ঢাকা   শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১   ভোর ৫:১৬ 

সর্বশেষ সংবাদ

ব্যবসায়ী রমিজউদ্দিন হত্যা: ভয়ঙ্কর খুনী মোয়াজ্জিন জাকির র‍্যাবের হাতে গ্রেফতার

নরসিংদীর ব্যবসায়ী রমিজ উদ্দিন হত্যাকাণ্ডে জড়িত মূল আসামী মসজিদের মোয়াজ্জিন জাকির হোসেন (৩৬) কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে র‍্যাব। হত্যাকাণ্ডের দুমাসের মধ্যেই প্রায় ক্লুলেস এই হত্যা রহস্য উদ্ঘাটন করতে সক্ষম হলো এলিট ফোর্স র‍্যাব । হত্যাকারী জাকির হোসেন লক্ষীপুরে একটি মসজিদে চিল্লারত অবস্থায় আত্মগোপনে ছিল। সেখান থেকেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বুধবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং-এর পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। গ্রেফতারকৃত জাকির জানিয়েছে , রমিজ হোসেনের কাছ থেকে টাকা লুট করার জন্যই গত ৩ অক্টোবর কিশোরগঞ্জে নিয়ে সে একাই তাকে হত্যা করে ।

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাবের মুখপাত্র জানান, গত ৩ অক্টোবর সকালে কিশোরগঞ্জ মডেল থানার কাটবাড়িয়া ডাউকিয়া মসজিদের দক্ষিণ পার্শ্বে অচেতন অবস্থায় গুরুতর জখমপ্রাপ্ত একজন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে পাওয়া যায়। পরবর্তী সময়ে কিশোরগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ সেই ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করলে আনুমানিক সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে মৃত্যুবরণ করেন। পরে নিহতের পাঞ্জাবির পকেটে থাকা কাগজপত্রের মাধ্যমে তার পরিচয় শনাক্ত করা হয়।
মৃত ব্যক্তির নাম রমিজ উদ্দিন (৬৫)। তার বাড়ি নরসিংদী জেলায়। এই ঘটনায় নিহত রমিজ উদ্দিনের ছেলে বাদী হয়ে কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
জানা যায়, নিহত রমিজ উদ্দিন একজন প্রবাসী ছিলেন। তিনি ১৯৯৮ সাল হতে ২০০৬ সাল পর্যন্ত মালেয়েশিয়াতে অবস্থান করেছেন। ইতিপূর্বে ২০০৬ সাল হতে রমিজ উদ্দিন জাকির হোসেনকে নিয়ে গরু কেনাবেচার ব্যবসা করেন। বর্তমানে ব্যবসা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে খামারের মাধ্যমে লালন-পালন করে বৃহৎ আকারে গবাদি পশুর ব্যবসা করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।
তিনি আরও জানান, এই হত্যার ঘটনার পরে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১৪ এর অভিযানে মঙ্গলবার রাতে লক্ষ্মীপুর জেলার একটি মসজিদে চিল্লারত অবস্থায় নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত মো. জাকির হোসেনকে (৩৬) গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত জাকির হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি স্বীকার করে। র‍্যাব জানায় যে, গত ৫ বছর ধরে নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার একটি গ্রামের মসজিদে মোয়াজ্জিন হিসেবে নিযুক্ত আছেন জাকির হোসেন। ওই এলাকায় নিহত রমিজ একজন বিত্তশালী উঠতি ব্যবসায়ী।
জাকির হোসেন রমিজ উদ্দিনকে কমমূল্যে গরু কেনার ব্যাপারে নানাভাবে প্রলুব্ধ করে। জাকির তাকে জানায়, তার বাড়ি নেত্রকোনা জেলার সামীন্তবর্তী গ্রামে, সেখানে কম দামে গরু পাওয়া যায়। এ কারণে জাকির ঘটনার ১০/১২ দিন আগে নিহত রমিজ উদ্দিনকে গরু সেখানে নিয়ে গিয়েছিল।
গ্রেফতারকৃত আরও জানায় যে, নিহত জাকির প্রলুব্ধ হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩০ সেপ্টেম্বর ব্যাংক হতে ৬ লাখ টাকা উত্তোলন করেন। এরপর গত ২ অক্টোবর রাতে তাকে নিয়ে প্রথমে মনোহরদী থেকে কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী এবং পরবর্তী সময়ে বড়পুল এলাকায় যায়। সেখান থেকে রিকশাযোগে ঘটনাস্থল সদর থানাধীন কাটাবাড়িয়া ডাউকিয়া মসজিদ এলাকায় যায় এবং নির্জন এলাকায় অবস্থান নেয়। গ্রেপ্তারকৃত তখন রমিজকে জানায়, গাড়িতে করে গরু এখানে আসবে এবং তারা সেখানে দীর্ঘক্ষণ অবস্থান করতে থাকে।
রাত আনুমানিক ১টা ৩০ মিনিটের সময় রমিজ উদ্দিনকে কৌশলে ডাউরিয়া মসজিদের দক্ষিণ পাশে কলাবাগানে নিয়ে যায়। অতঃপর গ্রেফতারকৃত জাকির হোসেন তার সঙ্গে থাকা হাতুড়ি দিয়ে পেছন থেকে বসে থাকা অবস্থায় রমিজ উদ্দিনের মাথায় সজোরে আঘাত করে। হাতুড়ির আঘাতে রমিজ উদ্দিন মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তার কপালে, মুখে, বাম চোখের উপর ও নিচে ও মাথার বিভিন্ন স্থানে গুরুতর আঘাত করে। পরবর্তী সময়ে সে রমিজ উদ্দিনকে মৃত ভেবে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।
র‍্যাব জানায় , জাকির হোসেন ঘটনার প্রায় ২ মাস আগে রমিজউদ্দিনকে হত্যা করে টাকা লুটের পরিকল্পনা করে। হত্যার উদ্দেশ্যে বহনকৃত হাতুড়িটি সে যাওয়ার দিন রাতে কিনে একটি ছোট ব্যাগে বহন করেছিল।
র‍্যাব আরও জানায়, হত্যাকাণ্ডের পর সে কিশোরগঞ্জ থেকে মনোহরদী চলে আসে এবং নিজ বাসায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। ফজরের আজানের সময় হলে মসজিদে গিয়ে আজান দেয় ও নামাজে অংশগ্রহণ করে ও মক্তবে ২০ জন ছাত্রকে পড়ায়।
তার ধারণা ছিল, রমিজ উদ্দিনের মৃত্যুর কথা কেউ জানতে পারবে না। তাই সে তার সাধারণ রুটিন অনুযায়ী চলাচল করতে থাকে। কিন্তু ৩ অক্টোবর সকাল ১১টার দিকে রমিজ উদ্দিনের মৃত্যুর বিষয়টি এলাকাবাসী জানতে পারলে জাকির হোসেন ভয় পেয়ে মসজিদ থেকে ছুটি নিয়ে আত্মগোপনে নরসিংদীর মাধবদী, ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁওয়ে, ময়মনসিংহ সদরে, সিলেট জেলার ফেঞ্জুগঞ্জ এবং সিলেট থেকে পুনরায় ময়মনসিংহ এসে আত্মগোপনে থাকেন। পরবর্তী সময়ে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকার একটি মসজিদে আসেন এবং সেখান থেকে চিল্লায় লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতী উপজেলায় চলে যায় এবং আত্বগোপনে থাকে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয় নি। র‍্যাবের হাতে তাকে ধরা পড়তে হলো। প্রায় ক্লুলেস এই হত্যাকাণ্ডটি উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে র‍্যাব।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সবচেয়ে আলোচিত