মানব পাচারের অভিযোগে কুয়েতে গ্রেপ্তার সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল এবং তার পরিবারের সদস্যদের ৬১৭টি বাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছে আদালত।
সেইসঙ্গে পাপুলদের ৯২টি তফসিলভুক্ত স্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করারও নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকার মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক কেএম ইমরুল কায়েশ।
অবৈধ সম্পদ অর্জন ও মানিলন্ডারিং আইনের মামলায় দুদকের করা আবেদনের শুনানি করে রোববার বিচারক এই আদেশ দেন। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
এছাড়া পল্টন থানায় পুলিশের পরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) করা অর্থ পাচার মামলাতেও পাপলু, তার প্রতিষ্ঠানসহ আটজনের ৫৩টি হিসাব জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছেন একই বিচারক।
দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস পাল।
দুদকের উপপরিচালক সালাহউদ্দিন বাদী হয়ে গত ১১ নভেম্বর পাপুলসহ চার জনের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও মানিলন্ডারিং আইনের মামলাটি দায়ের করেন।
এ মামলার অপর আসামিরা হলেন পাপুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম, শ্যালিকা জেসমিন প্রধান ও মেয়ে ওয়াফা ইসলাম।
আসামিদের বিরুদ্ধে ২ কোটি ৩১ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং ১৪৮ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ আনা হয় সেখানে।
আর সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিটের সহকারী পুলিশ সুপার আল আমিন হোসেন ২২ ডিসেম্বর পল্টন থানায় ‘মানিলন্ডারিং’ প্রতিরোধ আইনে অন্য মামলা করেন।
পাপুল ছাড়াও তার শ্যালিকা জেসমিন প্রধান, মেয়ে ওয়াফা ইসলাম, ভাই কাজী বদরুল আলম লিটন, ব্যক্তিগত কর্মচারী মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান মনির, জেসমিন প্রধানের কোম্পানি জে ডব্লিউ লীলাবালী, কাজী বদরুল আল লিটনের মালিনাধীন কোম্পানি জব ব্যাংক ইন্টারন্যাশনাল এবং এই কোম্পানির ম্যানেজার গোলাম মোস্তফা এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৫-৬জনকে সেখানে আসামি করা হয়।
এজাহারে বলা হয়, “এ মামলার আসামিরা “সংঘবদ্ধভাবে মানব পাচারের মাধ্যমে অন্যূন ৩৮ কোটি ২২ লাখ ৪০ হাজার ৫৬৭ টাকা অবৈধ আয় করেন। এই আয়ের প্রকৃত উৎস গোপনের জন্য বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর, স্থাবর বা অস্থাবর সম্পদে রূপান্তর, ভোগবিলাসে ব্যয় এবং অন্যান্য ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন মর্মে প্রাপ্ত তথ্য-প্রমাণে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়।”
লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর) আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলকে গত ৬ জুন কুয়েতের মুশরিফ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে সে দেশের পুলিশ।
মানবপাচার, অর্থপাচার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের শোষণের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে সেখানে যে মামলা হয়েছে, আগামী ২৮ জানুয়ারি তার রায় হওয়ার কথা রয়েছে।
জামিন পেলেন পাপুলের স্ত্রী-মেয়ে ঃ
এদিকে সংসদ সদস্য কাজী সহিদ ইসলাম পাপুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম ও মেয়ে ওয়াফা ইসলাম দেশে দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলায় জামিন পেয়েছেন।
রোববার দুপুরে ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ কে এম ইমরুল কায়েশের আদালতে আত্মসমর্পণ করে তারা জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিকালে তাদের জামিন দেন বিচারক।
এই দুই আসামি উচ্চ আদালতে জামিন আবেদন করেছিলেন। উচ্চ আদালত তাদের বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছিল।
তাদের আইনজীবী শ্রী প্রাণনাথ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আসামিদের নামে সুনিদিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই, আর তারা পালাবেন না।
সেলিনা সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য। তার মেয়ে ঢাকার একটি ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়েন।
লক্ষ্মীপুর-২ আসনে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পাপুল অর্থ ও মানব পাচারের অভিযোগে কুয়েতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর গত ১১ নভেম্বর তার এবং তার স্ত্রী, শ্যালিকা ও মেয়ের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।
তাতে অভিযোগ করা হয়, পাপুলের শ্যালিকা জেসমিন প্রধান দুই কোটি ৩১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৮ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন।
এছাড়া ‘কাগুজে প্রতিষ্ঠানের’ আড়ালে জেসমিন পাঁচ ব্যাংকের মাধ্যমে ২০১২ সাল থেকে ২০২০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ১৪৮ কোটি টাকা হস্তান্তর, রূপান্তর ও স্থানান্তরের মাধ্যমে মানি লন্ডারিং করেছেন বলে অভিযোগে বলা হয়।
এসব কাজে পাপুল, তার স্ত্রী ও মেয়ে সহযোগিতা করেন উল্লেখ করে তাদেরও আসামি করা হয়।
মামলায় জেসমিনের বিষয়ে বলা হয়, তিনি শিক্ষার্থী থাকাবস্থায় বোন সেলিনা ও দুলাভাই পাপুলের অবৈধ অর্জিত অর্থ মানি লন্ডারিং করে বৈধতায় রূপ দিতে ‘লিলাবালি’ নাসের একটি কাগুজে প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।
“বিভিন্ন ব্যাংকে তার প্রায় ৪৪টি হিসাব পাওয়া গেছে। যেখানে শুধুমাত্র এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকেই রয়েছে ৩৪টি এফডিআর হিসাব। আসামি শহিদ ইসলাম পাপুল এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের পরিচালক ছিলেন বিধায় এই সুবিধা গ্রহণ করতে তার কোনো বেগ পেতে হয়নি।”
পাপুলের বিরুদ্ধে অর্থপাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তদন্তের অংশ হিসেবে গত ২২ জুলাই সেলিনা ইসলাম ও জেসমিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক।
এরপর দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এর উপ-পরিচালক সালাহউদ্দিন বাদী হয়ে গত ১১ নভেম্বর মামলাটি করেন।