গত এক মাসে দেশে প্রায় ৪০ জন মাদ্রাসার কোমলমতি শিক্ষার্থীকে বলৎকার করা হয়েছে যার মধ্যে ২ জন শিশু মৃত্যুবরণ করেছে। একজন শিশু আত্মহত্যা করেছে। বলাৎকার নিয়ে দেশের আলেমদের কোন মন্তব্য বা প্রতিবাদ আমাদের চোখে পড়েনি। নিজেদেরকে ইসলামিক দল হিসেবে দাবি করা হেফাজতে ইসলামের নেতারাও বলাৎকারের ঘটনাগুলো নিয়ে নীরব ভূমিকা পালন করেছে। এ থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় এই বলৎকারের সাথে তারাও জড়িত বা সমর্থনদাতা।
মঙ্গলবার দুপুরে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে মাদ্রাসার কোমলমতি শিক্ষার্থী বলাৎকারের বিরুদ্ধে মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ বক্তারা এসব তথ্য তুলে ধরেন। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ এই মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে।
মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো: আল মামুনের সঞ্চালনায় কর্মসূচীতে সভাপতিত্ব করেন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। বক্তব্য রাখেন শামসুল উলুম দাউদিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার মোহতামিম ক্বারী হাফেজ মাওলানা আব্দুল আহাদ, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনেট মাহমুদ ও ভাস্কর শিল্পী রাশাসহ নেতারা।
ক্বারী হাফেজ মাওলানা আব্দুল আহাদ বলেন, “বলাৎকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে আজ আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়েছি। বলাৎকার ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ হারাম। বলাৎকারকারী ও এদের সমর্থনদাতারা ইসলামের শত্রু। ধর্ষণের ন্যায় বলাৎকারের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করার জন্য সরকারের নিকট আমরা আলেম সমাজ দাবি জানাচ্ছি।”
বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো: আল মামুন বলেন, “ইসলামের প্রকৃত আদর্শ চর্চাকারী আলেম-ওলামাদের কে আমরা সবসময় সম্মান ও শ্রদ্ধা করি। কিন্তু ধর্মীয় লেবাসধারী কতিপয় ভণ্ড আলেম যারা মাদ্রাসার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বলৎকার করে যাচ্ছে এবং বলৎকারের সমর্থন দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে সবসময় প্রতিবাদ করে আসছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। আমরা মনে করি, বলাৎকারকারীরা প্রকৃতপক্ষে এজিদের বংশধর। এরা ইসলামের শত্রু। এসব ধর্ম ব্যবসায়ীরা পবিত্র মসজিদ ও মাদ্রাসাগুলোকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এরা দেশের সংবিধান ও আইন মানে না। ইবাদতের জন্য পবিত্র মসজিদ। অথচ সেই মসজিদেও এরা রাজনীতি করার চেষ্টা করছে যা সম্পূর্ণ ইসলাম বিরোধী। বাইতুল মোকাররম মসজিদসহ দেশের সকল মসজিদে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা বন্ধ করতে হবে।
মানববন্ধন থেকে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ সাত দফা দাবি জানায়৷ এগুলো হলো ঃ
১। ধর্ষণের ন্যায় বলাৎকারের অপরাধে অভিযুক্ত ও বলৎকারের সমর্থনদাতাদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করতে হবে।
২। মহানবী (সা:) কে অবমাননাকারী ও বলৎকারের সমর্থনদাতা মামুনুল হক গংদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
৩। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার লক্ষ্যে বাংলাদেশে অবিলম্বে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে এবং পবিত্র মসজিদ-মাদ্রাসাগুলোতে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা বন্ধ করতে হবে।
৪। বিভিন্ন ধর্মীয় সভা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় উস্কানিমূলক গুজব ছড়ানো ও অপপ্রচারকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
৫। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবমাননাকারীদেরকে অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে এবং দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও জেলা, উপজেলায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ করতে হবে।
৬। মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে, মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের বাক-স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে এবং মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের ওপর যৌন নিপীড়ন বন্ধে মনিটরিং সেল গঠন করে নজরদারি বাড়াতে হবে।
৭। সকল মাদ্রাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত জাতীয় সংগীত গাওয়া , জাতীয় পতাকা উত্তোলন, শহীদ মিনার নির্মাণ ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানানো বাধ্যতামূলক করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।