বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর পদে থাকার মেয়াদ সাতষট্টি বছর করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত আইন সংশোধনের জন্য বিল পাস হয়েছে জাতীয় সংসদে।
এর ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বর্তমান গভর্নর ফজলে কবিরকে আরও দুই বছর ওই পদে রাখতে সরকারের আর কোনো বাধা থাকছে না। ফজলে কবিরের বয়স ৬৫ বছর হওয়ায় গত ২ জুলাই তার মেয়াদ শেষ হয়।
অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামালের পক্ষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ‘বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল-২০২০’ পাসের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
এর আগে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বিলের ওপর দেওয়া জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি করেন।
বিলটির বিষয়ে জাতীয় পার্টির ও বিএনপির সংসদ সদস্যরা আপত্তি জানান। তারা বলেন, কোন একজন ব্যক্তির জন্য এমন আইন করা উচিত নয়।
খসড়া আইনটি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, “একজনের জন্য এই আইন করা হচ্ছে। যোগ্য লোককে নিয়োগের পথ বন্ধ করা হচ্ছে। অর্থাৎ অন্য যারা আছেন তাদের অযোগ্য মনে করছি।“
জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, “গভর্নর পদে বয়স ৬৭ করা হলে এখন সিভিল সার্ভিসের সবাই চাইবে তাদেরও বয়সসীমা বাড়ানো হোক। সরকারের এ বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করা উচিত।
“আরেকটা কথা, যোগ্য লোক হলেই ভালো গভর্নর হবেন এমন না। একজন গভর্নরের সময়ে রিজার্ভ চুরি হয়েছিল। এই গভর্নর কী সেই টাকা ফেরত এনেছেন? ঋণ খেলাপিদের বিষয়ে তিনি কী পদক্ষেপ নিয়েছেন আমরা জানি না। একজন ব্যক্তির জন্য এই আইন করা হলে তা ঠিক নয়। “
এসব বক্তব্যের জবাবে অর্থমন্ত্রীর পক্ষে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, সরকার কোনো বক্তির জন্য নয়। গভর্নর পদের জন্য আইন করছে।
“সংসদ সদস্যরা অনেক যুক্তিসঙ্গত কথা বলছেন। সবচেয়ে বড় যুক্তি বাস্তবতা। সেই বাস্তবতার জায়গা থেকে এই আইন করা হচ্ছে।“
পরে সংশোধনী প্রস্তাব তোলার সময় বিএনপির হারুনুর রশীদ, “আমরা দেখত চাই এই আইন পাস হওয়ার পর নতুন কোন ব্যক্তিকে গভর্নর পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।“
এর জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক শক্তিশালী করতে আইনটি করা প্রয়োজন। কোনো ব্যক্তির জন্য এটা হচ্ছে না। প্রয়োজনের জন্য করা হয়েছে। সামনে কেউ যদি মনে করেন ৭০ করবেন, তা করতে পারেন।“
ফজলে কবিরকে গভর্নর রাখতে আইন সংশোধন হচ্ছে
অর্থমন্ত্রীর পক্ষে পরিকল্পনামন্ত্রীই বুধবার ১৯৭২ সালের ‘দ্যা বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার’ সংশোধন করতে সংসদে বিল তোলেন।
সংসদে কোনো বিল উত্থাপনের পর সাধারণত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী বিলটি সংসদীয় কমিটিতে পাঠান। তবে এই বিলের ক্ষেত্রে সেটি হয়নি।
পাস হওয়া বিলে বলা হয়েছে, ৬৭ বছর বয়স পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর থাকা যাবে, বিদ্যমান আইনে যা ৬৫ বছর ছিল।
বিদ্যমান আইনে গভর্নর পদে ফজলে কবিরের মেয়াদ বৃদ্ধির সুযোগ ছিল না। কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারীর এই সময়ে ফজলে কবিরকে আরও দুই বছর রাখতে চায় সরকার। মূলত সে কারণেই আইন সংশোধনের প্রয়োজন হল।
গত ২ জুলাই ছিল ফজলে কবিরের শেষ কর্মদিবস। ৬৫ বছর পূর্ণ হওয়ায় তাকে পুনঃনিয়োগ দিতে পারেনি সরকার।
আইনটি করার উদ্যোগ নেওয়া সময় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, সরকারের ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজগুলোর বাস্তবায়ন নির্বিঘ্ন করতেই ফজলে কবিরকে আরও কিছু সময়ের জন্য চায় সরকার।
আর খসড়া আইনের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, “দেশের রাজস্ব নীতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কার্যকর মুদ্রানীতি প্রণয়ন, মুদ্রা সরবরাহ ও ব্যাংক ঋণ ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ, মুদ্রা-মান সংরক্ষণ, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সঙ্গে সমন্বয় প্রভৃতি বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
“দেশের সুষ্ঠু আর্থিক ব্যবস্থাপনার স্বার্থে এই প্রতিষ্ঠানের কার্যকর ও উন্নততর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে উক্ত-প্রতিষ্ঠান প্রধানের প্রাজ্ঞতা, বিচক্ষণতা, কর্মদক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও নেতৃত্ববাচক গুণাবলি প্রাতিষ্ঠানিক সাফল্যের মূল নিয়ামক শক্তি বিবেচনায় উক্ত পদে যোগ্যতা ও উপযুক্ত ব্যক্তিকে বিদ্যমান বয়সসীমা অপেক্ষা অধিকতর বয়সে নিয়োগের সুযোগ রাখা কিংবা প্রয়োজনবোধে উক্ত পদে সমাসীন ব্যক্তিকে বিদ্যমান বয়সসীমা অতিক্রমণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্যতা অনুসারে পুনর্নিয়োগে প্রদান কিংবা উক্ত ব্যক্তির নিয়োগের নিরবচ্ছিন্ন ধারাবাহিকতা বজায়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করা সমীচীন।”