সেপ্টেম্বর মাসে ১৫ দিন সুপ্রিমকোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারকরা অবকাশকালীন ছুটি না কাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে অক্টোবর মাসে ১২দিন তারা ছুটি কাটাবেন। ডিসেম্বরেও রয়েছে ১০ দিন ছুটি। শনিবার সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিদের নিয়ে ফুলকোর্ট সভা করেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। সেখানেই এই সিদ্ধান্ত হয়।
উল্লেখ্য করোনা মহামারির কারণে গত দেড় বছর ধরে সশরীরে বিচার কাজ প্রায় বন্ধ রয়েছে। তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে ভার্চুয়াল আদালতে বিচারকাজ চলছে। এ ছাড়া সরকার ঘোষিত লকডাউনে ভার্চুয়াল আদালতের কার্যক্রমও বন্ধ থাকে। সম্প্রতি নিম্ন আদালতে সশরীরে ও ভার্চুয়াল পদ্ধতীতে এবং সুপ্রিমকোর্টের উভয় বিভাগে ভার্চুয়ালি বিচারকাজ শুরু হয়েছে। বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীদের করোনাকালীন ক্ষতি পুষিয়ে নিতে গত ১৯ আগস্ট সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষে প্রধান বিচারপতির কাছে এক চিঠিতে ২০২১ সালের সব অবকাশকালীন/ঐচ্ছিক ছুটি বাতিল ও পরবর্তী বছরগুলোতে ছুটি কমিয়ে আনার অনুরোধ জানানো হয়েছিল।
শনিবার সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবরের দেয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত ফুলকোর্ট সভায় বিচারপতিরা সুপ্রিম কোর্টের চলতি বর্ষপঞ্জির সেপ্টেম্বর মাসের পূর্ব নির্ধারিত অবকাশকালীন ছুটি ভোগ না করে বিচারকাজ পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সর্বসম্মতিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
সুপ্রিমকোর্টের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটি বাদে চলতি বছর আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ২৭ কার্যদিবস অবকাশকালীন ছুটি রয়েছে। এর মধ্যে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছুটি ছিল ১৫ কার্যদিবস। আর ১২ কার্যদিবস অবকাশকালীন ছুটি রয়েছে অক্টোবরে। ডিসেম্বরে রয়েছে আরও ১০ দিন। শনিবারের ফুল কোর্ট সভায় ডিসেম্বরের ছুটির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয় নি। আর নিম্ন আদালতের (দেওয়ানী আদালতসমূহ) ২ ডিসেম্বর হতে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বন্ধ থাকে। এবারও সেটা বন্ধ থাকবে কী না এ নিয়েও সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি।
প্রধান বিচারপতিকে চিঠি:
করোনাকালের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ২০২১ সালের সব অবকাশকালীন/ঐচ্ছিক ছুটি বাতিল ও পরবর্তী বছরগুলোতে ছুটি কমিয়ে আনার অনুরোধ জানিয়ে গত ১৯ আগষ্ট প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি। এতে বলা হয়েছিল, বৈশ্বিক মহামারি করোনার প্রভাবে সুপ্রিম কোর্টসহ দেশের সব আদালতের বিচারিক কার্যক্রম দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় ৫ এপ্রিল, ২০২১ থেকে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়ে আসছিল। দেশব্যাপী জারি লকডাউন শিথিল হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে গত ১১ আগস্ট, ২০২১ থেকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের আদালতগুলো পরিচালিত হচ্ছে। করোনাকালে দীর্ঘদিন সুপ্রিম কোর্ট বন্ধ থাকলেও সরকারি অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বিশেষত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রম বন্ধ ছিল না। ফলে লকডাউনেও বিচার প্রার্থী জনগণ পুলিশি হয়রানি ও অনেকাংশে প্রশাসনিক নিগ্রহের শিকার হয়েছেন। কিন্তু দেশব্যাপী আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বিচার প্রার্থীরা আইন-আদালতে আশ্রয় লাভের সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
দীর্ঘদিন দেশব্যাপী আদালত বন্ধ/সীমিত পরিসরে চালু থাকায় শুধুমাত্র ন্যায় বিচারই লঙ্ঘিত হয়নি, অনিষ্পন্ন মামলার সংখ্যাও বেড়েছে। এ পরিস্থিতিতে অত্র সমিতি মনে করে, ২০২১ সালের বাকী সময়ের ক্যালেন্ডারভুক্ত সব অবকাশকালীন ঐচ্ছিক ছুটি বাতিল করে এবং পরবর্তী বছরগুলোর ছুটি কমিয়ে এনে এ ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেয়া সম্ভব।
চিঠিতে বলা হয়, গত বছর করোনাকালের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অত্র সমিতির পক্ষ থেকে ৮ জুলাই প্রধানবিচারপতি বরাবর পাঠানো এক আবেদনে বছরের বাকী ছুটি বাতিলের অনুরোধ জানানো হয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৬ আগস্ট, ২০২০ তারিখে অনুষ্ঠিত সুপ্রিম কোর্টের ফুল কোর্ট সভায় বছরের বাকি ছুটি বাতিলের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় (বিজ্ঞপ্তি নং-৩১৯)। এ সিদ্ধান্ত বিজ্ঞ আইনজীবী, বিচার প্রার্থী মানুষ ও সর্ব মহলে প্রসংসিত হয়েছিল। এবারও সবাই অনুরূপ সিদ্ধান্ত প্রত্যাশা করে।
উপরোক্ত অবস্থাধীনে করোনাকালের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে দেশের সব আদালতের জন্য প্রযোজ্য ২০২১ সালের বাকি সময়ের সব অবকাশকালীন/ঐচ্ছিক ছুটি বাতিল ও পরবর্তী বছরগুলোতে ছুটি কমিয়ে আনার জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।