জাল টাকা রাখার দায়ে বিতর্কিত সাবেক সেনা কর্মকর্তা শহীদ উদ্দিন খান এবং তার স্ত্রী ফারজানা আনজুমকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
ঢাকার অষ্টম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ সৈয়দা হাফসা ঝুমা বুধবার এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
১০ বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে রায়ে।
এ মামলার পাঁচ আসামির মধ্যে সৈয়দ আজিজুল আলী ও খোরশেদ আলম পাটোয়ারিকে খালাস দিয়েছেন বিচারক। অপর আসামি জহুরুল হক খন্দকার মামলার বিচার চলাকালেই মারা যান।
বিতর্কিত কমর্কাণ্ড ও জঙ্গী সম্পৃক্ততার কারণে কর্নেল থাকা অবস্থায় সেনাবাহিনী থেকে অবসরে পাঠানো হয় শহীদ উদ্দিন খানকে। পরে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তার কর্নেল পদবীও বাতিল করা হয়।
লন্ডনে পলাতক শহীদ খানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১৭ জানুয়ারি বারিধারার একটি ছয় তলা ভবনের তৃতীয় তলায় শহীদ উদ্দিন খানের ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে দুটি পিস্তল, ছয়টি গুলি ও দুটি শটগান এবং শোবার ঘরে ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার থেকে এক হাজার টাকার জাল নোটের তিনটি বান্ডেল উদ্ধার করে পুলিশ।
ওই ঘটনায় শহীদ উদ্দিনের বিরুদ্ধে অস্ত্র, সন্ত্রাস দমন আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়। এর মধ্যে জাল টাকা উদ্ধারের ঘটনায় ক্যান্টনমেন্ট থানায় শহীদ ও তার স্ত্রীসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক বিপ্লব কুমার শীল।
মামলার এজাহারে বলা হয়, “আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে সরকার ও রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি ও জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী কর্মকাণ্ডের ষড়যন্ত্র সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।”
তদন্ত শেষে পুলিশ কর্মকর্তা নৃপেন্দ্র কুমার ভৌমিক অভিযোগপত্র দেন। মামলার বিচারকালে রাষ্ট্রপক্ষে ২১ জন সাক্ষীর মধ্যে ১০ জনের জবানবন্দি নেয়া হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী কবির আহাম্মদ রুমী জানান, আসামিদের মধ্যে সৈয়দ আজিজুল আলী ও খোরশেদ আলম পাটোয়ারি কারাগারে ছিলেন। রায়ের সময় তাদের এজলাসে হাজির করা হয়।
এর আগে গতবছর ১০ নভেম্বর অস্ত্র আইনের মামলায় অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল শহীদ উদ্দিন খানসহ চারজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় ঢাকার আরেকটি আদালত।
আর ২০ ডিসেম্বর আয়কর ফাঁকির অভিযোগে এনবিআরের দায়ের করা মামলায় ঢাকার ১০ নম্বর বিশেষ জজ আদালত শহীদ উদ্দিন খানকে নয় বছরের কারাদণ্ড দেয়।
লন্ডনে বসে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডঃ
সাবেক সেনাকর্মকর্তা শহীদ উদ্দিন খান লন্ডনে বসে ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে রাষ্ট্র, সরকার ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নানা কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। তার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন জামাত শিবির ও জঙ্গী সম্পৃক্ত কিছু সাংবাদিক।
ইতিপূর্বে শহীদ উদ্দিন খানের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করাসহ নানা অভিযোগে তার কর্নেল পদবী বাতিল করা হয়।
একই সঙ্গে তাঁকে বরখাস্তের পরিবর্তে স্বাভাবিক অবসর গ্রহণের যে আদেশ ২০০৯ সালে দেয়া হয়েছিল, তা-ও বাতিল করা হয়।
গত ৩ মে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এই বাতিলাদেশ দেয়া হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ইতিপূর্বে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ১৪ ডিসেম্বর ২০০৯ তারিখে জারীকৃত প্রজ্ঞাপনের ছকের ৩৫ নম্বর ক্রমিকের বিএ-২৪২৮ কর্নেল মো. শহীদ উদ্দিন খাঁন, পিএসসি (অব.)-এর বরখাস্তের পরিবর্তে স্বাভাবিক অবসর সংক্রান্ত আদেশ এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ২৩ মার্চ ২০১০ তারিখে জারীকৃত প্রজ্ঞাপনের ছকের ঘ-এর ৩৫ নম্বর ক্রমিকে বর্ণিত কর্মকর্তার কর্নেল পদে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতিসহ অকালীন অবসর সংক্রান্ত আদেশ বাতিল করা হলো।’
শহীদ উদ্দিন খানের বিরুদ্ধে প্রবাসে পলাতক থাকা অবস্থায় রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। পাগলা শহীদ হিসেবে পরিচিত সাবেক এই সেনাকর্মকর্তার বিরুদ্ধে জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগও রয়েছে।
গত বছরের ২০ ডিসেম্বর আয়কর ফাঁকির মামলায় শহীদ উদ্দিন খাঁনকে ৯ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০-এর বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম এ রায় দেন। তিন অর্থবছরে ১৭ কোটি ছয় লাখ ৪০ হাজার ১০৭ টাকা আয়কর ফাঁকি দেয়ার অভিযোগে শহীদ উদ্দিন খানের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার আদালতে মামলা করেন সহকারী কর কমিশনার শেখ আলী হাসান। এই মামলায় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত ২০১০ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর শহীদ উদ্দিন খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।
এতে বলা হয়, শহীদ উদ্দিন খাঁন ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৭৪ লাখ ১৩ হাজার ৯৮৬ টাকার আয়ের তথ্য গোপন করে আয়কর ফাঁকির অপরাধ করেছেন। আর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে শহীদ উদ্দিন খানের বিরুদ্ধে ৯ কোটি ২৫ লাখ ১২ হাজার ৬০০ টাকা আয়ের তথ্য গোপন করে আয়কর ফাঁকি দেয়ার অভিযোগ আনা হয়। আর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে শহীদ উদ্দিন খানের বিরুদ্ধে সাত কোটি সাত লাখ ১৪ হাজার ২২১ টাকা আয়ের তথ্য গোপন করার অভিযোগ আনা হয়।