ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অনুসন্ধান প্রায় শেষ করে এনেছে দুর্নীতি দমন কমিশন,দুদক। শিগগিরই তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হবে। দুদকের দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। সূত্রটি জানিয়েছে সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনের সত্যতা পাওয়া গেছে। দেশের বাইরে টাকা পাচারের সত্যতাও পেয়েছে দুদক। দুদক সূত্র জানায় সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে মেয়র থাকাকালে ফুলবাড়িয়ার সিটি করপোরেশনের মার্কেটে দোকান বরাদ্দের নামে কোটি কোটি টাকা ঘুষ নেয়া, সিটি করপোরশনের বিভিন্ন কেনা কাটায় দুর্নীতি এবং টেন্ডারে কমিশন গ্রহণের দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এসব অভিযোগ নিয়ে দুদক অনুসন্ধানে নামে। প্রায় বছরখানেক ধরে অনুসন্ধান এখন শেষ পর্যায়ে। কমিশন মামলা দায়েরের অনুমতি দিলেই কয়েকটি মামলা হবে। আর এসব মামলায় আসামী করা হবে সাঈদ খোকন, তার মা ফাতেমা হানিফ, স্ত্রী ফারহানা আলম ও বোন শাহানা হানিফ।
সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে অভিযোগ অনুসন্ধান করছেন এমন একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মেয়র থাকাকালে রাজধানীর ফুলবাড়িয়ায় কয়েক হাজার অবৈধ দোকান স্থাপনের অভিযোগ রয়েছে সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে। তিনি রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে বানানো এসব দোকান থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছেন, এসব অভিযোগ দুদকের কাছে আছে। সেগুলো নিয়েই দুদক অনুসন্ধান করছে।
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, গত বছর ডিসেম্বরে সিটি করপোরেশন টানা ছয় দিনের অভিযানে ৬০০ দোকান উচ্ছেদ করে। এই দোকানদারদের ট্রেড লাইসেন্সসহ সব কাগজপত্র ছিল, সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে তারা অবৈধভাবে স্থাপনা করে ব্যবসা করছিলেন। মেয়রের অনুমতি ছিল এসব দোকান স্থাপনে। এসব বিষয়ে তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়টিও দুদক অনুসন্ধান করেছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য গত ২৭ জুন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশে সাঈদ খোকন ও তার পরিবারের সদস্যদের আটটি ব্যাংক হিসাব জব্দ করে দুদক। দুদকের আবেদনে বলা হয়েছিল, এই ব্যাংক হিসাবগুলোতে অর্থ লেনদেন অস্বাভাবিক। বিপুল পরিমাণ এই অস্বাভাবিক অর্থ লেনদেন সন্দেহজনক। সুষ্ঠু তদন্তের প্রয়োজনে ব্যাংক হিসাবগুলো থেকে অর্থ উত্তোলন, স্থানান্তর বা হস্তান্তর বন্ধে জরুরি ভিত্তিতে ব্যাংক হিসাবগুলো অবরুদ্ধ করা প্রয়োজন।
প্রায় ৩৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাঈদ খোকনসহ সাতজনের বিরুদ্ধে ফুলবাড়িয়া সিটি মার্কেটের ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্ত করছে। এ মামলাটিও তদন্ত শেষ পর্যায়ে।
দুদকের অনুসন্ধানে সাঈদ খোকন বিদেশ ভ্রমণ নিয়েও অর্থ লোপাটের সত্যতা মিলেছে। তিনি বিদেশ ভ্রমণেও রেকর্ড করেছেন। ব্যক্তিগত কাজে ২০১৮ সালেই তিনি ৪৭ দিন বিদেশে থেকেছেন। আর ২০১৯ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি এ দুই মাসে ব্যক্তিগত কাজে ১৫ দিন বিদেশে থাকেন। তিনি বিদেশ সফর করেছেন বেশিরভাগ অস্ট্রেলিয়ায়। সেখানেই তিনি অর্থপাচার করেছেন বলে ধারণা করছে দুদক। অনুসন্ধানে বের হয়ে আসে, ২০১৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর ব্যক্তিগত সফরে অস্ট্রেলিয়ায় যান এবং ১৯ দিন কাটিয়ে ১৬ জানুয়ারি ঢাকায় ফেরেন। দেশে ফেরার পর একমাস যেতে না যেতেই আবারও ২০১৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ব্যক্তিগত সফরে অস্ট্রেলিয়া যান সেখান থেকে ফেরেন ২৬ ফেব্রুয়ারী। এরপর ব্যক্তিগত সফরে ৭ জুলাই আবার অস্ট্রেলিয়া যান ,ফিরেন থেকে ১৮ জুলাই। এরপর গ্লোবাল ক্লাইমেট অ্যাকশন সামিটের জন্য ১২ থেকে ১৪ সেপ্টম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে। বিদেশ সফরগুলোর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের উন্নয়নে প্রশিক্ষণের নামে মাত্র চারদিন ব্যয় করেছেন, আর ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ৪৭ দিন বিদেশে ছিলেন বলে অনুসন্ধানে বের হয়।। এছাড়া ২০১৯ সালে ব্যক্তিগত সফরে ২ থেকে ৬ জানুয়ারি মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর এবং ২১ থেকে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার সফর করেন। দফায় দফায় অস্ট্রেলিয়া ব্যক্তিগত সফর নিয়ে নানা সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। মামলা দায়েরের পর তদন্ত পর্যায়ে সাঈদ খোকনকে এসব বিষয় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে দুদক সূত্র জানিয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের সচিব মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদারের কাছে এসব বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন , দুদক যেহেতু অনুসন্ধান করছে সেটারতো শেষ হবেই। তিনি বলেন,অপেক্ষা করেন সবই জানতে পারবেন।