শেয়ারবাজারে আইপিওতে আবেদনে ফের নিয়ম পাল্টানো হয়েছে। এখন থেকে নতুন আসা আইপিওতে (প্রাথমিক গণপ্রস্তাব) সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ১০ হাজার টাকার বেশি শেয়ারের জন্য আবেদন করতে পারবেন না। চাঁদা গ্রহণের অপেক্ষায় থাকা সেনাকল্যাণ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির আইপিওর মধ্য দিয়ে নতুন এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে। কোম্পানিটির আইপিওর সম্মতিপত্রে (কনসেন্ট লেটার) বিষয়টি উল্লেখ করে দিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
বর্তমানে একজন সাধারণ বিনিয়োগকারী আইপিও সর্বনিম্ন ১০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকার সমপরিমাণ শেয়ারের জন্য আবেদন করতে পারেন। ফলে আবেদনকারীদের মধ্যে আইপিও শেয়ারপ্রাপ্তিতে কমবেশি হয়। শেয়ারপ্রাপ্তির এ ব্যবধান কমিয়ে আনতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য আইপিওতে আবেদন ১০ হাজার টাকায় নির্দিষ্ট করে দেয়া হচ্ছে। ফলে আবেদনকারী সব বিনিয়োগকারী আইপিওতে সমানসংখ্যক শেয়ার পাবেন।
জানতে চাইলে বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, সাধারণ বিনিয়োগকারীরা যাতে আইপিওতে বেশি শেয়ার পান, সে জন্য এ বিধান করা হয়েছে। ফলে কেউ চাইলে বেশি টাকার আবেদন করতে পারবেন না, বেশি শেয়ারও পাবেন না। নতুন এ শর্ত কোম্পানিগুলোর আইপিওর সম্মতিপত্রে উল্লেখ করে দেয়া হবে। এরই মধ্যে সেনাকল্যাণ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির আইপিওর সম্মতিপত্রে এ শর্ত যুক্ত করে দেয়া হয়েছে।
দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা গেছে, সেনাকল্যাণ ইনস্যুরেন্সের আইপিওর চাঁদা গ্রহণ শুরু হবে আগামী ৩ অক্টোবর। আইপিওতে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার ১০ টাকা অভিহিত মূল্য বা ফেসভ্যালুতে বিক্রি হবে। কোম্পানিটি ১ কোটি ৬০ লাখ শেয়ার ছেড়ে বাজার থেকে ১৬ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে।
এদিকে গত এপ্রিল থেকে শেয়ারবাজারে আইপিওর ক্ষেত্রে লটারি প্রথা তুলে দিয়েছে বিএসইসি। লটারি পদ্ধতির বদলে আবেদনকারীদের মধ্যে আনুপাতিক হারে শেয়ার বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। এত দিন একজন বিনিয়োগকারী ন্যূনতম ১০ হাজার টাকা বা তার গুণিতক পরিমাণ হিসাবে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকার শেয়ারের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এখন গুণিতকের বদলে ১০ হাজার টাকা নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে
আইপিও আবেদনের নতুন বিধান অনুযায়ী, আইপিওতে আবেদনের আগে প্রত্যেক বিনিয়োগকারীর বা আবেদনকারীর বাজারমূল্যে ন্যূনতম ২০ হাজার টাকা সেকেন্ডারি বাজারে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ থাকতে হবে।
ওটিসি বাতিল:
শেয়ারবাজার থেকে ওটিসি (ওভার দ্য কাউন্টার) প্ল্যাটফর্মকে অকার্যকর করা হয়েছে। ওটিসি বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৪১টিকে এসএমই প্ল্যাটফর্ম ও বিকল্প লেনদেন (অলটারনেটিভ ট্রেডিং) বোর্ডে স্থানান্তর করা হয়েছে। আর বাকি ২৯টিকে বাজার থেকে তালিকাচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে আগামী রোববার থেকে ওটিসি বাজারে কোনো কোম্পানির লেনদেন হবে না। এ–সংক্রান্ত আদেশ জারি করেছে বিএসইসি। আদেশে বলা হয়েছে, ওটিসি বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে ২৩টিকে এসএমই প্ল্যাটফর্মে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ২৩ কোম্পানির মধ্যে ৭টি উৎপাদনে রয়েছে, বাকি ১৬টির উৎপাদন বন্ধ। এ ছাড়া ওটিসিতে তালিকাভুক্ত ১৮টি কোম্পানিকে অলটারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড বা বিকল্প লেনদেন বোর্ডে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাকি ২৯টিকে নিয়ম অনুযায়ী তালিকাচ্যুত করা হবে। এর ফলে ওটিসি বাজারে লেনদেনযোগ্য আর কোনো কোম্পানি থাকবে না। ফলে ওটিসি বাজারটি অকার্যকরই হয়ে পড়বে।
এ তথ্য নিশ্চিত করে বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, বিনিয়োগকারীদের রক্ষার্থে পুঁজিবাজার থেকে ওটিসি মার্কেট আউট করে দিচ্ছি। এ মার্কেটটিতে খারাপ খারাপ কোম্পানিগুলো অবস্থান করছে। যেসব কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেবে না, উৎপাদনে যাবে না এগুলোকে একেবারে মার্কেট থেকে আউট করে দেব। বিনিয়োগকারীদের পাওনা মিটিয়ে দিয়ে কোম্পানিকে তালিকাচ্যুত করে দেব। যেসব কোম্পানি উৎপাদনে যাবে, তাদের আগামী এক মাসের মধ্যে এটিবি ও এসএমই বোর্ডে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।