ঢাকা   মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১   বিকাল ৫:০৭ 

সর্বশেষ সংবাদ

করোনায় হার্টের রোগীদের অবস্থা আরও জটিল হয়ে যেতে পারে, আশঙ্কা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের

করোনা ভাইরাসের কারণে হার্টের রোগীদের পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে। ভাইরাস সংক্রমণের ফলে হার্ট ফেলিওরেরে রোগীদের সমস্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
তবে যাঁদের অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে, তাঁরা এখন রুটিন চেকআপে যাবেন না,
দরকার হলে অনলাইন কনসালটেশনের মাধ্যমে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়ার কথা বলা হয়েছে।
এমন আশঙ্কা কথা জানিয়েছেন ভারতের অ্যাপোলো হাসপাতালের  সিনিয়র কনসালটেন্ট ইনটারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট, ডক্টর বিকাশ মজুমদার।
তিনি বলেন, দেখুন হার্টের রোগে যাঁরা ভুগছেন ওষুধ চালিয়ে যাওয়া তাঁদের খুব জরুরি। ধরুন যাঁদের স্টেন বসানো রয়েছে হার্টে তাঁদের ক্ষেত্রে তো ওষুধ অত্যাবশ্যক। তাই লকডাউনের সময়ে ওষুধের সংকট দেখা দিলে খুবই মুশকিল। তবে আমার  কী মনে হয়  জানেন, আমরা একটু বেশিই ভয় পাচ্ছি। একসঙ্গে বেশি ওষুধ কিনে ফেলছি। সেটাও এই সংকটের একটা কারণ। যদিও প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করার ব্যবস্থা সরকার করছে।
তা, যাই হোক। এই সময়ে হার্টের রোগী যাঁরা বাড়িতে রয়েছেন, যাঁদের অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে, রুটিন ভিজিটের জন্য তাঁদের এখন আর হাসপাতালে আসার প্রয়োজন নেই। মানে ধরুন, এই তিনমাস হয়ে গিয়েছে, এবার একবার ডাক্তারকে দেখিয়ে নেওয়া দরকার, এর কিন্তু কোনও দরকার নেই এখন। সে হাসপাতাল হলেও নয়, চেম্বার হলেও নয়।  তেমন কিছু জানার থাকলে আপনার ডাক্তারকে ফোন করুন নির্দ্ধিদায়।
আমরা এখন আমাদের হাসপাতালের তরফ থেকে অনলাইন কনসালটেশনের উদ্যোগ নিয়েছি। বিশেষ করে যাঁরা পুরনো রোগী, যাঁদের আমরা চিনি জানি তাঁদেরকে। সেক্ষেত্রে মেডিকেল কাউনসিল অব ইন্ডিয়া বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিল করেছে। একটা পোর্টাল থাকবে, সেখানে ভিডিও কলের মাধ্যসে কনসালটেশন চলবে। তবে সেখানে একটা বিষয় খুব পরিষ্কার থাকবে যে, আমরা যেহেতু রোগীকে সরাসরি পরীক্ষা করতে পারছি না, তার একটা ঝুঁকি থাকবে। আর দুপক্ষকেই সেই ঝুঁকি মেনে নিতে হবে।
তবে কারো যদি ইমার্জেন্সি কোনও পরিস্থিতি দেখা দেয়, তখন কিন্তু এই ব্যবস্থা চলবে না। সেক্ষেত্রে বাড়িতে বসে থাকা বাঞ্ছনীয় নয়। করোনার প্রকোপ চলছে বলে যে হার্ট অ্যাটাক হবে না তার তো কোনও গ্যারান্টি নেই। তাই আমরা যা বলে থাকি–  বুকে ব্যাথা যদি দশমিনিটের বেশি থাকে, আর বুকের মাঝখানে চাপ ধরে থাকে, জিভের নিচে সরবিট্রেট দেওয়ার পরও যদি তা না-কমে, তাহলে সবচেয়ে  কাছের কোনও হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে দেরি না-করে।
ডা. মজুমদার বলেন, আমি সবাইকে একটা কথাই বলছি, বাড়িতে থাকুন, ওষুধ গুলো চালিয়ে যান। আর সেরকম কোনও কিছু হলে অবশ্যই ইমার্জেন্সিতে আসুন।
তবে এক জায়গায় আমার একটা ভাবনা রয়েছে। বলা ভালো দুশ্চিন্তা। অনেক হার্ট ফেলিওরের রোগী আছেন।  যাঁদের শ্বাসকষ্ট থাকে, হার্টের পাম্পিং কম। তাঁদের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কিন্তু অন্যদের থেকে বেশি।  তাঁরা যখন শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন, তখন বোঝা মুশকিল হয়ে যায়, করোনার সংক্রমণের জন্য শ্বাসকষ্ট হচ্ছে নাকি হার্ট ফেলিওরের কারণে হচ্ছে।  এই একটা জায়গায় আমাদের চিন্তা রয়েছে। অন্যান্য হার্টের রোগীদের নিয়ে এই সমস্যা নেই।  সেক্ষেত্রে অবশ্যই দুটোর মধ্যে ফারাক করা সহজ হয়।  কিন্তু হার্ট ফেলিওরের রোগীদের ক্ষেত্রেই এই ধন্দটা কাজ করে।  আমরা আশঙ্কা করছি, আগামী কিছুদিনের মধ্যে হয়তো হার্ট ফেলিওরের রোগীদের সংখ্যা বেড়ে যেতে পারে ভাইরাল ইনফেকশনের জন্য । কারণ, যদি রোগীর করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হয় তাহলে হার্ট ফেলিওয়ের পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। আর যাঁদের হার্ট ফেলিওরের রোগ নেই, তাঁদেরও কিছু কিছু ক্ষেত্রে করোনাভাইরাসের জন্য় পাম্পিং এবিলিটি কমতে পারে।  ভাইরাল মায়োকার্ডাইটিস বলে একটা কনডিশন রয়েছে। যার থেকে জটিলতা বাড়তে পারে। আর  হার্ট ফেলিওর একটা ক্রনিক কনডিশন  বা রোগ, যা নিয়ে মানুষ বেঁচে থাকতে পারে। ভাইরাল সংক্রমণের ক্ষেত্রে এই রোগীদের সমস্যা আরও বেড়ে যায়। এবার করোনাভাইরাস কতটা হামলা করবে আগামিদিনে, তার ওপরই অনেক কিছু নির্ভর করবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সবচেয়ে আলোচিত