প্রায় একযুগ পরে ফেনীতে গেলেন জয়নাল হাজারী। নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করলেন। আর প্রতিপক্ষকে হুমকি দিয়ে বলেছেন সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির কারণে ফেনীর মানুষ আজ অতিষ্ট। যারা ফেনীকে সন্ত্রাসের জনপদে পরিণত করেছে ফেনীর মানুষ তাদের টুকরো টুকরো করবে।
ঈদুল আজহার দিনে ফেনীর মাষ্টারপাড়াস্থ নিজ বাড়িতে কর্মী সমর্থকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে ফেনীর সন্ত্রাস-দুর্নীতি, চাঁদাবাজ ও অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদ করতে আহ্বান জানান হাজারী। পাশাপাশি আগামীতে স্থানীয় রাজনীতিতে ফের সক্রিয় হবেন বলে জানান। হাজারী আরও বলেন, ইতিমধ্যে মামলা হামলার শিকার দলের ত্যাগী নির্যাতিত নেতাকর্মীদের আগামীতে সকল সুযোগ সুবিধা দিয়ে রক্ষা করবেন।
কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য জয়নাল হাজারী আরও বলেন, ‘ছাগলনাইয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ‘সোহেল্লা’ এবং সোনাগাজী পৌরসভার মেয়র ‘খোকইন্না’ জানতে চাই আজকে ফেনী শহরের কোথায় তোরা, এখানে যারা আছে তারাই তোদেরকে টুকরো টুকরো করবে, বঙ্গবন্ধুকে ছাড়াই আমরা দেশ স্বাধীন করেছি।’
এক এগারোর পর ঢাকায় চলে আসেন ফেনী-২ আসনের সাবেক তিনবারের সংসদ সদস্য জয়নাল আবেদিন হাজারী। ঢাকায় অনেকটা নিভৃতেই কেটে যাচ্ছিল সময়। প্রায় নিস্ক্রিয় হয়ে যান এক সময়ের ফেনীর গডফাদার হিসেবে পরিচিত জয়নাল হাজারী। স্থানীয় ভাবে তার শক্ত প্রতিপক্ষ দাঁড়িয়ে যায় এবং কমতে থাকে তার প্রভাব। দীর্ঘ নীরবতা ও নিস্ক্রিয়তার পর গতবছর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা কমিটিতে স্থান দেয়া হয় তাকে। বলা যায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছায় রাজনীতিতে পুনর্জন্ম লাভ হয় জয়নাল হাজারীর।
আশাতীত পদ লাভের পর ফের রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার ঘোষাণা দেন হাজারী। এই ঘোষণা দেওয়ার একবছর পর আর এলাকা ছাড়ার প্রায় ১২ বছর পর ১ আগস্ট ঈদের দিন তিনি যান তার প্রিয়ভূমি ফেনীতে।
তার আগমনে নেতাকর্মীসহ ভক্তদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে নিজ বাড়ির মুজিব উদ্যান। তাকে নিরাপত্তা দিতে আইনশৃংখলা বাহিনীর নিরাপত্তা বেষ্টনীতে ঢাকা ছিল পুরো ফেনী শহর। গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে বসানো হয়েছিল চেকপোস্ট।
শনিবার বিকেল ৪টায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ফেনী শহরের মাষ্টারপাড়াস্থ মা-বাবার কবর জেয়ারত করেন জয়নাল হাজারী। জেয়ারত শেষে বাড়ি প্রাঙ্গণ মুজিব উদ্যানে দলীয় নেতাকর্মী ও ভক্তদের সাথে ঈদ শুভেচ্ছা ও কুশল বিনিময় করেন।
সন্ধ্যায় শহরের পাগলা মিঞার মাজার জেয়ারত শেষে যে কোনো বিশৃঙ্খলা এড়াতে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর পরামর্শে তিনি ঢাকায় ফিরে আসেন। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হকের কবর জেয়ারত করার কথা থাকলেও তা না করেই ঢাকা চলে আসেন।
এদিকে জয়নাল হাজারীর বক্তব্য নিয়ে চাপা উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে তার প্রতিপক্ষ নেতাকর্মীদের মধ্যে।
জয়নাল হাজারীর বিতর্কিত এ বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন ফেনী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও বর্তমানে ছাগলনাইয়া উপজেলা চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল। যিনি জয়নাল হাজারীর প্রতিপক্ষ বর্তমান সাংসদ নিজাম হাজারীর সমর্থক হিসেবে পরিচিত। সোহেল সাংবাদিকদের বলেন, জয়নাল হাজারীর অন্যায় অবিচারকে সমর্থন না করা এবং ছাত্ররাজনীতি করার সময় তার সাথে আপোষ না করায় আমাকে জয়নাল হাজারী দু-দফায় মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল। তার সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের কারণে ফেনীবাসীর গায়ে সন্ত্রাসের তকমা লেগেছিল, তা পুরোপুরি এখনো পরিষ্কার হয়নি। বর্তমানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় এবং ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী এমপি ফেনীকে শান্তির জনপদে রুপান্তর করেছেন ।
তিনি বলেন, শিক্ষা-দীক্ষায়, উন্নয়ন ও সংস্কৃতিতে এগিয়ে যাচ্ছে ফেনী। তার সময়ে অপরাজনীতির স্বীকার হয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ অসংখ্য মায়ের বুক খালি হয়েছিল। লাঞ্ছিত হয়েছে সাংবাদিকসহ সুশীল সমাজের লোকজন। তাকে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি উজ্জল করার জন্য উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য করেছেন। দীর্ঘ এক যুগ পর ফেনীর মাটিতে পা রেখেই তিনি আগের মতো শান্ত ফেনীকে অশান্ত ফেনী করার পায়তারা করছেন।
সোহেল বলেন, জয়নাল হাজারী নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করলেও বঙ্গবন্ধুকে ছাড়াই দেশ স্বাধীন করার ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দেয়ায় নেতাকর্মী ও দেশবাসী ক্ষুব্ধ। ফেনীকে অশান্ত করার তার দিবা-স্বপ্ন কখনো সফল হবে না।
ফেনীর রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, দীর্ঘ একযুগ পর জয়নাল হাজারী এলাকায় ফিরে আসায় ফেনীর রাজনীতি ফের অস্থিতিশীল যেমন হতে পারে তেমনি বর্তমান সাংসদ নিজাম হাজারীর জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।