বাঙালির সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য নিশ্চিত করতে হলে ৭২ এর সংবিধানে ফিরে যেতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্টজনেরা। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উদ্যোগে বৃহস্পতিবার ৫০তম সংবিধান দিবস উপলক্ষে নির্মূল কমিটির ভার্চুয়াল আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তারা এ মন্তব্য করেন।
কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে এ আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এতে আরও অংশ নেন ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, আরমা দত্ত প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের শ্রেষ্ঠ অবদান স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা এবং দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ অবদান সংক্ষিপ্ততম সময়ে জাতিকে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংবিধান উপহার দেওয়া। এ সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ও অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতীয়তাবাদকে রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান নীতি হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছিল এবং ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।’
‘বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়াউর রহমান ও তার উত্তরসূরী জেনারেল এরশাদ সংবিধানের সাম্প্রদায়িকীকরণের মাধ্যমে আলোকাভিসারী একটি জাতিকে ধর্মান্ধতা ও সাম্প্রদায়িকতার কৃষ্ণ গহ্বরে নিক্ষেপ করেছেন’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘৭২ এর সংবিধান কার্যকর থাকলে বাংলাদেশে আজ ধর্মের নামে এত নির্যাতন, হানাহানি, সন্ত্রাস, বোমাবাজি, রক্তপাত আমাদের দেখতে হতো না। বাংলাদেশ যদি একটি আধুনিক ও সভ্য রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চায়, তাহলে ৭২ এর সংবিধানের পুনপ্রবর্তন ছাড়া আমাদের সামনে অন্য কোন পথ খোলা নেই।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘৪ নভেম্বর বাঙালি জাতির জীবনের উজ্জ্বল দিন। ১৯৭২ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংবিধান প্রণয়ন করেন। ৭২ এর সংবিধান আমাদের জাতির দীর্ঘ ২৪ বছরের আন্দোলনের প্রতিফলন। কিন্তু ওই সংবিধানে ৪টি স্তম্ভ যেভাবে ছিল এখন সেভাবে আমরা দেখতে পাচ্ছি না।’
বঙ্গবন্ধুর সংবিধানের লক্ষ্যগুলো অর্জনে অব্যাহতভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘৭২ এর সংবিধানের মূল ধারণাগুলোকে ধারণ করতে হবে এবং প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে দিতে হবে।’
স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের অন্যতম রচয়িতা ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম বলেন, ‘সম্প্রতি দুর্গাপূজায় দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় বাংলাদেশের অঙ্গীকার ভঙ্গ হয়েছে। এ ধরনের শক্তি প্রয়োগ করা সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। পঞ্চম, সপ্তম ও অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় মূলনীতির পরিবর্তন, রাষ্ট্রীয় ধর্ম সৃষ্টির মাধ্যমে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষের মাঝে ভেদ সৃষ্টি, অর্পিত ও শত্রু সম্পত্তি আইনকে অব্যাহত রাখার মাধ্যমে নাগরিকদের অধিকারের বৈষম্য সৃষ্টি, অবৈধ ক্ষমতা দখল ও অসাংবিধানিক সকল ক্রিয়া কর্ম ও পরিবর্তনকে বৈধতা দান এসবই সংবিধানের স্খলনের উদাহরণ।’
তিনি আরও বলেন, ‘সংবিধান রক্ষা করার অঙ্গীকার করে যারা শপথ নিয়েছিল তাদের স্খলন আর সেই সাথে সংবিধানকে রক্ষা করতে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ব্যর্থতা এক ধরনের হতাশায় রূপ নিয়েছিল। এই অন্ধকারের অমানিশা থেকে বেরিয়ে এসে সংবিধানের অঙ্গীকার বাস্তবায়নের জন্য শেখ হাসিনার দিন বদলের যে আহ্বান, সে আহ্বানে সাড়া দিয়েছে এদেশের জনগণ। ছিনিয়ে এনেছিল নিরঙ্কুশ বিজয়। তাই বিজয় সংহত করে জনগণের সাংবিধানিক প্রত্যাশার বাস্তবায়ন সময়ের জরুরি দাবি।’