স্বামীর অত্যাচার থেকে বাঁচতে এক নারী সাহায্য চেয়েছিলেন পুলিশের। কিন্তু সাহায্য করার নামে এক পুলিশ কর্মকর্তার হাতে যৌন নির্যাতনের শিকার হতে হলো এই নারীকে। ঘটনাটি ঘটেছে রাজশাহী মহানগরীতে।
নির্যাতনের শিকার ওই নারীর পরিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সরকারি জরুরি সেবার নম্বরে ফোন করে সাহায্য নিয়ে পুলিশের কাছে গিয়েও যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন এক গৃহবধূ (১৮)। রাজশাহী নগরের বোসপাড়া পুলিশ ফাঁড়িতে এ ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. শামীমকে সোমবার প্রত্যাহার করা হয়েছে।
নগরের বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিবারণ চন্দ্র বর্মণ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। ওই গৃহবধূর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, নগরের এক হোটেল কর্মচারীর মেয়ে স্বামীর নির্যাতনের শিকার হয়ে বাবার বাড়িতে ফিরে আসেন। তাঁর বাবা চাচ্ছিলেন যেকোনোভাবে মেয়েটা যেন স্বামীর সংসারে টিকতে পারে। এ জন্য ৪ আগস্ট সরকারি জরুরি সেবার নম্বর ৯৯৯–এ ফোন করে পুলিশের সহযোগিতা চান। পরে নগরের বোসপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই মো. শামীম তাঁদের বাসায় যান। তিনি মেয়েটির স্বামীর নির্যাতনের বর্ণনা শোনেন। স্বামীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তিনি মেয়েটিকে পুলিশ ফাঁড়িতে দেখা করতে বলেন। মেয়েটি রোববার দুপুরে তাঁর মাকে সঙ্গে করে পুলিশ ফাঁড়িতে যান। এ সময় বাইরে একজন সেন্ট্রি ছিলেন। ভেতরে এএসআই শামীম একাই ছিলেন। তদন্তের স্বার্থে প্রয়োজনীয় কথা বলার জন্য মেয়েটির মাকে শামীম বাইরে যেতে বলেন। মেয়েটির মা বাইরে এসে দাঁড়ানোর কিছুক্ষণ পরেই মেয়েটি চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বাইরে বের হয়ে এসে তাঁর মাকে বলেন, ওই পুলিশ তাঁকে যৌন নিপীড়ন করেছেন। মেয়েটির বাবা বলেন, তখন বেলা ২টা ৩৬ মিনিট। তাঁর স্ত্রী ফাঁড়ির সামনে থেকে ফোন করে তাঁকে ঘটনার কথা জানান। তিনি সঙ্গে সঙ্গে আবার ৯৯৯–এ ফোন করেন। তারা তাঁকে বোয়ালিয়া থানায় এসে অভিযোগ করতে বলেন। ওই দিন বিকেলেই বোয়ালিয়া থানায় এসে মেয়ের মা বাদী হয়ে এএসআই শামীমের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। ওই দিন রাতেই স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে একটি সালিস ডাকা হয়। সেখানে এএসআই শামীম মেয়েটির বাবার হাত ধরে ক্ষমা চান। কিন্তু মেয়েটির বাবা তাঁর সঙ্গে মীমাংসা করতে রাজি হননি।
মেয়েটির বাবার অভিযোগ, ওই সালিসে কোনো আপসনামা লেখা হয়নি এবং তাঁরা তাতে সইও করেননি। কিন্তু শামীম বোয়ালিয়া থানায় ভুয়া সই করে একটি আপসনামা জমা দেন।
ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরমান আলী বলেন, তাঁর কার্যালয়ে এএসআই শামীম মেয়েটির বাবার হাতে ধরে ক্ষমা চেয়ে বলেছেন, তিনি তেমন কোনো অন্যায় করেননি। তারপরও তিনি ক্ষমা চাচ্ছেন।
এ বিষয়ে জানাতে মেয়েটির বাবা সোমবার দুপুরে সরাসরি রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি খুলে বলেন। পুলিশ কমিশনার তাঁদের বোয়ালিয়া থানার ওসির কাছে পাঠান।
ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা আপসের কথা অস্বীকার করছেন। তাঁদের অভিযোগের এখন তদন্ত হবে। ইতিমধ্যেই এএসআই শামীমকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। খবরের সূত্র- প্রথম আলো।