ঢাকা   সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১   দুপুর ১২:২২ 

সর্বশেষ সংবাদ

বিচার বিভাগের কলঙ্কজনক অধ্যায়

দেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায় রচিত হলো । দুর্নীতির দায়ে সাবেক( পদত্যাগী) একজন প্রধান বিচারপতিকে দণ্ডিত হতে হলো। নজিরবিহীন ঘটনা। আইন ও বিচারাঙ্গনে এ নিয়ে চলছে নানামুখী আলোচনা। খোদ আইনমন্ত্রীও এ নিয়ে মনোকষ্টে ভুগছেন। বলেছেন, বিচার বিভাগের জন্য এটা নিশ্চয়ই ভাল নজির নয়। তবে কেউই যে আইনের উর্ধে নয় এটাও প্রমাণিত হলো।
বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা যিনি এস কে সিনহা নামেই বেশী পরিচিত। মফস্বল জেলা বারের একজন আইনজীবী থেকে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী তারপর হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, আপিল বিভাগের বিচারপতি থেকে দেশের প্রধান বিচারপতি হয়েছিলেন। বলা যায় ভাগ্যের বরপুত্র। বাংলাদেশের ইতিহাসে তিনিই ছিলেন প্রথম যিনি সংখ্যালঘু সম্প্রদায় থেকে প্রধান বিচারপতি নিযুক্ত হয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যিনি অসাম্প্রদায়িকতার প্রতীক তার আমলেই নজির স্থাপন করেছিলেন এস কে সিনহাকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দিয়ে। সংবিধান অনুযায়ী যদিও প্রধানবিচারপতি নিয়োগের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতিকে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ নিতে হয় না, যেখানে অন্য সকল ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ নিয়ে রাষ্ট্রপতিকে চলতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতি ও শাসন ক্ষমতা এবং সংসদীয় পদ্ধতিতে যেহেতু প্রধানমন্ত্রীকে কেন্দ্র করেই ক্ষমতা ঘুরপাক খায়, ফলে এ ক্ষেত্রেও অর্থাৎ প্রধানবিচারপতি নিয়োগেও রাষ্ট্রপতিকে হয়তো প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ শুনতে হয়েছে। আর এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে উদারতার পরিচয় দিয়েছিলেন তা ইতিহাসে প্রথম। কিন্তু প্রধানবিচারপতি নিযুক্ত হয়ে মি. সিনহা সেই উদারতার সম্মান রাখেন নি। নিজে দুর্নীতির জালে জড়িয়েছেন পাশাপাশি চ্যালেঞ্জ করে বসেন রাষ্ট্রের স্থপতি বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা নিয়েও। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে দেয়া রায়ে তিনি যে মন্তব্য করেন, মত প্রকাশ করেন তাতে বঙ্গবন্ধুর অস্তিত্ব নিয়েই টান দেন। এতে স্বাভাবিক ভাবেই ক্ষুব্ধ হন বঙ্গবন্ধুর অনুসারীরা।
কোন মোহে পড়ে বিচারপতি সিনহা এমন আচরণে মেতেছিলেন তা নিয়ে রয়েছে ব্যাপক রহস্য। তবে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসার ঘটনা ঘটে। নানামুখি চাপে তিনি দেশ ছাড়েন আর বিদেশে বসেই পদত্যাগ করেন। গুঞ্জন ছিলো তিনি জুডিশিয়াল ক্যু করতে চেয়েছিলেন। এক অলীক স্বপ্নে তিনি বিভোর ছিলেন।
অথচ মি. সিনহা বিচারাঙ্গনের প্রধানের দায়িত্ব পেয়ে ভুলে গিয়েছিলেন তার পথ পরিক্রমার কথা। তিনি কৃতজ্ঞতার পরিবর্তে কৃতঘ্নতার পরিচয় দেন।

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার দুর্ভাগ্যই বলা যায়। বিশ্বাস করে তার উদারতায় যাকে দায়িত্ব দেন তিনিই ক্ষমতায় বসে ভুলে যান কৃতজ্ঞতার কথা। এর আগে বিচারপতি সাহবুদ্দিন আহমদকে রাষ্ট্রপতি বানিয়েছিলেন দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে। বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ কী প্রতিদান দিয়েছেন তা সবাই জানি।
একই ভূমিকা রাখলেন বিচারপতি এসকে সিনহা। শেখ হাসিনা চেয়েছিলেন দেশের ইতিহাসে নজির স্থাপন করতে। সংখ্যালঘু মণিপুরী সম্প্রদায়ের লোক এস কে সিনহাকে তিনি প্রধানবিচারপতি করলেন। কিন্তু দায়িত্ব পেয়েই চোখ উল্টালেন মি. সিনহা। দুর্নীতিতেও জড়ালেন। এমন আরও নজির দেখি বিভিন্ন ক্ষেত্রে। শেখ হাসিনা বিশ্বাস করে অনেককে মন্ত্রী বানিয়েছেন, পিএস, ডিপিএসসহ বিভিন্ন পদে বসিয়েছেন। কিন্তু দায়িত্ব পেয়ে তারা নিমজ্জিত হয়েছেন দুর্নীতিতে, নানা অনিয়মে।
বিচারপতি সিনহা বিচারাঙ্গনে যে নোংরা ইতিহাস রচনা করে গেলেন এর ঘানি বিচারবিভাগকে টানতে হবে।
শুধু বিচারপতি এস কে সিনহাই নন, উচ্চ আদালতের আরও কয়েকজন বিচারপতির বিরুদ্ধে এমন আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এমন কী হাইকোর্ট বিভাগের কর্মরত তিন জন বিচারপতির বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় গত দুবছর ধরে তাদের বিচারকাজ থেকে বিরত রাখা হয়েছে। এটাও এক নজিরবিহীন ঘটনা। কর্মরত তিনজন বিচারপতির বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ দুই বছরেও নিস্পত্তি করা সম্ভব হয় নি। তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ নিস্পত্তি করা হচ্ছে না, আবার তাদের বিচারকাজ পরিচালনা করতেও দেয়া হচ্ছে না। অথচ প্রতি মাসে রাষ্ট্রের লক্ষ লক্ষ টাকা যা জনগণের করের টাকা তাদের পেছনে খরচ হচ্ছে। এটা শুধু অনৈতিকই নয় এটাও দুর্নীতি। এ ছাড়া এই বিচারকরাও আছেন মানসিক ও সামাজিক অশান্তিতে। এ নিয়ে আদালত পাড়ায় শোনাযায় নানা কানাঘুসা। সর্বোচ্চ আদালত মানুষের বিচার চাওয়ার শেষ আশ্রয়স্থল। নির্বাহী বিভাগের দাপটে মানুষ যখন দিশেহারা হয়ে পড়ে,তাদের মৌলিক অধিকার হরণ হয় তখন আশ্রয়ের জন্য ছুটে আসে মহান আদালতে। আর সেই আশ্রয়স্থল আদালত ও বিচারক সম্পর্কে মানুষের মনে যদি সন্দেহ, আস্থাহীনতার সৃষ্টি হয় তা হলে মানুষ আর যাবে কোথায়? তাকে নিস্পেষিত হয়ে অধিকারহারা হয়ে থাকতে হবে। কোনো সভ্য সমাজে এটা কাম্য হতে পারে না। মাননীয় বিচারকরা কী এটা বুঝেন না?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সবচেয়ে আলোচিত