যুক্তরাজ্য থেকে প্রকাশিত মানবাধিকার রিপোর্টে বাংলাদেশ অংশের ভুল ও বানোয়াট তথ্যের প্রতিবাদ জানাবে বাংলাদেশ। ইতিমধ্যে ঢাকাস্থ ভারপ্রাপ্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনারকে ডেকে এনে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। এবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টে চিঠি পাঠানো হবে। আর এর প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
বাংলাদেশ সম্পর্কে বিভিন্ন ভুল তথ্যের মধ্যে সরকারের কাছে সবচেয়ে আপত্তিজনক মনে হয়েছে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গটি। রিপোর্টে বলা হয়েছে খালেদা জিয়াকে হাউজ অ্যারেস্ট বা গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে।
বিষয়টিকে চরম বিভ্রান্তিমূলক বলছে সরকার। কারণ খালেদা জিয়া গৃহবন্দি নন। তিনি দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত এবং কারাগারে ছিলেন। তার পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বয়স,অসুস্থতা এবং করোনা মহামারি বিবেচনা করে সরকার খালেদা জিয়ার কারাদণ্ড প্রথমে ৬ মাসের জন্য স্থগিত করে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেয়। তিনি বিদেশ যেতে পারবেন না এবং দেশের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারবেন। পরবর্তীতে তার সাজা স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানো হয়। তিনি এখন সাজা স্থগিতের সুযোগ নিয়ে বাসায় আছেন। ক’দিন আগে চিকিৎসার জন্য হাসাপাতালেও ভর্তি হয়েছেন । তাঁর সঙ্গে দলের লোকজন এবং আত্মীয় স্বজন দেখা করতে পারছেন। কাজেই খালেদা জিয়া গৃহবন্দি বলে যে তথ্য বলা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক।
সোমবার গণমাধ্যমকে এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, খালেদা জিয়া গৃহবন্দি নন। বাংলাদেশের ভেতরে চলাফেরায় তাঁর কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। তারপরও তারা (যুক্তরাজ্য ) এ কথা লিখেছে, সেটি আমি আপত্তি করে লিখবো ও প্রতিবাদ করবো। এ নিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে চিঠি পাঠাবো।
এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনও যুক্তরাজ্য থেকে প্রকাশিত মানবাধিকার ও গণতন্ত্র রিপোর্টটি গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন । তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘তাদের উচিত এই ধরনের চর্চা বন্ধ করা।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের ওই রিপোর্ট তথ্যনির্ভর নয়। নিজের দেশের অবস্থা ভালো করতে পারে না কিন্তু অন্যদের উপদেশ দেয়। গঠনমূলক তথ্য দিলে সেটি কাজে আসবে। কিন্তু বানোয়াট তথ্য দিলে সেটি কোনো উদ্দেশ্যমূলকভাবে দেওয়া হয়েছে বলে সবাই মনে করবে। তারা উপদেশ দিতে আসে কিন্তু এটি গ্রহণযোগ্য নয়।’
এর আগে রোববার (১১ জুলাই) ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার জাভেদ প্যাটেলকে তলব করে প্রতিবাদ জানিয়েছে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়। সেখানে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাজ্যের বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদনের কিছু অংশে বিভ্রান্তিকর বিশেষ করে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ‘গৃহবন্দি’ হিসেবে ওই প্রতিবেদনে মন্তব্য করাটা চরম বিভ্রান্তিমূলক বলে ব্রিটিশ দূতকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়া হয়।
ব্রিটিশ দূতকে জানানো হয়, খালেদা জিয়া বিদেশ যাবেন না, দেশে চিকিৎসা নেবেন, এই শর্তে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, প্রাথমিকভাবে ছয় মাসের জন্য কারাদণ্ড স্থগিত করে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। পরে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর ও ২০২১ সালের মার্চে দুই দফায় তাঁর কারাদণ্ড স্থগিত করে মুক্তির আদেশের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে।
খালেদা জিয়ার বর্তমান অবস্থানের বিষয় নিয়ে কোনো বিভ্রান্তি থাকলে যুক্তরাজ্যের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাজ্য সরকার যাতে বাংলাদেশ সরকার কিংবা সরকারি দল আওয়ামী লীগের বিষয়ে কটাক্ষমূলক ও বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকে, সেটি তলবের সময় ব্রিটিশ দূতকে মনে করিয়ে দেয়া হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের মানবাধিকার বিষয়ক প্রতিবেদনে বাংলাদেশে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের প্রসঙ্গে মন্তব্য নিয়েও সরকার উদ্বেগ জানিয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রতিবেদনে বাংলাদেশে অবস্থানের ক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের যেভাবে অভিহিত করা হয়েছে, তা যেমন আন্তর্জাতিকভাবে ঠিক নয়, তেমনি তা বাংলাদেশের আইনেও স্বীকৃত নয়।
যুক্তরাজ্যের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার জাভেদ প্যাটেল বাংলাদেশের উদ্বেগের বিষয়গুলো তাঁর দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তুলে ধরবেন বলে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের আশ্বস্ত করেছেন।