ঢাকা   মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১   বিকাল ৪:৪৯ 

সর্বশেষ সংবাদ

বিড়ি খাওয়ার পক্ষে ৫০ সংসদ সদস্যঃ দাম বাড়াতে চায় এনবিআর

ধুমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তামাক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ধুমপান ও তামাক নিরোধের জন্য সরকার আইন করেছে। সংসদের মাধ্যমে এ আইন পাস হয়েছে। অথচ এই সংসদেরই অন্তত ৫০ জন সদস্য ধুমপান তথা তামাকের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তাও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বিড়ির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন তারা। তামাকবিরোধী সংগঠনগুলো যেখানে জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে বিড়ি সিগারেটে শুল্ক বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছে তখন এই সংসদ সদস্যরা বিড়ি শিল্পের মালিকদের পক্ষ নিয়ে বিড়ির ওপর শুল্ক ও কর কমানোর দাবি জানিয়েছেন যা নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠেছে।
শুল্ক কমানোর দাবিতে তারা প্রধানমন্ত্রী এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে পৃথক পৃথকভাবে ডিও লেটার পর্যন্ত দিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে করোনা পরিস্থিতির কারণে বিড়ি শিল্প ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে এমন দাবি করে গত ১৮ মে ৫০ জন সংসদ সদস্য প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে ডিও লেটার দেন। এতে বলা হয়, করোনার কারণে বিড়ি উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। কয়েকলাখ শ্রমিক বেকার। শ্রমিকদের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে হচ্ছে বিড়ি শিল্প মালিকদের। এ অবস্থায় আসন্ন বাজেটে বিড়ির ওপর থেকে কর কমানোর অনুরোধ জানানো হয়।
যেসব সাংসদ ডিও লেটার দিয়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আহসান আদিলুর রহমান, আবু হোসেন বাবলা।
এদিকে ৫০ জন সংসদ সদস্য বিড়ির ওপর শুল্ক কমানোর জন্য ডিও লেটার দেয়ার ঘটনায় বিষ্ময় প্রকাশ করেছে তামাকবিরোধী সংগঠনগুলো। তারা বলছে, এটা শুধু অনৈতিকই নয়, সংবিধানেরও লঙ্ঘন।

শুল্ক বাড়াতে চায় রাজস্ব বোর্ডঃ
৫০ জন সাংসদ বিড়ির ওপর শুল্ক কমানোর দাবি জানালেও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চায় শুল্ক বাড়াতে।
* বিড়ি শিল্প নিয়ে এক গবেষণায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বেশ কিছু সুপারিশ করছে। গবেষণা প্রতিবেদনে বিড়ির কার্যকর মূল্য বৃদ্ধির জন্য সম্পূরক শুল্কের পাশাপাশি সুনির্দিষ্ট কর (specific excise tax) আরোপ করার সুপারিশ করা হয়েছে।  বিড়ির কর ও মূল্য কার্যকরভাবে বৃদ্ধি করা হলে, কয়েক লাখ ধূমপায়ীর অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে এবং বিড়ি থেকে রাজস্ব আয় বেড়ে যাবে দ্বিগুণেরও বেশি।  গবেষণায় বলা হয়েছে, বিড়ি খাত থেকে প্রাপ্ত বাড়তি রাজস্ব দিয়ে শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হলে খুব সহজেই এই ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নিয়োজিত ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের পুনর্বাসন করা সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে বিড়ি শ্রমিকদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য সরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন অর্থনৈতিক কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। সরকারিভাবে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়া হলে  ৭৮.৪ শতাংশ বিড়ি শ্রমিক এই ক্ষতিকর পেশা ছেড়ে দিতে চায় বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।
* গবেষণা প্রতিবেদনে বিড়ির করকাঠামো পরিবর্তনসহ কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে:

১.বিড়ির সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি করা এবং এখান থেকে অর্জিত বাড়তি রাজস্ব দিয়ে বিড়ি শ্রমিকদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য বিশেষ তহবিল গঠন করা।

২.বিড়ির ওপর আরোপিত সম্পূরক শুল্ক/এক্সাইজ ট্যাক্স এর একটি অংশ সুনির্দিষ্ট কর আকারে আরোপ করা।

৩.শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সাথে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল এবং এনবিআরের যৌথ সমন্বয়ের মাধ্যমে যেসব জেলায় বিড়ি কারখানা রয়েছে সেখানে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বিকল্প কর্মসংস্থান অনুসন্ধান করা।

৪. বিড়ি শ্রমিকদের ক্ষতিকর পেশা থেকে সরিয়ে নিতে এনজিও, বিড়ি শ্রমিকদের সংগঠন এবং সিভিল সোসাইটি সংগঠনকে নিয়ে সম্মিলিতভাবে কাজ করা।

৫.নারী, শিশু, বয়স্ক এবং শারীরিকভাবে অক্ষম বিড়ি শ্রমিকদের জন্য স্থানীয় পর্যায়ে উপযুক্ত শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা।
বিড়ি শ্রমিকদের সংখ্যা নিয়ে মিথ্যাচারঃ
এনবিআরের গবেষণা বলছে দেশে বিড়ি শ্রমিকের সংখ্যা ৪৬ হাজার আর কারখানা মালিকদের দাবি ২০ লাখ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, নীতিনির্ধারকদের প্রভাবিত করতে প্রতিবছর বাজেট ঘোষণার আগে বিড়ি মালিক এবং কিছু সুবিধাভোগী বিড়িশ্রমিক নেতা শ্রমিকদের প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে মিথ্যাচার করেন। তারা দাবি তোলেন বিড়ির কর বাড়ানো হলে দেশের বিড়ি কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাবে এবং ২০ থেকে ৩০ লাখ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বে। বিড়ি শ্রমিকদের সংখ্যা নিয়ে যে কাল্পনিক তথ্য তারা বছরের পর বছর দিয়ে থাকেন, তা মিথ্যা এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্তৃক ২০১৯ সালে প্রকাশিত ‘দি রেভিনিউ অ্যান্ড এমপ্লয়মেন্ট আউটকাম অব বিড়ি ট্যাক্সেশন ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বাংলাদেশে বিড়ি শিল্পে  কর্মরত নিয়মিত, অনিয়মিত এবং চুক্তিভিক্তিক মিলিয়ে পূর্ণসময় কাজ করার সমতুল্য শ্রমিক সংখ্যা মাত্র ৪৬ হাজার ৯১৬ জন। বিড়ি শিল্পের কাজ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং মজুরিও খুব কম, মাসে গড় আয় মাত্র ১,৯৭২ টাকা। একজনের আয়ে সংসার চালানো প্রায় অসম্ভব। তাই অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পরিবারের শিশু, নারীসহ সকলকেই বিড়ি তৈরির ঝুঁকিপূর্ণ কাজে সম্পৃক্ত হতে হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন বিড়ি সিগারেট ও তামাকজাত দ্রব্যে বাড়তি কর আরোপ করলে এবং মূল্য বৃদ্ধি করলে মানুষ ধুমপানে নিরুৎসাহিত হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সবচেয়ে আলোচিত