একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেছেন, চীনের মদদ ছাড়া পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশে গণহত্যা সংঘটিত করতে পারত না।
একাত্তরে ভারত ও চীনের ভূমিকা সম্পর্কে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি সোমবার অনলাইনে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করে। সেখানে শাহরিয়ার কবির একথা বলেন বলে নির্মূল কমিটির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধে চীনের বিতর্কিত ভূমিকা তুলে ধরে শাহরিয়ার কবির বলেন, “চীনের মদদ ছাড়া পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাংলাদেশে স্মরণকালের নৃশংস গণহত্যা কখনও সংঘটিত করতে পারত না।
“চীন কখনও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। বরং জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্য প্রাপ্তির বিরুদ্ধে বার বার ভিটো দিয়েছে। আমাদের পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে আমরা যেন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস ও জাতির পিতাকে ভুলে না যাই।”
মুক্তিযুদ্ধে ভারত সরকার ও ভারতের সাধারণ জনগণের বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন শাহরিয়ার কবির।
তিনি বলেন, “১৯৭১ সালে পাকিস্তান, চীন, আমেরিকার বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ কখনও বিজয়ী হতে পারত না যদি না শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে ভারত সরকার ও সশস্ত্র বাহিনীসহ সর্বস্তরের জনগণ আমাদের সহযোগিতা প্রদান না করত। বাংলাদেশ স্বাধীন করার জন্য ৩০ লক্ষ বাঙালিকে যেমন জীবন দিতে হয়েছে, ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর প্রায় ১৭ হাজার সৈন্যকেও তাদের জীবন উৎসর্গ করতে হয়েছে, যা বিশ্বের অন্য কোথাও জাতির স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে ঘটেনি।”
শাহরিয়ার কবির বলেন, “ভারত গণহত্যার ভিকটিম বাংলাদেশের এক কোটি মানুষকে মুক্তিযুদ্ধকালে আশ্রয় দিয়ে মানবতার চূড়ান্ত দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।”
নির্মূল কমিটির সম্মেলনে একাত্তরের যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেন বলেন, “মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধা ও নিরস্ত্র বাঙালিদের হত্যার জন্য চীনা অস্ত্র ব্যবহার করেছিল। আমার হাজার হাজার সহযোদ্ধা চীনা বুলেটের দ্বারা শহীদ হয়েছেন কিংবা আমার মতো আহত হয়ে শারীরিক পঙ্গুত্বের শিকার হয়েছেন। আমার শরীরে এখনও চীনা বুলেট রয়ে গেছে।
“অন্যদিকে আমাকে এবং আমার মতো শত শত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাকে ভারত সর্বোত্তম চিকিৎসা সেবা প্রদান করে বাঁচিয়ে তুলেছে। ভারতের কাছে আমাদের এই ঋণ কখনও অর্থ বা অন্য কিছু দিয়ে পরিমাপ করা যাবে না।”
ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, “বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বিদেশি সাহায্যের প্রয়োজন আছে। কিন্তু চীনের অর্থনৈতিক সহায়তাকে পৃথিবীতে অনেক অর্থনীতিবিদ ঋণের ফাঁদ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। অর্থনীতির বিষয়টি রাজনীতির বাইরের কোনো বিষয় নয়। আর এর সঙ্গে দুর্নীতি যুক্ত হলে সেটা একটা নতুন মাত্রা পায়।”
বাংলাদেশের অনেক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সহযোগী চীনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির উদাহরণ তুলে ধরেন তিনি।
শ্যামল দত্ত বলেন, “ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চার লেন প্রকল্প নিয়ে ২০১৮ সালে বাংলাদেশের তৎকালীন যোগাযোগ সচিব নজরুল ইসলামকে ঘুষ দিয়ে ধরা পড়েছিল চীনা কোম্পানি হারবার অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং। এই কোম্পানি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোকে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং প্রকল্পের কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য ২০ কোটি টাকা ঘুষ দিয়েছিল। সিঙ্গাপুরের জাস্ক করপোরেশনের অ্যাকাউন্টে কোকোর এই টাকা জমা হয়েছিল। এই মামলাটি এখনও দুদকে বিচারাধীন আছে।
“দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, এই ধরনের দুর্নীতিবাজ চীনা কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে এখনও কাজ করছে। বিভিন্ন দেশের অভিযোগ, চীনারা ঘুষ দিয়ে সরকারি-বেসরকারি প্রশাসন তথা রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে দুর্নীতিগ্রস্ত করে তুলছে।”
এই সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন নির্মূল কমিটির উপদেষ্টা বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, চীন বাংলাদেশের স্বাধীনতাকেই স্বীকার করেনি। সেই চীন আমাদের বন্ধু হতে পারে না।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মো. আবদুর রশীদ, মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক শফিকুর রহমান, সমাজকর্মী আরমা দত্ত, সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের মহাসচিব হারুন হাবীব, নির্মূল কমিটির চিকিৎসা সহায়তা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল, উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ, এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার নির্মূল কমটির বিভন্ন শাখার নেতারা।