অভিনন্দন জানিয়ে আইজিপি বলেন, আপনারা দক্ষতা, যোগ্যতা ও মেধার স্বাক্ষর রেখে আজ এ পর্যায়ে এসেছেন। আমি আশা করি, আগামী দিনেও আপনারা সেবার ব্রত নিয়ে মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে যেকোনও চ্যালেঞ্জ সফলতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে সক্ষম হবেন।
বঙ্গবন্ধুর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে আইজিপি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল পুলিশ। তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করেছে পুলিশ। জঙ্গি দমনে পুলিশের ঈর্ষণীয় সাফল্য রয়েছে।
পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের পক্ষে অতিরিক্ত আইজিপি সেলিম মো. জাহাংগীর তার অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, এ দেশের সাধারণ মানুষের প্রতি আমাদের যে অঙ্গীকার রয়েছে আমরা তা পূরণ করতে চাই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে আমরা জনগণকে সর্বোত্তম সেবা দেয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করছি।
অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) মো. কামরুল আহসান এবং হাইওয়ে রেঞ্জের অতিরিক্ত আইজিপি মো. শাহাবুদ্দিন খাঁন বক্তব্য রাখেন।
আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত আইজিপিরা, ঢাকাস্থ বিভিন্ন পুলিশ ইউনিটের প্রধানরাসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা।

নভেম্বরে তফসিল, ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে নির্বাচন

0

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল নভেম্বরের যেকোনো দিন ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান। ভোট হতে পারে ডিসেম্বর বা জানুয়ারীর শুরুতে।
আজ বুধবার (৯ আগস্ট) দুপুরে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য জানান।
আনিছুর রহমান বলেন, ‘আমরা নির্বাচনব্যবস্থা সহজ করার জন্য একটি অ্যাপস তৈরি করছি। এটি সংসদ নির্বাচনের আগেই চালু করতে চাই। আশা করি এটি আগামী নভেম্বরে চালু করা হবে।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আনিছুর রহমান বলেন, ‘আমরা সাধারণত ৪০ থেকে ৪৫ দিন সময় হাতে রেখে তফসিল ঘোষণা করে থাকি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ বা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে। এই সময় ধরে যথাসময়ে তফসিল ঘোষণা করা হবে।’
আইন সংশোধনের জন্য পর্যাপ্ত সময় না থাকার কারণে আগামী সংসদ নির্বাচনে অনলাইন ও অফলাইন দুইভাবেই মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সুযোগ থাকবে বলেও জানান তিনি।
আনিছুর রহমান জানান, দুর্গম ও দ্বীপাঞ্চল ছাড়া যেসব জায়গায় যোগাযোগব্যবস্থা ভালো সেখানে ভোটের দিন সকালে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পাঠানো হবে।
সংলাপের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে আর ডাকা হবে কি না, জানতে চাইলে আনিছুর রহমান বলেন, ‘না, আমরা আর ডাকব না। আমরা ডেকেছিলাম, তারা সাড়া দেয়নি। রাজনৈতিক বিষয়গুলো রাজনীতিবিদদের হাতেই থাকুক।’

বাংলাদেশ ভারত বন্ধুত্ব রক্তের বাঁধনে বাঁধা


৭১’এ মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত আমাদের এককোটি মানুষকে আশ্রয় দিয়েছে। থাকা খাওয়া চিকিৎসা যতটুকু সম্ভব সব দিয়েছে।
আমাদেরকে ট্রেনিং দেয়ার ব্যবস্থা করেছে। অস্ত্র গোলাবারুদ দিয়ে সাহায্য করেছে।
ডিসেম্বর’৭১ এ আমাদের সাথে জোট বেঁধে যুদ্ধ করেছে। সেই যুদ্ধে তাঁদের পাঁচ হাজারের অধিক সেনা নিহত হয়েছে। প্রায় সতের হাজার সেনা আহত হয়েছে।
পাকিস্তানিরা পরাজয় নিশ্চিত জেনে আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা যথা রাস্তাঘাট, ব্রিজ, রেল, পোর্ট সব ধংস করে দেয়। ভারত দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই যোগাযোগ ব্যবস্থা চলাচলের উপযোগী করে দেয়।।
স্বাধীনতার দু-মাসের মধ্যে ভারত তাদের সমস্ত সেনাবাহিনী ফিরিয়ে নিয়ে যায় যা ইতিহাসে বিরল।
গত কয়েক বছরে ভারতের সাথে আমাদের সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হয়েছে। সাত দশকের ঝুলে থাকা ছিট মহল ও সীমান্তরেখা সমস্যার সমাধান হয়েছে। আমাদের মহান নেত্রী শেখ হাসিনার ম্যাজিকেল নেতৃত্বের কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে। তিনি ভারতে সরকারি দল, বিরোধী দল সবাইকে একমত করিয়ে এই কঠিন সমস্যার সমাধান করেছেন। কারণ এখানে ভারতের সংবিধান সংশোধনীর বিষয় ছিলো। দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন ছাড়া এই সংশোধনি সম্ভব ছিলো না।এই প্রশ্নে সবাইকে এক করেছিলেন।
শেখ হাসিনার দৃঢ়তার কারনে বর্তমানে সীমান্তে শান্তি ফিরে এসেছে। বর্ডার কিলিং একেবারে বন্ধ না হলেও অনেক অনেক কমে গেছে। এক সময় শূণ্যের কোটায় নেমে আসবে।
দুদেশের বাণিজ্যও বৃদ্ধি পেয়েছে। ইতিপূর্বে ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি ছিলো খুবই সামান্য। সম্প্রতি তা দুই বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। ভারত বিশাল দেশ তাই তাদের রপ্তানি বেশি হবে এটাই স্বাভাবিক। শেখ হাসিনা সরকারের সফলতায় ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে আইন কানুনের প্রতিবন্ধতাগুলো শিথিল হচ্ছে, আমাদের রপ্তানি ও বাড়ছে। তবে ধৈর্য ধরলে রপ্তানি অবশ্যই অনেক বাড়বে।
ভারতের সহায়তায় আমাদের রেল অনেক অনেক এগিয়েছে। সামনে আরো এগুবে।
আমাদের শিল্পের কাঁচামাল, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য ভারত থেকে সহজে পাওয়া যায়। সময় ও খরচ তুলনামূলক কম দামে।
এছাড়া বিপুল সংখ্যক মানুষ ভারতে চিকিৎসা ও ভ্রমনে যায়। নিকট বৃহৎ প্রতিবেশীর সাথে কিছু সমস্যা থাকবেই যেমন তিস্তার পানি। কেন্দ্রীয় সরকার চাইলেও পশ্চিম বাংলা সরকারের “ভোট রাজনীতি”র কারণে এই চুক্তিটি সম্পাদন সম্ভব হয়নি। আরো চুয়ান্নটি নদীর পানি নিয়েও সমস্যা আছে। ধীরে ধীরে সমাধান হবেই।
কিছু অন্ধ ভারত বিরোধীতার কারণে এক সময় আমাদের সম্পর্কে চিড় ধরেছিলো। সেটা এখন কেটে গেছে। পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এগুলে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া হবে শান্তি ও সমৃদ্ধির অঞ্চল।
লেখক: রাজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা।

পীযূষ গয়ালের সঙ্গে আওয়ামী লীগ প্রতিনিধি দলের বৈঠক, এ অঞ্চলে শান্তি অগ্রগতির ওপর গুরুত্বারোপ

0

ভারত সফররত আওয়ামী লীগ প্রতিনিধি দল মঙ্গলবার(৮ আগস্ট) ভারতীয় পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার নেতা (লিডার অব দ্যা আপার হাউস) পীযূষ গয়ালের সঙ্গে তাঁর পার্লামেন্ট কার্যালয়ে বৈঠক করেন।
বৈঠকে তারা দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও উন্নয়নমূলক বিষয়ে আলোচনা করেন বলে বৈঠক সূত্র জানায়।
বৈঠকে গয়াল এ অঞ্চলের অব্যাহত শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির স্বার্থে বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেন এবং আশা প্রকাশ করেন যে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার মাধ্যমে বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাবে।
ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন বিজেপি’র রাজ্যসভার প্রভাবশালী এ নেতা বাংলাদেশে বর্তমান সরকারের আমলে আর্থ-সামাজিক খাতে বাংলাদেশের ব্যাপক অগ্রগতির প্রশংসা করেন।
খাদ্যশস্য রপ্তানির ওপর ভারতের নিষেধাজ্ঞার কথা উল্লেখ করে গয়াল প্রতিনিধি দলকে বলেন, খাদ্যশস্য রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞার কারণে বাংলাদেশ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় ভারত সক্রিয়ভাবে তা বিবেচনা করবে।
দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবধান কমাতে ভারত যাতে বাংলাদেশ থেকে আরও পণ্য আমদানি করতে পারে- সেজন্য তিনি প্রতিনিধি দলের সদস্যদের আরও পণ্যের নাম প্রস্তাব করার অনুরোধ জানান। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পচনশীল পণ্য রপ্তানির নিষেধাজ্ঞার বিষয়েও আলোচনা হয়।
ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রতিনিধিদলকে বলেন, বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী ও বন্ধু হিসেবে ভারত সবসময় বাংলাদেশের সব বিষয়ে বিশেষভাবে বিবেচনা করে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে বৈঠকে প্রতিনিধি দলের সদস্যদের মধ্যে ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, এমপি, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, অ্যারোমা দত্ত এমপি ও অধ্যাপক মেরিনা জাহান এমপি উপস্থিত ছিলেন।
ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) “বিজেপিকে জানুন” কর্মসূচির অংশ হিসেবে দলটির আমন্ত্রণে আওয়ামী লীগের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল নয়াদিল্লি সফর করছেন।
বৈঠক শেষে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে’ অনুষ্ঠিত আলোচনায় ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত বিষয় ছাড়াও বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইস্যু উঠে এসেছে।
বিকেলে দিল্লিতে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার সর্বোচ্চ ফোরাম জি-২০ এর ভারত সম্মেলনের আহবায়ক সাবেক রাষ্ট্রদূত হর্ষবর্ধন শ্রিংলার সাথে বৈঠক করেন তারা।
এর আগে, বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল ইন্ডিয়া গেট সার্কেলে জাতীয় যুদ্ধ স্মৃতিসৌধ পরিদর্শন করেন। স্মৃতিসৌধটি স্বাধীন ভারতের সশস্ত্র সংগ্রামে লড়াই করা ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সৈনিকদের সম্মান ও স্মরণ করিয়ে দেয়।

৬১ জেলায় শুরু হচ্ছে অনলাইন ভূমি নিবন্ধন কার্যক্রম,কমবে জাল জালিয়াতি

0

পার্বত্য তিন জেলা বাদে দেশের ৬১ জেলায় অনলাইনে ভূমি নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে সরকার। নিবন্ধন অধিদপ্তরের অধীন ৪৮৮টি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে কাগজের ভলিউমে দলিল রেজিস্ট্রির পরিবর্তে অনলাইনে দলিল রেজিস্ট্রি ও রেকর্ড সংরক্ষণের কার্যক্রম শুরু হবে।
ইতিমধ্যে এ-সংক্রান্ত প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভায় (একনেক) পাঠানো হয়েছে। এজন্য ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে আইন মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন খাতে রাখা হয়েছে বিশেষ বরাদ্দ।
আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০২০-২১ অর্থবছরে ‘ভূমি নিবন্ধন ব্যবস্থাপনা ডিজিটাইজেশনে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রকল্প’ শীর্ষক একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ কোটি ৬০ লাখ ৩২ হাজার টাকা।
পরে এর আওতায় ২০২১ সালে দেশের ১৭টি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে পরীক্ষামূলকভাবে অনলাইনে ভূমি নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়। পাইলট প্রকল্পের অগ্রগতি সন্তোষজনক হওয়ায় এবার ৪৮৮টি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে অনলাইনে ভূমি নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করার যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২১ সালের ১০ জুন থেকে ২০২৩ সালের ১৩ জুন পর্যন্ত পাইলট প্রকল্পের আওতায় ১৭টি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের ৭৮ হাজার ১৯৫টি দলিল ই-রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতিতে নিবন্ধিত হয়েছে। বর্তমানে ঢাকার উত্তরা, খিলগাঁও, গুলশান ও সাভার, চট্টগ্রামের আনোয়ারা ও পাহাড়তলী, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা, কুষ্টিয়ার কুমারখালী, টাঙ্গাইলের বাসাইল ও নাগরপুর, রাজশাহীর চারঘাট, সিলেটের তাজপুর, দিনাজপুরের চিরিরবন্দর, ময়মনসিংহের নান্দাইল এবং বরিশালের হিজলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে অনলাইনে ভূমি নিবন্ধন কার্যক্রম কার্যকর রয়েছে। দেশে বর্তমানে ৪৯৫টি উপজেলায় ৫০৫টি সাব-রেজিস্ট্রি অফিস রয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, অনলাইনে ভূমি নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হলে সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়ে শৃঙ্খলা আসবে ও জাল-জালিয়াতি প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। এতে রেজিস্ট্রি সেবা নিতে মানুষের হয়রানি, সময় ও অর্থ ব্যয় এবং আদালতে জমিসংক্রান্ত মামলা-মোকদ্দমা কমে যাবে।
পাইলট প্রকল্পের আওতায় গৃহীত ১৭টি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের অগ্রগতি সন্তোষজনক মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, অনলাইনে ভূমি নিবন্ধনের ফলে ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন ও জাল খতিয়ানের মাধ্যমে দলিল নিবন্ধন বন্ধ হবে। জটিলতা ছাড়াই নির্ভুলভাবে দলিলদাতা এবং গ্রহীতার রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হচ্ছে। রাজস্ব আদায়ও গতিশীল হয়েছে।
তিনি জানান, সারাদেশের রেকর্ডরুমে রক্ষিত বালাম বইগুলো আর্কাইভে সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এটি হলে সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়ে শৃঙ্খলা আসবে এবং জাল-জালিয়াতি প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রগতি প্রসঙ্গে আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে অনলাইনে ভূমি নিবন্ধন-সংক্রান্ত একটি প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। তাতে পাইলট প্রকল্পের অগ্রগতিসহ সার্বিক বিষয়ে সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হয়েছে।
সচিব বলেন, আশা করছি, এটি শিগগিরই একনেকে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। তিনি জানান, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসকে নিজ নিজ প্রশাসনিক এখতিয়ারের মধ্যে রেখে এরই মধ্যে আন্তঃসংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে অনলাইনে ভূমি নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন হবে।
বাংলাদেশ রেজিস্ট্রেশন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ও ঢাকার খিলগাঁওয়ের সাব-রেজিস্ট্রার এস এম শফিউল বারী বলেন, সারাদেশে ই-রেজিস্ট্রেশন চালু হলে একজনের জমি প্রতারণার মাধ্যমে একাধিকবার বিক্রি বন্ধ হবে। ভূমি অফিসের সার্ভারের সঙ্গে সংযোগ থাকায় সরকারি জমির তালিকা সার্ভারে থাকবে। এর ফলে কোনো প্রতারক সরকারি জমি বিক্রি করে দেয়ার সুযোগ পাবে না। ম্যানুয়ালি দলিল হলে বালাম তিন বছর পর পেত। কিন্তু ই-রেজিস্ট্রেশন হওয়ায় খিলগাঁওয়ে এখন দলিল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি সার্ভারে চলে যাচ্ছে।
নিবন্ধন অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে সারাদেশে ৩৫ লাখ ৯৮ হাজার ১৯৭টি দলিল রেজিস্ট্রি হয়েছে এবং মোট রাজস্ব আয় হয়েছে ১১ হাজার ৬০১ কোটি ৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ আয় হয়েছে ৮ হাজার ১১১ কোটি ১৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা ও স্থানীয় সরকার কর বাবদ আয় হয়েছে ৩ হাজার ৪৮৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকা।
এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে সারাদেশে ৩৪ লাখ ৭৪ হাজার ৬৯৬টি দলিল রেজিস্ট্রি হয়েছে এবং এ খাত থেকে মোট রাজস্ব আয় হয়েছে ১২ হাজার ২৯২ কোটি ৮৬ লাখ ২৯ হাজার টাকা। এর মধ্যে রেজিস্ট্রেশন বাবদ আয় ৯ হাজার ৩৩৯ কোটি ৪১ লাখ ৪০ হাজার টাকা এবং স্থানীয় সরকার কর বাবদ আয় ২ হাজার ৯৫৩ কোটি ৪৪ লাখ ৮৯ হাজার টাকা।

ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা: পুলিশের এএসআইসহ ৩ জনের বিচার শুরু

0

১০০ পিস ইয়াবা রাখার অভিযোগে করা মামলায় পুলিশের সাময়িক বরখাস্ত সহকারী উপ-পরিদর্শকসহ (এএসআই) ৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত।
আসামিরা হলেন—পল্লবী থানার সাময়িক বরখাস্ত এএসআই মাহবুব আলম এবং তার তথ্যদাতা মোহাম্মদ রুবেল ও সোহেল রানা।
মঙ্গলবার(৭ আগস্ট) ঢাকা মহানগর হাকিম তাহমিনা হক আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র পাঠ করেন।
এরপর বর্তমানে জামিনে থাকা এই ৩ জন নিজেদের নির্দোষ উল্লেখ করে ন্যায়বিচার দাবি করেন।
এর আগে ম্যাজিস্ট্রেট মামলার তদন্ত থেকে অব্যাহতি চেয়ে তাদের করা আবেদন খারিজ করে দেন।
আগামী ২৬ ডিসেম্বর মামলার শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ক্যান্টনমেন্ট থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আনোয়ার হোসেন গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। এতে বলা হয়, এই ৩ আসামি অবৈধভাবে ইয়াবা বহন করতেন।
অভিযোগপত্রে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, গত বছরের সেপ্টেম্বরে ব্যবসায়ী মোহাম্মদ খলিলকে গ্রেপ্তার করা এএসআই মাহবুব আলম অবৈধভাবে ১০০ পিস ইয়াবা বহন করছিলেন। তার দুই তথ্যদাতা রুবেল ও রানা তাকে এ অপরাধে সহায়তা করেছেন।
তদন্ত কর্মকর্তা জানান, এএসআই মাহবুব এসআই কামরুল ইসলামকে মিথ্যা তথ্য দেন ও বানোয়াট জব্দ তালিকা তৈরি করেন, যার ভিত্তিতে এসআই কামরুল খলিলের বিরুদ্ধে ১০০ পিস ইয়াবা রাখার অভিযোগে মামলা করেন।
একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের ফুটেজে দেখা যায়, ক্যান্টনমেন্ট রেলস্টেশনের কাছে সাদা পোশাকে এএসআই মাহবুব খলিলকে থামিয়ে তাকে তল্লাশি করছেন। সে সময় মাহবুব রুবেলের কাছ থেকে এক প্যাকেট ইয়াবা নিয়ে খলিলের পকেটে ঢুকিয়ে দেন। এরপর তিনি খলিলকে ইয়াবাসহ ধরেছেন বলে দাবি করেন।
খলিলকে ৭ সেপ্টেম্বর কারাগারে পাঠানো হয় এবং পরে তদন্তে নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। সূত্র-ডেইলি স্টার।