ঢাকা   শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১   সকাল ১০:৩৪ 

সর্বশেষ সংবাদ

‘ভয়ংকর সিরিয়াল খুনি’ হেলাল বাউল সেজেও পার পেলো না

ভয়ঙ্কর খুনি হেলাল হোসেন সেলিম একের পর এক খুন করে বাউল ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়িয়েছে দেশের বিভিন্ন মাজারে। এ সময়ে একটি ফোক গানে সে বাউলের মডেল হয়ে অভিনয়ও করেছে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয় নি। ধরা পড়তে হলো র‍্যাবের হাতে। সিরিয়াল কিলার খ্যাত ‘ভাঙ্গা তরী ছেড়া পাল” গানের বাউল মডেল মো. হেলাল হোসেন ওরফে সেলিম ফকির ওরফে বাউল সেলিম ওরফে হেলালকে শেষ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। বুধবার রাতে কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেলওয়ে স্টেশন এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ নিয়ে বিস্তারিত জানান র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং এর পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি জানান, আনুমানিক ৬ মাস আগে এক ব্যক্তি ইউটিউবে প্রচারিত একটি গানের বাউল মডেল সেলিম ফকির সম্পর্কে র‌্যাবের কাছে তথ্য দেন। তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী, র‌্যাব তদন্ত শুরু করে এবং এক পর্যায়ে ঘটনার সত্যতা পায়।

গ্রেপ্তারকৃতের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‍্যাব জানায়, ১৯৯৭ সালে বগুড়াতে চাঞ্চল্যকর বিষ্ণু হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। হেলাল ২১ বছর বয়সে ওই হত্যা মামলার এজাহারনামীয় আসামি ছিলেন। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ওই হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয় বলে জানা যায়। ২০০০ সালে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এলাকায় দুইপক্ষের সংঘর্ষে প্রতিপক্ষের ধারালো দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে তার বাম হাতে মারাত্মক জখম হয় এবং বাম হাত পঙ্গু হয়। এই ঘটনার পর থেকে তিনি বিভিন্ন নামে (দূর্ধর্ষ হেলাল, হাত লুলা হেলাল হিসেবে) এলাকায় পরিচিতি লাভ করেন।
২০০১ সালে মাহমুদুল হাসান বিদ্যুৎকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ভুক্তভোগীর পরিবার বাদী হয়ে বগুড়া সদর থানায় মামলা করে। সেই মামলায় আদালত তাকে যাবজ্জীবন সাজা দেন। এ ছাড়া ২০০৬ সালে বগুড়ায় রবিউল নামে এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। হেলাল ওই হত্যাকাণ্ডেরও একজন চার্জশিটভুক্ত আসামি।
র‍্যাব আরও জানায়, হেলাল ২০১০ সালে বগুড়া থেকে ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনে আসেন। এরপর কমলাপুর থেকে চট্টগ্রামে চলে যান এবং সেখানকার আমানত শাহ মাজারে ছদ্মবেশ ধারণ করে বেশ কিছু দিন অবস্থান করেন। সেখান থেকে সিলেটের শাহজালাল মাজারে চলে যান এবং সেখানে ছদ্মবেশ ধারণ করে আরও কিছু দিন অবস্থান করেন। বিভিন্ন সময়ে তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন রেলস্টেশন ও মাজারে ছদ্মবেশে অবস্থান করতেন। তিনি কিশোরগঞ্জ ভৈরব রেলস্টেশনে নাম-ঠিকানা ও পরিচয় গোপন রেখে সেলিম ফকির নাম ধারণ করেন।
আনুমানিক ৫ বছর আগে হেলাল নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশনে কিশোর পলাশ ও গামছা পলাশের একটি গানের শুটিং চলাকালে রেললাইনের পাশে বাউল গান গাচ্ছিলেন। তখন শুটিংয়ের একজন ব্যক্তি তাকে গানের মিউজিক ভিডিওতে অভিনয়ের প্রস্তাব দিলে বহুল জনপ্রিয় “ভাঙ্গা তরী ছেড়া পাল” শিরোনামের গানের বাউল মডেল হিসেবে তাকে দেখা যায়। তিনি প্রায় ৭ বছর ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ফেরারি জীবনযাপন করছেন এবং গত প্রায় ৪ বছর ধরে কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেলস্টেশনের পাশে একজন নারীর সঙ্গে সংসার করে আসছেন। বিভিন্ন রেলস্টেশনে তিনি বাউল গান গেয়ে মানুষের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। র‍্যাব বলছে ভয়ঙ্কর খুনি হেলাল একজন ঠান্ডামাথার সিরিয়াল কিলার। তার বেশভূষা পরিবর্তন করে পুরোদস্তুর বাউল সেজেছিল। কিন্তু ঠিকই তাকে ধরা পড়তে হলো ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সবচেয়ে আলোচিত