সৌদি আরবে বাংলাদেশি গৃহকর্মী আবিরন বেগম হত্যাকাণ্ডে গৃহকত্রীর মৃত্যুদণ্ড এবং তার স্বামী-সন্তানের কারাদণ্ড হয়েছে।
রাজধানী রিয়াদের অপরাধ আদালত রোববার আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করেছে বলে সোমবার প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, “মামলার প্রধান আসামি গৃহকত্রী আয়েশা আল জিজানির বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃত এবং সুনির্দিষ্টভাবে হত্যাকাণ্ড সংঘটনের দায়ে আদালত ‘কেসাস’ (জানের বদলে জান) এর রায় প্রদান করেছে।”
অপর দুই আসামির একজন গৃহস্বামী বাসেম সালেমকে তিন বছর দুই মাস কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত। তার বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডের আলামত ধ্বংস, গৃহকর্মীকে নিজ বাসার বাইরে অবৈধভাবে কাজে পাঠানো এবং গৃহকর্মীর চিকিৎসার ব্যবস্থা না করার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।
একইসঙ্গে তাকে ৫০ হাজার সৌদি রিয়াল জরিমানা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়।
মামলার আরেক আসামি তাদের সন্তান ওয়ালিদ বাসেদ সালেমকে সাত মাস কিশোর সংশোধনাগার কেন্দ্রে কারাভোগের সাজা দিয়েছে আদালত।
তার বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণের প্রমাণ না মিললেও আবিরন বেগমকে বিভিন্নভাবে অসহযোগিতার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে আদেশে বলেছেন বিচারক।
ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান জানান, খুলনার পাইকগাছার আবিরন ঢাকার একটি রিক্রুটিংএজেন্সির মাধ্যমে ২০১৭ সালে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন। ২০১৯ সালের ২৪ মার্চ তাকে হত্যা করা হয়।
দীর্ঘ দিনেও পরিবার আবিরনের মরদেহ ফেরত না পাওয়ার মধ্যে ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির সহায়তায় ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মাধ্যমে ২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর তার মরদেহ দেশে আনা হয়।
তিনি জানান, মরদেহের সঙ্গে থাকা আবিরনের মৃত্যু সনদে মৃত্যুর কারণের জায়গায় লেখা ছিল মার্ডার (হত্যা)। ঘটনা অনুসন্ধানে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনও একটি কমিটি করে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করেছিল।
১৬ ডিসেম্বর মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার কাজ শুরুর প্রায় দুই মাস পর এই রায় এলো।
আবিরনের পরিবারের পক্ষে তার বোন রেশমা খাতুনের স্বামী এস এম আইয়ুব আলী সৌদি আরবে মামলার খোঁজ-খবর রাখছিলেন।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আবিরনকে শুরু থেকেই নির্যাতন করা হয়। মরদেহ যখন দেশে আসে, তা এতটাই বীভৎস ছিল যে দেখার মতো ছিল না।
“আমরা খুবই খুশি যে, আমরা সন্তোষজনক রায় পেয়েছি।”
সরকারসহ সবাইকে ধন্যবাদ দেওয়ার পাশাপাশি আবিরনের ঘটনায় দেশে হওয়া মামলার দ্রুত নিষ্পত্তিরও দাবি জানিয়েছেন তিনি।