ঢাকা   বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১   দুপুর ১:৪৪ 

সর্বশেষ সংবাদ

গাড়ি চোর চক্রের ৫ সদস্য গ্রেফতার; ৩ বছরে শতাধিক গাড়ি চুরি

আন্ত:জেলা গাড়ি চোর চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব। এই চক্রটি মুহূর্তেই যেকোনো গাড়ির লক ভাঙা কিংবা বিকল্প চাবি ব্যবহার করে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চুরি করে সটকে পড়ে। এরা এতোই দক্ষ যে গাড়ি শনাক্তের জিপিএস ট্র্যাকিং ডিভাইসও বিকল করে গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যায়। এরপর গাড়ির মালিককে ফোন করে অর্থ আদায় কিংবা গাড়ি বিক্রি করে দেয় চক্রটি।
চক্রের সদস্যরা এতটাই ধূর্ত যে, গ্রেপ্তার এড়াতে তারা অ্যানড্রয়েড মোবাইলের পরিবর্তে ব্যবহার করে ফিচার বাটন মোবাইল ফোন। একটি মোবাইল ফোন ব্যবহার করে সর্বোচ্চ পাঁচ দিন। এই পাঁচ দিন রাতে ঘুমাতে যাবার আগে মোবাইলগুলো রেখে আসে নিজেদের থেকে এক কিলোমিটার দূরে। এই পাঁচজনের মধ্যে তিনজন কারাগারে বসেই গাড়ি চুরির ছক কষে; এরপর কারাগার থেকে বেরিয়ে তারা শুরু করে একের পর চুরি।

বুধবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৪-এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক।
তিনি জানান, একটি দুটি নয়, জিপিএস বিকল করে গত তিন বছরে শতাধিক গাড়ি চুরি করেছে সংঘবদ্ধ এই চক্রের সদস্যরা। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। মঙ্গলবার দিবাগত রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত রাজধানীর দারুস সালামের বেরিবাধ এলাকা থেকে গাড়ি চুরি চক্রের ওই পাঁচ সদস্যকে আটক করেছে র‌্যাব-৪।
আটককৃতরা হলেন—মো. সোহেল, সাগর, সাকিব হোসেন, হাসানও মো. কামরুজ্জামান। এ সময় তাদের কাছ থেকে চারটি পিকআপ, সাতটি টায়ার রিং, দুটি টায়ার, একটি টুলস বক্স, একটি চাবির ছড়া ও সাতটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
মোজাম্মেল হক জানান, আটক সংঘবদ্ধ চক্রটি পরস্পরের যোগসাজশে গত তিন বছর ধরে রাজধানী ও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মিনি পিকআপ চুরি করে আসছিল। আটক সোহেল ও সাগর সম্পর্কে আপন ভাই। তারা ঢাকার একটি হাইস্কুল ও নারায়ণগঞ্জের একটি কলেজে পড়াশোনা করতেন। তারা উভয়ই মাদকাসক্ত। পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে ও মাদকের টাকা জোগাড় করতেই গাড়ি চুরি শুরু করেন তারা। বিশেষ করে সোহেলের গাড়ি চালানোর দক্ষতা থাকায় পিকআপ গাড়ির লক ভাঙা ও যেকোনো চাবি দিয়ে গাড়ি স্টার্ট করার বিষয়ে তিনি অভিজ্ঞ। এছাড়াও গাড়িতে থাকা ট্র্যাকিং ডিভাইস দ্রুত শনাক্ত করে অকেজো করে দিতে সক্ষম সাগর।
ডিআইজি মোজাম্মেল হক বলেন, ‘সোহেল ও সাগর গত বছর গাড়ি চুরি মামলায় কুমিল্লায় কারাগারে ছিলেন। সেখানে থাকা অবস্থায় তাদের সঙ্গে মাদক মামলায় গ্রেফতার সাকিবের সঙ্গে পরিচয় হয়। পরে তারা জেল থেকে ছাড়া পেয়ে হাসান ও কামরুজ্জামানকে নিয়ে গাড়ি চুরির চক্র গড়ে তোলে। পার্কিংয়ে থাকা পিকআপই তারা বেশি চুরি করত। ড্রাইভার বা মালিকের অনুপস্থিতিতে সুবিধামতো সময়ে বিশেষ কৌশলে গাড়ির লক ভেঙে ও বিশেষ ধরনের মাস্টার চাবি দিয়ে স্টার্ট করে গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যেত তারা। এছাড়াও মাদকসেবী ড্রাইভারের সঙ্গে সখ্যতা তৈরি করে পিকআপ ভ্যান চুরি করতে নিয়মিত উদ্বুদ্ধ করতো। এজন্য গাড়ি চুরি করে মালিকের কাছ থেকে আদায় করা টাকার একটি অংশ ড্রাইভারকে দিত তারা। এর বাইরে চালকদেরকে বিভিন্ন খাবারের সঙ্গে চেতনানাশক প্রয়োগ করে অজ্ঞান করে পিকআপ নিয়ে পালিয়ে যেত তারা। এছাড়াও চোরাই গাড়ির মালিককে ফোন দিয়ে গাড়ি ফিরিয়ে দেয়ার বিনিময়ে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করত।’
তিনি আরও বলেন, ‘এর বাইরে চোরাই গাড়ির রঙ পরিবর্তন করে ভুয়া নম্বর-প্লেট লাগিয়ে কম দামে সেগুলো বিক্রি করে দিত। এই দুই প্রক্রিয়ায় ব্যর্থ হলে গাড়ির যন্ত্রাংশ খুলে বিক্রি করত তারা।’ তাদের অন্য সহযোগীদের আটকের চেষ্টা চলছে বলেও র‌্যাব-৪-এর অধিনায়ক জানান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সবচেয়ে আলোচিত