ঢাকা   শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১   রাত ৪:৩৫ 

সর্বশেষ সংবাদ

কারাগারে বায়োমেট্রিক ডেটা ব্যবস্থাপনা চালু করতে কেনো নির্দেশ দেওয়া হবে না, জানতে চেয়েছে হাই কোর্ট

কয়েদি শনাক্তে অঙুলের ছাপ, হাতের তালুর ছাপ, চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি যুক্ত করে দেশের কারাগারগুলোতে বায়োমেট্রিক ডেটা ব্যবস্থাপনা চালু করতে কেনো নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়েছে হাই কোর্ট।
বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমানের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ সোমবার এ আদেশ দেয়।
দুই সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব ও কারা মহাপরিদর্শককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. বশির উল্লাহ।
চট্টগ্রামে এক হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজায় দণ্ডিত কুলসুম আক্তার ওরফে কুলসুমীর পরিবর্তে মিনু আক্তার নামের এক বিধবার প্রায় তিনবছর সাজা খাটার মামলার শুনানিতে সোমবার এই রুল আসে।
তিন সন্তানের ভরণ-পোষণের আশ্বাসে অন্যের হয়ে সাজা খাটতে রাজি হয়েছিলেন মিনু আক্তার। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ না হওয়ায় তিনি কারা কর্তৃপক্ষের কাছে সব ঘটনা খুলে বলেন। পরে হাই কোর্টের আদেশে গত ৭ জুন চট্টগ্রাম কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।
হাই কোর্টের সেই আদেশে কুলসুম আক্তার ওরফে কুলসুমীকেও দ্রুত গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তাছাড়া বিচারিক আদালতে কুলসুমীর পরিবর্তে মিনু আক্তারের আত্মসমর্পণ এবং পরে বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে কুলসুমীর আপিল দায়েরের প্রক্রিয়ায় প্রতরণার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে কিনা, তার ব্যাখ্যা চাওয়া হয় সংশ্লিষ্ট তিন আইনজীবী ও এক আইনজীবী সহকারীর কাছে।
তারা হলেন, আইনজীবী এম এ নাসের, নুরুল আনোয়ার, বিবেকানন্দ এবং আইনজীবীর সহকারী সৌরভ।
এর মধ্যে নুরুল আনোয়ার চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির‌্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর।
আদেশ অনুযায়ী তিন আইনজীবী ও আইনজীবীর সহকারী সোমবার আদালতে হাজির হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে ব্যাখ্যা দাখিল করে।
তাদের আইনজীবী ছিলেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল।
ঘটনার পূর্বাপর
মোবাইল ফোন নিয়ে কথা-কাটাকাটির জেরে ২০০৬ সালের ৯ জুলাই চট্টগ্রাম নগরের রহমতগঞ্জ এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় পোশাককর্মী কোহিনুর আক্তার ওরফে বেবিকে হত্যা করা হয়।
ওই ঘটনায় কতোয়ালি থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততার অভিযোগে ওই বছরের ২৬ অক্টোবর কুলসুম আক্তার ওরফে কুলসুমীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পরে ২০০৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি কুলসুমীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। কিন্তু তার পরের বছর, অর্থাৎ ২০০৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি কুলসুমী জামিনে বের হয়ে আসেন।
কুলসুমী জামিন পাওয়ার প্রায় আট বছর পর ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত এ মামলার রায় দেয়। রায়ে কুলসুমীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সেই সাথে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
রায়ের দিন কুলসুমী আদালতে অনুপস্থিত থাকায় আদালত তার বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানাসহ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
এরপর ২০১৮ সালের ১২ জুন কুলসুমী সেজে মিনু আক্তার সংশ্লিষ্ট আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আদালত তাকে কারাগারে পাঠায়।
২০১৯ সালের ২৩ কুলসুম আক্তার ওরফে কুলসুমী রায়ের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আপিল করেন। ওই বছরের ৩০ এপ্রিল হাই কোর্ট আপিল গ্রহণ করে। পরে দণ্ডিত কুলসুমী জামিন আবেদন করলে চলতি বছর ১১ ফেব্রুয়ারি হাই কোর্ট তার জামিন আবেদনটি বাতিল করে দেয়।
এদিকে গত ২১ মার্চ চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার চট্টগ্রামে জজ আদালতকে চিঠি দিয়ে জানান, কারাগারে থাকা নারী দণ্ডিত কুলসুম আক্তার ওরফে কুলসুমী নন।
এরপর ২২ মার্চ আদালত কারাগারের নিবন্ধন দেখে হাজতী আসামি কুলসুমী ও সাজাভোগকারীর মধ্যে অমিল খুঁজে পায়। তখন আদালত কারাগারের নিবন্ধনসহ সংশ্লিষ্ট কিছু নথি হাই কোর্টে কুলসুমীর করা আপিলের সাথে যুক্ত করার জন্য পাঠায়।
এ ঘটনা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ পেলে আইনজীবী মো. শিশির মনির তা আপিল সংশ্লিষ্ট হাই কোর্ট বেঞ্চের নজরে আনেন। পরে ১ এপ্রিল এ বিষয়ে শুনানির পর ৫ এপ্রিল আদেশের জন্য রাখে।
কিন্তু আদেশের আগে এই বেঞ্চের এখতিয়ার পরিবর্তন হলে তা হাই কোর্টের এই বেঞ্চে (যে বেঞ্চ থেকে আদেশ হল) উপস্থাপন করা হয়। দুইদিন শুনানির পর গত ৭ মার্চ আদেশ দেয় উচ্চ আদালত।
শুনানিতে আইনজীবী শিশির মনির বলেন, “কুলসুমীর পরিবর্তে মিনু আক্তারের জেল খাটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি সমাজের নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়।”
শুনানিতে তিনি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে আদালতে প্রকৃত আসামির পরিবর্তে অন্য ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের পরিসংখ্যান তুল ধরেন।
সেখানে তিনি ২০১৯ সালের ২২ ডিসেম্বর থেকে গত বছর ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ ধরনের ২৬টি ঘটনা তুলে ধরেন।
এ আইনজীবী সেদিন দাবি করেন, আসামি শনাক্তে উন্নত ব্যবস্থার ঘাটতি এবং তদন্তকারী সংস্থার অবহেলার কারণে প্রকৃত আসামির পরিবর্তে নিরাপরাধ বা অন্য ব্যক্তিরা এ ধরনের হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সবচেয়ে আলোচিত