ঢাকা   মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০   বিকাল ৫:৪৫ 

সর্বশেষ সংবাদ

১৯৭১ সালে পাকিস্তানি গণহত্যাকে স্বীকৃতির প্রস্তাব মার্কিন কংগ্রেসে

১৯৭১ সালে পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী বাংলাদেশে গণহত্যা চালিয়েছে উল্লেখ করে এর নিন্দা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভে একটি প্রস্তাব আনা হয়েছে।
শুক্রবার (১৪ অক্টোবর) দেশটির দুই আইনপ্রণেতা ভারতীয় বংশোদ্ভূত রো খান্না এবং স্টিভ চ্যাবট এই প্রস্তাব উত্থাপন করেন। ভারতীয় বার্তাসংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া (পিটিআই) এই খবর দিয়েছে।
প্রস্তাবটিতে ১৯৭১ সালে বাঙালি এবং হিন্দুদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর চালানো নৃশংসতাকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। প্রস্তাবটির নাম ‘১৯৭১ সালে বাংলাদেশে গণহত্যার স্বীকৃতি’।
এ ছাড়া পাকিস্তানকে বাংলাদেশের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়ার জন্য এবং যেসব অপরাধী এখনো বেঁচে আছে তাদের বিচার করার জন্যও আহ্বান জানানো হয় এতে।
প্রস্তাব উত্থাপনের পর এক টুইট বার্তায় চ্যাবট বলেন, ওই বছরের লাখ লাখ মানুষকে হত্যার স্মৃতি আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয়। ওই হত্যাযজ্ঞকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দিলে তা ইতিহাসের দলিলকে আরও শক্তিশালী করবে এবং আমাদের সহকর্মী আমেরিকানরা তা থেকে শিক্ষালাভ করবে। আর অপরাধীরা জানবে এই ধরনের অপরাধ মেনে নেয়া হবে না বা ভুলে যাওয়া হবে না।
তিনি আরও বলেন, ১৯৭১ সালে একটি গণহত্যা হয়েছিল। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান, এখন যেটি বাংলাদেশ- সেখানে লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। নিহতদের ৮০ ভাগ ছিল হিন্দু। আমার মতে, তা অন্যান্য গণহত্যার মতোই গণহত্যা ছিল। যেমনটা হলোকাস্টে ঘটেছিল। অন্যান্য যে গণহত্যা হয়েছিল সেটিও তেমন একটি ছিল, কিন্তু এখন পর্যন্ত সত্যিই গণহত্যার সংজ্ঞা দিয়ে তা ঘোষিত হয়নি। আমরা এখন এটি নিয়ে কাজ করছি। এ ছাড়া রো খান্না টুইটে বলেন, তিনি চ্যাবটের সঙ্গে মিলে ১৯৭১ সালের বাঙালি গণহত্যার স্মরণে প্রথম প্রস্তাবটি উপস্থাপন করেছেন। ১৯৭১ সালে লাখ লাখ বাঙালি ও হিন্দুকে হত্যা বা বাস্তুচ্যুত করা হয়েছিল যা বর্তমান সময়ে ভুলে যাওয়া গণহত্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম।
প্রস্তাবটিতে বলা হয়, ১৯৭০ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে নির্বাচনে জয়লাভ এবং পরবর্তীতে ইয়াহিয়া ও ভুট্টোর সঙ্গে তাঁর আলোচনা ব্যর্থ হয়। জেনারেল ইয়াহিয়া খান ১৯৭১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি তার জেনারেলদের বলেছিল ৩০ লাখ বাঙালিকে হত্যা করো এবং বাকিরা আমাদের হাত চাটবে। এতে আরও বলা হয়, ১৯৭১ এর ২৫ মার্চ পাকিস্তান সরকার শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার এবং সামরিক বাহিনী ও উগ্র ইসলামিক দলের সহায়তায় অপারেশন সার্চলাইট শুরু করে। এদিকে উত্থাপিত এ প্রস্তাবটিকে বাংলাদেশিরা স্বাগত জানিয়েছেন।
জাতীয় গণহত্যা দিবস:
১৯৭১ সালের এই দিনে রাতের আঁধারে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। অপারেশন সার্চলাইট নামে তারা মেতে ওঠে ইতিহাসের নৃশংসতম গণহত্যায়। জাতির জীবনে আসা এই ‘ভয়াল কালরাত’-এ ঘুমন্ত বাঙালিকে নির্বিচারে হত্যা করে পাকিস্তানি সেনারা।
জাতীয় সংসদে ২০১৭ সালের ১১ মার্চ এদিন অর্থাৎ ২৫ মার্চকে জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত হয়। তখন থেকে দিনটি জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
ওইদিন পিলখানা, রাজারবাগ, নীলক্ষেত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় একযোগে আক্রমণ করে পাকিস্তানি সেনারা। মেশিন গানের গুলিতে, ট্যাংক-মর্টারের গোলা আর আগুনের লেলিহান শিখায় পুরো নগরীতে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ৯ শিক্ষককে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়, তাদের আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পায়নি রোকেয়া হলও। বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে চলে নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞ।
ওই রাতে বাঙালি জাতির মুক্তির দিশারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ধানমন্ডির বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তান নিয়ে যায় হানাদার বাহিনী। তার আগেই ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে (২৫ মার্চ মধ্যরাতে) দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু। যে কোনো মূল্যে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
জাতির পিতার ডাকে সাড়া দিয়ে দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, ৩০ লাখ শহীদের আত্মদান আর দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে বাঙালি জাতি অর্জন করে স্বাধীনতা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সবচেয়ে আলোচিত