ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১   সকাল ১১:৫০ 

সর্বশেষ সংবাদ

হলি আর্টিজান মামলা: হাই কোর্টে শুনানি শেষের অপেক্ষা

ঢাকার হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার মামলায় সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর সাতজনের ফাঁসির রায় দেয়।
বিচারিক আদালতের রায়ের পর সাড়ে তিন বছর গড়ালেও হাই কোর্টে আসামিদের আপিল শুনানি এখনও শেষ হয়নি।
তবে রাষ্ট্রপক্ষ আশা করছে, চলতি জুলাই মাসে সম্ভব না হলেও অগাস্টের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে শুনানি শেষ হতে পারে।
নজিরবিহীন ওই হামলার প্রায় সাড়ে তিন বছর পর ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল সাতজনের ফাঁসির রায় দেয় এবং একজন খালাস পায়।
দণ্ডিত সাতজন হলেন- জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন ওরফে র‌্যাশ, আব্দুস সবুর খান, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, হাদিসুর রহমান, শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ও মামুনুর রশিদ রিপন। তারা সবাই কারাগারে আছেন।
নিয়ম অনুযায়ী ওই রায় কার্যকরের অনুমতি চেয়ে হাই কোর্টে ডেথ রেফারেন্স আকারে নথি পাঠানো হয়। দণ্ডিত আসামিদের মধ্যে চারজন আপিল করেন, এছাড়া তিনটি জেল আপিল হয়।
মামলাটির বিচারে গত জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে একটি বেঞ্চ গঠন করে দেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
সেই বেঞ্চে গত ৩ থেকে ১৮ মে পর্যন্ত চারটি তারিখে শুনানি হয়েছে। চলতি মাসের শেষ দিকে শুনানির পরবর্তী তারিখ নির্ধারিত আছে বলে জানান ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ।
রাষ্ট্রপক্ষে এ মামলার শুনানিতে অংশ নেওয়া এই কৌঁসুলি বলেন, ইতিমধ্যে মামলার পেপারবুক (রায়সহ যাবতীয় নথি) থেকে পড়ে শোনানো শেষ হয়েছে। দণ্ডিত তিনজনের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী দেয়া হয়েছে। আসামিদের একজনের পক্ষে শুনানিও শেষ হয়েছে।
“আসামিপক্ষের আইনজীবীদের যুক্তি খণ্ডনের পর আবারো রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা শুনানি করবেন। এ মাসে না পারলেও আসামি মাসের শুরুতে শুনানি শেষ হয়ে যাবে বলে আশা করা যায়।”
বাংলাদেশের ইতিহাসে ভয়াবহতম জঙ্গি হামলার ঘটনাটি ঘটেছিল ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে।
পাঁচ তরুণ জঙ্গি রোজার ঈদের এক সপ্তাহ আগে পিস্তল, সাব মেশিনগান আর ধারালো অস্ত্র হাতে ঢুকে পড়েছিল সেই রেস্তোরাঁয়।
তারা জবাই ও গুলি চালিয়ে ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে হত্যা করে। হামলা ঠেকাতে গিয়ে নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তা। পরে কমান্ডো অভিযানে ওই জঙ্গিদের হত্যা করা হয়।

গুলশান হামলার পর জঙ্গি দমন অভিযান গতি পায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারাবাহিক অভিযানে অনেক জঙ্গি গ্রেপ্তার হওয়ার পাশাপাশি শীর্ষনেতাদের প্রায় সবাই মারা যান।
ওই হামলার ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলায় রায়ে ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর আদালত সাত জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। তবে একজন খালাস পান রায়ে।
রায় ঘোষণার পর নিয়ম অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য মামলার ডেথ রেফারেন্স ওই বছরের ৫ ডিসেম্বর বিচারিক আদালত থেকে হাই কোর্টে আসে। হাই কোর্টের ডেসপাস (আদান-প্রদান) শাখা সেগুলো গ্রহণ করে পাঠায় ডেথ রেফারেন্স শাখায়।
পেপারবুক শাখা সেসব নথিপত্র যাচাই-বাছাই করে নথিসহ রায়ের অনুলিপি ও আনুসঙ্গিক নথিপত্র পেপারবুক তৈরির জন্য ফেব্রুয়ারিতে বিজি প্রেসে পাঠিয়ে দেয়।
পাঁচ মাসের মাথায় ২০২০ সালের ১৮ অগাস্ট সে পেপারবুক বিজি প্রেস থেকে হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় জমা পড়ে। ততদিনে দেশ করোনাভাইরাস মহামারীর কবলে পড়ে। শুনানি শুরু হতে ২০২৩ সালের মে মাস পর্যন্ত সময় লেগে যায়।
ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান রায়ে নব্য জেএমবির সাত সদস্যকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ৬(২)(অ) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড করেছিলেন। আরও দুটি ধারায় তাদের কয়েকজনকে দেয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড।
মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আদেশ দিয়ে বিচারক তার রায়ে বলেন, হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার মধ্য দিয়ে আসামিরা ‘জঙ্গিবাদের উন্মত্ততা, নিষ্ঠুরতা ও নৃশংসতার জঘন্য বহিঃপ্রকাশ’ ঘটিয়েছে। সাজার ক্ষেত্রে তারা কোনো অনুকম্পা বা সহানুভূতি পেতে পারে না।
অপরাধে সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত না হওয়ায় এ মামলায় বিচারের মুখোমুখি করা আসামি মিজানুর রহমানকে খালাস দেয়া হয় রায়ে। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সবচেয়ে আলোচিত