ঢাকা   শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১   রাত ৪:৫০ 

সর্বশেষ সংবাদ

রাজারবাগের পীরকে নজরে রাখতে আইনশৃংখলা বাহিনীকে হাইকোর্টের নির্দেশ

রাজারবাগ দরবার শরিফের পীর দিল্লুর রহমানসহ তার তিন সহযোগীর কর্মকাণ্ডের ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখতে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সিআইডি, কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট কিংবা দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) বলা হয়েছে, চাইলে তদন্তের স্বার্থে তাদের দেশত্যাগ বা বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিতে পারবে।
দেশের ছয়টি জেলায় রাজারবাগের পীর দিল্লুর ও তার সহযোগীদের করা ৩৪টি মামলার ৮ ভুক্তভোগীর করা রিট আবেদনে আদালতের এ আদেশ হয়েছে। রোববার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার। বাদির আইনজীবী, ‘আদালত বলেছেন, সিআইডির প্রতিবেদন উঠে আসা রাজারবাগের পীর দিল্লুর রহমানসহ তার তিন সহযোগীর বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীরা চাইলে মামলা করতে পারবেন।’
পীর দিল্লুরের তিন সহযোগী হলেন, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার সাকেরুল কবির, সদর উপজেলার ফারুকুর রহমান এবং কুমিল্লার মফিজুল ইসলাম। দেশের ছয়টি জেলায় ৩৪টি মামলা দিয়ে হয়রানি করার অভিযোগ এনে রাজারবাগের পীর দিল্লুর ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা চেয়ে আট ব্যক্তি গত ১৪ সেপ্টেম্বর হাই কোর্টে রিট আবেদনটি করেন।
প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ১৯ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট রুল ছাড়াও পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট, অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) তিনটি নির্দেশনা দেয়। এসব নির্দেশনার মধ্যে ছিল,
১. পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটকে নির্দেশ দেয়া হয়, কথিত পীর দিল্লুর রহমান ও তার পৃষ্ঠপোষকতায় কোনো জঙ্গি সংগঠন আছে কি না, সে বিষয়ে আগামী ৩০ নভেম্বরের আগে আদালতে প্রতিবেদন দিতে হবে।
২. দুদককে নির্দেশ দেয়া হয়, পীর দিল্লুর ও তার প্রতিষ্ঠানের নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে যেসব সম্পদ রয়েছে, তা নির্ণয়ের পশাপাশি সম্পদের উৎস খতিয়ে দেখে ৩০ নভেম্বরের আগে আদালতে প্রতিবেদন দিতে হবে।
৩. আর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) নির্দেশ দেয়া হয়, রিট আবেদনকারীদের বিরুদ্ধে যারা হয়রানিমূলক মামলা করেছেন, তাদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে হবে।
পরে হাই কোর্টের এসব আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেন মফিজুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি, যিনি রিট আবেদনকারীদের বিরুদ্ধে করা এক মামলার বাদী।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর আবেদনটি চেম্বার আদালতে শুনানির জন্য ওঠে। সেদিন আদালত হাই কোর্টের আদেশে হস্তক্ষেপ না করে আবেদনটি ২৪ অক্টোবর আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠায়। পরে ২৬ অক্টোবর মফিজুল ইসলাম আবেদন খারিজ করে দেয় আপিল বিভাগ। এরপর রিট মামলাটি রোববার শুনানির জন্য ওঠে।
এর মধ্যে গত ২ ডিসেম্বর পীর দিল্লু ও তার তিন সহযোগীর বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন ঢাকার শান্তিবাগ এলাকার বাসিন্দা একরামুল আহসান কাঞ্চন, যার বিরুদ্ধে পীর দিল্লুর ও তার অনুসারীরা দেশের বিভিন্ন জেলায় নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতি, মানবপাচারসহ বিভিন্ন অভিযোগে করা ৪৯টি অস্তিত্বহীন মামলা করেছিল।
সেই আবেদনটিও রিট আবেদনের সঙ্গে শুনানির জন্য ওঠে। এ আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এমাদুল হক বশির। তিনি বলেন, ‘আমাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত বলেছেন, সিআইডি, পুলিশের সিটিটিসি ইউনিট কিংবা চাইলে তদন্তের স্বার্থে তাদের দেশত্যাগ বা বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিতে পারবে।’
এর আগে পীর দিল্লুর রহমানের অনুসারী চক্রের ‘অস্তিত্বহীন’ বাদীর মামলা চ্যালেঞ্জ করে গত ৭ জুন হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছিলেন ঢাকার শান্তিবাগ এলাকার বাসিন্দা একরামুল আহসান কাঞ্চন।
সেই আবেদনের প্রাথমিক শুনানির পর হাই কোর্ট এসব অস্তিত্বহীন মামলার বাদীকে খুঁজে বের করতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অতিরিক্ত মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দিয়েছিল। নির্দেশ অনুযায়ী সিআইডি অনুসন্ধান প্রতিবেদন দিলে গত ৬ সেপ্টেম্বর সেটি আদালতে উপস্থাপন করা হয়। সে প্রতিবেদনে শান্তিবাগ এলাকার বাসিন্দা একরামুল আহসান কাঞ্চনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, অ্যাসিড নিক্ষেপ, মানবপাচারের মতো নানা অভিযোগে ৪৯টি মামলার পেছনে রাজারবাগের পীর দিল্লুর রহমানের সম্পৃক্ততা উঠে আসে।
ওই প্রতিবেদন দেখে ‘বিস্ময়’ প্রকাশ করে বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম সেদিন বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশে পীর সাহেবের কাণ্ড দেখেন! জায়গা-জমি দখলের জন্য পীর সাহেব কী করেছেন দেখেন! সম্পত্তির জন্য তথাকথিত মুরিদ দিয়ে মামলা করিয়েছেন। পীর সাহেবের কেরামতি দেখেন!’
সিআইডির প্রতিবেদনে বলা হয়, একরামুল আহসান কাঞ্চনের বিরুদ্ধে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় মোট ৪৯টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এরমধ্যে জিআর (পুলিশি মামলা) মামলা ২৩টি এবং সিআর (নালিশি মামলা) মামলা ২৬টি। ইতিমধ্যে ১৫টি জিআর মামলা এবং ২০টি সিআর মামলায় কাঞ্চন আদালত থেকে খালাস পেয়েছেন। বর্তমানে ১৪টি মামলা আদালতে বিচারাধীন, যার মধ্যে আটটি জিআর এবং ছয়টি সিআর মামলা।
পুলিশের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অধিকাংশ মামলার নথিপত্র সংগ্রহের পর পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, আবেদনকারীর বিরুদ্ধে একাধিক মানবপাচার, নারী নির্যাতন, বিস্ফোরক দ্রব্য আইন, হত্যার চেষ্টা মামলাসহ প্রতারণা, জাল-জালিয়াতি, ডাকাতির প্রস্তুতিসহ বিভিন্ন ধর্তব্য ও অধর্তব্য ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। সূত্র -আমাদের সময়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সবচেয়ে আলোচিত