ঢাকা   সোমবার, ৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১   দুপুর ১২:২৭ 

সর্বশেষ সংবাদ

কন্যাশিশুকে হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি

ঢাকার দক্ষিণখান এলাকায় সুরাইয়া আক্তার নামের নয় বছরের শিশুকে হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন এক নারী। সম্পর্কে ওই নারী সুরাইয়ার সৎমা। ওই নারীর নাম শিবলী খানম (২৬)।

গতকাল বুধবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত আসামি শিবলীর জবানবন্দি রেকর্ড করার পর তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পুলিশ বলছে, সুরাইয়াকে তার বাবা ও সৎমা মিলে দিনের পর দিন নির্যাতনের পর হত্যা করেছেন। সুরাইয়ার বাবার নাম হাফিজুল ইসলাম।

গত সোমবার রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় হাফিজুল ইসলামের বাসা থেকে শিশু সুরাইয়ার লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় সুরাইয়ার মা আজিরন বেগম বাদী হয়ে দক্ষিণখান থানায় হত্যা মামলা করেন। এরপর পুলিশ অভিযান চালিয়ে সুরাইয়ার সৎমা শিবলীকে গ্রেপ্তার করে। পলাতক রয়েছেন সুরাইয়ার বাবা হাফিজুল।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দক্ষিণখান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, শিশু সুরাইয়া হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন শিবলী। সুরাইয়াকে তিলে তিলে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে বলে আদালতকে জানিয়েছেন শিবলী। আড়াই মাস আগে আসামি হাফিজুল বেল্ট দিয়ে মেয়ে সুরাইয়াকে বেধড়ক পেটান। প্রায় প্রতিদিনই শিবলী ও হাফিজুল তাকে নির্যাতন করতেন।

ঢাকার আদালতে জমা দেওয়া পুলিশ প্রতিবেদন এবং পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২১ বছর আগে হাফিজুলের সঙ্গে আজিরন বেগমের (সুরাইয়ার মা) বিয়ে হয়। এই দম্পতির দুটি কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণ করে। বড় মেয়ের নাম হাজেরা বেগম (১৭), আর ছোট মেয়ে সুরাইয়া। দুই সন্তান নিয়ে আজিরন শেরপুরে থাকতেন। তাঁর স্বামী হাফিজুল ঢাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। চার বছর আগে আজিরন জানতে পারেন, তাঁর স্বামী ঢাকায় আরেকটি বিয়ে করেছেন। নাম শিবলী খানম। পরে আজিরন চলে আসেন ঢাকায়। দুই সন্তান নিয়ে তিনি তাঁর মায়ের বাসায় ওঠেন। এরপর হাফিজুল আজিরনকে তালাক দেন। হাজেরা ও সুরাইয়াকে নিজের বাসায় নিয়ে যান হাফিজুল। গত ২০ জানুয়ারি টেলিফোনের মাধ্যমে বাদী আজিরন জানতে পারেন, তাঁর ছোট মেয়ে সুরাইয়া মারা গেছে। ছয় বছর ধরে সুরাইয়া হাফিজুলের কাছে ছিল।

দক্ষিণখান থানার পুলিশ আদালতকে প্রতিবেদন দিয়ে বলেছে, শিশু সুরাইয়ার মাথা, নাক, ঠোঁট, পিঠ, দুই ভ্রু, থুতনি, দুই হাতের আঙুল, পাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে কাটা দাগ রয়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে প্রতিদিন আসামি হাফিজুল ও শিবলী সুরাইয়াকে মারধর করতেন। আশপাশের লোকজন সুরাইয়ার কান্নার আওয়াজ শুনতে পেতেন। চার দিন আগেও সুরাইয়াকে হাফিজুল ও শিবলী মারধর করেন।

তদন্ত কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন বলেন, সুরাইয়ার পায়ে সমস্যা ছিল। হাঁটতে সমস্যা হতো। কিছুটা প্রতিবন্ধী। মাঝেমধ্যে ঘরের ভেতর প্রস্রাব-পায়খানা করে দিত। যখন-তখন হাফিজুল ও শিবলী সুরাইয়াকে মারধর করতেন। আসামি শিবলী আদালতে স্বীকার করেছেন, আড়াই মাস আগে হাফিজুল বেল্ট দিয়ে ইচ্ছেমতো সুরাইয়াকে পিটিয়ে জখম করেন। মেয়েটি অপুষ্টির শিকার। হাত-পা শুকিয়ে গিয়েছিল। চিকিৎসাও করানো হতো না।

পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ জানান, হাফিজুলকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। যেকোনো সময় তাঁকে গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সবচেয়ে আলোচিত