পাঁচ দিন আগে (১ জুন) রাজধানীর অদূরে গাজীপুরের টঙ্গির আরিচপুর এলাকায় একটি ফুচকার দোকানে খেতে আসেন টঙ্গির আতঙ্ক কিশোর গ্যাং ডি কোম্পানির কয়েকজন সদস্য। সে সময় ওই ফুচকা দোকানের সব কটি চেয়ারে অন্য লোকজন বসা ছিলেন। তখন ডি কোম্পানির সদস্যরা চেয়ার ছেড়ে দিতে বলেন। চেয়ার ছেড়ে না দেওয়ায় অতর্কিত তুহিন আহম্মেদ ও তুষার আহম্মেদকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেন তারা। এ ঘটনায় তুহিন আহম্মেদ টঙ্গী পূর্ব থানায় ডি কোম্পানির সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
মামলা করার পরদিন ৩ জুন ডি কোম্পানির সদস্যরা আরিচপুর এলাকার একটি দর্জি দোকানে ব্যাপক ভাঙচুর চালান। আরজু মিয়া নামের এক ব্যক্তিসহ তিনজনকে কুপিয়ে জখম করেন তারা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ গণমাধ্যমে এই খবর আসার পর র্যাব–১ গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে।
র্যাব গোয়েন্দাদের তদন্তে উঠে আসে, গাজীপুরের টঙ্গী এলাকার মুর্তিমান আতঙ্ক ডি কোম্পানির কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্বে দিচ্ছেন রাজিব চৌধুরী। পাঁচ বছর আগে ফেসবুকে এই ডি কোম্পানি নামের গ্যাংয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে এই গ্যাংয়ের সদস্যসংখ্যা ৫০। তাদের বয়স ১৮ বছর থেকে ২৫ বছর। এলাকার মাদক, ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজিসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছেন ডি কোম্পানির সদস্যরা। গ্রেপ্তার ডি কোম্পানির ১২ জন হলেন রাজিব চৌধুরী বাপ্পী ওরফে লন্ডন বাপ্পী (৩৫), মইন আহমেদ নীরব ওরফে ডন নীরব (২৪), তানভীর হোসেন ওরফে ব্যাটারি তানভীর (২৪), পারভেজ ওরফে ছোট পারভেজ (১৯), তুহিন ওরফে তারকাঁটা তুহিন (২১), রাজিব আহমেদ নীরব (৩০), সাইফুল ইসলাম ওরফে শাওন (২৩), রবিউল হাসান (২০), শাকিল ওরফে বাঘা শাকিল (২৮), ইয়াছিন আরাফাত ওরফে বিস্কুট ইয়াছিন (১৮), মাহফুজুর রহমান ফাহিম (২২) ও ইয়াছিন মিয়া (১৯)।
টঙ্গী পূর্ব থানার একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় শনিবার রাজিব চৌধুরী বাপ্পী ওরফে লন্ডন বাপ্পীসহ ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তারা সকলেই টঙ্গীর কিশোর গ্যাং ‘ডেয়ারিং কোম্পানি’ বা ‘ডি কোম্পানির’ সদস্য। এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিল তারা। তাদের ভয়ে কেউ মুখ খুলত না। রোববার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র্যাব জানায় কিশোরগ্যাং ‘ডি কোম্পানির’ প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন লন্ডনে লেখাপড়া করা রাজিব চৌধুরী বাপ্পী ওরফে লন্ডন বাপ্পী।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, চার বছর আগে অস্ত্রসহ র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন টঙ্গীর রাজিব চৌধুরী বাপ্পী। ছয় মাসের মাথায় জামিনে বেরিয়ে আবার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন রাজিব। পাঁচ বছর আগে শুরু হওয়া টঙ্গীর কিশোর গ্যাং ‘ডেয়ারিং কোম্পানি’ বা ‘ডি কোম্পানির’ প্রধান পৃষ্ঠপোষক তিনি। প্রতি মাসে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে দুই থেকে তিন লাখ টাকা আসত রাজিবের হাতে। প্রতি সপ্তাহে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের ৩০০-৫০০ টাকা করে দিতেন তিনি।
র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার ১২ জনের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। প্রধান আসামি রাজিব চৌধুরীর গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী।
র্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন বলেন, বর্তমানে উঠতি বয়সের ছেলেদের ক্ষমতার দাপট দেখানো নিয়ে বিভিন্ন কিশোর গ্যাংয়ের মধ্যে মারামারি আলোচিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা এলাকায় নিজেদের অস্তিত্ব জাহির করার জন্য উচ্চ শব্দে গান বাজিয়ে দল বেঁধে ঘুরে বেড়ায়। বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালায়। ছোটখাটো বিষয় নিয়ে সাধারণ মানুষের ওপর চড়াও হয়ে খুনোখুনিও করে।
র্যাব আগে থেকে কিশোর গ্যাং সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। বর্তমানে সারা দেশে কিশোর গ্যাং সদস্যদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট র্যাব কোম্পানি এসব কিশোর গ্যাং সদস্যদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে অভিযান চালাবে। বাংলাদেশে কোনো কিশোর গ্যাং থাকবে না। যেসব ব্যক্তি কিশোর গ্যাংকে প্রশ্রয় দেবে এবং যারা সদস্য হবে, তাদের প্রত্যেককে আটক করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আবদুল মোত্তাকিম, র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের সহকারী পরিচালক এএসপি আ ন ম ইমরান খান উপস্থিত ছিলেন।