সমুদ্র সৈকতের পাশে কক্সবাজারের দরিয়া নগরে ৭০০ একরের বেশি সংরক্ষিত বনভূমি উজার করে সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ একাডেমি নির্মাণের উদ্যোগ বাতিলের সুপারিশ করেছে সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটি।
রোববার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত পরিবেশ,বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়।
সংসদীয় কমিটি বলেছে, কক্সবাজারের সরক্ষিত বিপুল বনভূমি কীভাবে প্রশিক্ষণ একাডেমি নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হলো তা খতিয়ে দেখা হবে।
বন অধিদপ্তরও বলছে, বনভূমির মধ্যে প্রস্তাবিত প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে পরিবেশ ও প্রতিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সংসদীয় কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, “আমরা যেখানে বেদখলে থাকা বনভূমি উদ্ধার করছি, সেখানে সরকারের আরেকটি সংস্থা জমি যদি নিয়ে নেয়, এটা তো ঠিক নয়।”
তিনি আরও বলেন, “জনপ্রশাসনের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধিকে আমরা সমর্থন করি। তবে ওই জায়গায় এটা হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ আমাদের বিধি-নিয়ম এমনকি এটা সংবিধান পরিপন্থি। এটা অন্য জায়গায় হোক।”
সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য প্রশিক্ষণ একাডেমি নির্মাণ করতে সংরক্ষিত কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন ঝিলংজা বনভূমির ৭০০ একর জায়গা বরাদ্দ দেওয়ার খবর বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশ হয়। এলাকাটি প্রতিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন।
২০১৮ সালে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন বঙ্গবন্ধু একাডেমি অব পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন নির্মাণের জন্য পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে অনাপত্তিপত্র চায়; সংস্থাটি ওই বছরই বিভিন্ন শর্তে অনাপত্তিপত্র দেয়।
ওই এলাকাকে ১৯৩৫ সালে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এরপর ১৯৮০ সালে এটাকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করা হয়। সর্বশেষ ১৯৯৯ সালে প্রতিবেশগত সঙ্কটাপন্ন এলাকা ঘোষণা হয়। ২০০১ সালে দেশের বনভূমির যে তালিকা করা হয়, তাতেও ঝিলংজা মৌজা বনভূমি হিসেবে আছে।
সংসদীয় কমিটিতে মন্ত্রণালয়ের দেওয়া এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ওই জমিতে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলায় উপকূলীয় এলাকায় বনায়ন প্রকল্পের আওতায় সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে ১০০ একর সৃজিত বাগান রয়েছে; ২০-২০০ ফুট পর্যন্ত বিভিন্ন উচ্চতার পাহাড় রয়েছে। প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো, গর্জন, চাপালিশ, তেলসুরসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রয়েছে। ওই এলাকা হাতি, বানর, বন্য শুকর, বিভিন্ন প্রজাতির সাপ ও পাখির আবাসস্থল।
মন্ত্রণালয় বলেছে, ওই এলাকায় প্রস্তাবিত প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হলে পরিবেশ ও প্রতিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, প্রতিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন এ বনভূমিতে কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা নিষেধ। তারপরও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এই জমি বরাদ্দ নিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে।
সংসদীয় কমিটির বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, “আমরা বোঝার চেষ্টা করছি এটা কীভাবে হলো। যদি কেবল জমির দাগ ও খতিয়ান দেয়া হয় এবং ভূমির আকার ও প্রকৃত বর্ণনা না করেন, সেটা হতে পারে কী না। আমরা মনে করি সেটাই হয়েছে। এটা আমরা দেখবো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে যে অনুমতি এসেছে, সেই দপ্তরও হয়তো এই বিষয়টি পুরোপুরি জানে না।”
তিনি বলেন, “এই জমির বিষয় আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। সংরক্ষিত বন হিসেবে এই জমির মালিক জেলা প্রশাসন। আর এ জমি কোনো অবস্থাতেই বন্দোবস্তযোগ্য নয় বলে রিমার্ক থাকে। অর্থাৎ এই জমি কোনো অবস্থাতেই বন্দোবস্ত দেয়া যাবে না। কাজেই এই জমি বন্দোবস্ত দেয়ার সুযোগ নেই।”
ওই প্রকল্প চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়ার জন্য পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি এসেছে জানিয়ে সভাপতি বলেন, “আমরা সেই চূড়ান্ত অনুমতি না দিতে বলেছি। পাশাপাশি সঠিক তথ্য তুলে ধরতে বলেছি। আমরা চাই বিষয়টি যেন পুনর্বিবেচনা করা হয়।”
বিষয়টি নিয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয় ভূমি মন্ত্রণালয়কে চিঠি পাঠাবে বলে তিনি জানান।
বনভূমির ওই জমি বরাদ্দ দেয়া ‘বিধিসম্মত’ হয়নি উল্লেখ করে সাবের হোসেন বলেন, “যেহেতু বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এখন তারা প্রকল্প চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তিপত্র চেয়েছে। আমরা এটা না দিতে বলেছি। পরিবেশমন্ত্রীও আমাদের সাথে একমত।”
বনবিভাগ থেকে আগেই আপত্তি দেয়া হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, “কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে একটা ছাড়পত্র দেয়া হয়েছিল। তবে তারা জানতো না জমির ধরন কী। তাদের কাছে হয়তো দাগ ও খতিয়ান নম্বর দেয়া হয়েছে।”
পরে সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, কক্সবাজারে ওই বনাঞ্চলের ৭০০ একর জায়গায় জনপ্রশাসন একাডেমি নির্মাণের বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে পর্যালোচনা করার সুপারিশ করা হয়।
এছাড়া কমিটি ২০২১-২০২২ অর্থ-বছরে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন প্রকল্পের বাস্তবায়নের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার সুপারিশ করে।
সাবের চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটি সদস্য পরিবেশ ও বন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, নাজিম উদ্দিন আহমেদ, তানভীর শাকিল জয়, খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন এবং মো. শাহীন চাকলাদার বৈঠকে অংশ নেন। বিডি নিউজ।