অগ্রীম টাকা পুরোটা পরিশোধের পরও মাসের পর মাস পণ্য ডেলিভারি না দেয়ায় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর প্রতিষ্ঠানটির মালিক সোনিয়া মেহজাবিন ও তার স্বামী মাসুকুর রহমানকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার ঢাকার এডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবুবকর সিদ্দিক এই আদেশ দেন।
প্রতিশ্রুত সময়ে পণ্য না পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে মামলা করেন একজন গ্রাহক।
সোমবার রাতে অভিযোগ দায়েরের পর মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) সকালে গুলশান থানা এটিকে মামলা হিসেবে গ্রহণ করে। মামলাটি করেছেন ই-অরেঞ্জের প্রতারণার শিকার মো. তাহেরুল ইসলাম নামে একজন গ্রাহক। থানায় উপস্থিত থেকে তার সঙ্গে সাক্ষ্য দিয়েছেন প্রতারণার শিকার আরও ৩৭ জন। মামলায় ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের মোট ১১০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
এ বিষয়ে আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আজ (মঙ্গলবার) ই-অরেঞ্জের মালিক সোনিয়া মেহজাবিন ও তার স্বামী আত্মসমর্পণ করে আইনজীবীর মাধ্যমে জামিনের জন্য আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক জামিনের আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
বাদী এজাহারে বলেন, গেল ২১ এপ্রিল পণ্য কেনার জন্য ই-অরেঞ্জে অগ্রিম টাকা দেন। তবে তারা নির্ধারিত তারিখে পণ্য সরবরাহ ও টাকাও ফেরত দেয়নি। নিজেদের ফেসবুক পেজে বার বার নোটিশ দিয়েছে এবং সময় চেয়েছে। কিন্তু ই-অরেঞ্জ পণ্য ও টাকা দেয়নি। সর্বশেষ তারা গুলশান-১ এর ১৩৬/১৩৭ নম্বর রোডের ৫/এ নম্বর ভবনে অবস্থিত ই-অরেঞ্জের অফিস থেকে পণ্য ডেলিভারির কথা বললেও তারা ডেলিভারি দেয়নি। এ ছাড়াও তারা যে বিভিন্ন আউটলেটের গিফট ভাউচার বিক্রি করেছিল, সেগুলোর টাকা আটকে রাখায় আউটলেটগুলো ভাউচারের বিপরীতে পণ্য দিচ্ছে না। আমরা এই করোনার সময় আমাদের কষ্টার্জিত অর্থ পাচ্ছি না, বরং প্রতিষ্ঠানটির মালিকানা পরিবর্তন নিয়ে নতুন নতুন তথ্য পাচ্ছি। এছাড়াও আজ পর্যন্ত তারা ভুক্তভোগীদের কোনও পণ্য ডেলিভারি না করে এক লাখ ভুক্তভোগীর প্রায় এক হাজার ১০০ কোটি টাকা প্রতারণামূলকভাবে আত্মসাৎ করেছে।
মামলায় অর্থ আত্মসাৎকারী হিসেবে যেসব আসামির নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা হলেন- মাসুকুর রহমান, আমানউল্ল্যাহ, বিথী আক্তার, কাউসার আহমেদ, সোনিয়া মেহজাবিনসহ ই-অরেঞ্জের সব মালিক।
মামলার এজাহারে উল্লেখিত আসামিদের প্রত্যেককেই ই-অরেঞ্জের মালিক বলে দাবি করা হয়েছে। মামলায় ফৌজদারি কার্যবিধি ৪২০ ও ৪০৬ ধারা উল্লেখ করা হয়েছে।
৪০৬ ধারায় ‘বিশ্বাসঘাতকতা’র অপরাধে সর্বোচ্চ ৩ বছর জেল, অর্থ জরিমানা ও উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। আর প্রতারণার ৪২০ ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি ৭ বছরের কারাদণ্ড।