ঢাকা   শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১   বিকাল ৩:৩১ 

সর্বশেষ সংবাদ

এমপি পাপুল সমাচারঃ টাকার জোরে স্বামী-স্ত্রী দু’জনই হয়ে যান সংসদ সদস্য, দেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা

স্রেফ টাকার জোরে এমপি হয়ে যান লক্ষীপুর -২ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য কাজী শহীদ ইসলাম পাপলু। শুধু তিনি নিজেই নন স্ত্রী’র আবদার মেটাতে সংরক্ষিত আসনে স্ত্রী সেলিনা ইসলামকেও সংসদ সদস্য বানান। দেশের সংসদীয় ইতিহাসে এটা এক বিরল ঘটনা। টাকার কী ক্ষমতা এটা হাড়ে হাড়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন সাংসদ পাপলু ও তার স্ত্রী। টাকা হলে সব সম্ভব এটাও চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন এই এমপি দম্পতি।
এদিকে সস্ত্রীক কাজী শহীদের এমপি হওয়া নিয়ে পাওয়া গেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। লক্ষীপুরের রাজনীতিতে অজ্ঞাতকুলশীল কাজী শহীদ ইসলাম হঠাৎ করেই টাকার বস্তা নিয়ে এলাকায় আসলেন, টাকা ঢাললেন আর হয়ে গেলেন এমপি। কোনো দল থেকেও মনোনয়ন নেননি। শুধু লাইন ঘাট ঠিক রেখেছেন। এই যা।

এলাকার পোড়খাওয়া রাজনৈতিক নেতারাও হতভম্ব। চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া তাদের করার কিছুই ছিলোনা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৮ সালের নির্বাচনে মহাজোটের আসন ভাগাভাগি অনুযায়ী লক্ষীপুর-২ আসনটি পড়েছিল এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির ভাগে। সে অনুযায়ী সেখানে প্রার্থী হন জাতীয় পার্টি জেলা সভাপতি মোহাম্মদ নোমান । অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আপেল প্রতীক নিয়ে দাঁড়ান কাজী শহীদ। ভোটের কিছু দিন আগে নিরব হয়ে যান জাপা প্রার্থী। এক পর্যায়ে ঘোষণা দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান জাপা প্রার্থী। সমর্থন জানান কাজী শহীদ ইসলাম পাপুলকে। গুঞ্জন রটে পাপুলের সঙ্গে তার সমঝোতা হয়। আর তা হয় বিপুল অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি থেকেও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের চিঠি দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী শহীদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে তাকে সর্বাত্বক সহযোগিতা করার নির্দেশনা দেয়া হয়। নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ক ড. সেলিম মাহমুদ স্বাক্ষর করে রহস্যজনক এই চিঠি পাঠান। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়কের চিঠি পেয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীরা পাপুলের পক্ষে অবস্থান নেন এবং তাকে বিজয়ী করেন।
নিজে এমপি হওয়ার পর তার স্ত্রী সেলিনা ইসলামকেও সংরক্ষিত আসনে এমপি বানানোর ইচ্ছে পোষণ করেন। কিন্তু স্ত্রীকে স্বতন্ত্র এমপি করতে না পেরে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালীদের ধরে স্ত্রীকেও এমপি বানিয়ে নেন। সবকিছু ম্যানেজ করে স্বামী স্ত্রী দুজনই এমপি নির্বাচিত হয়ে দেশের সংসদের ইতিহাসে এক নজিরবিহীন রেকর্ড স্থাপন করেন কাজী শহিদ ও সেলিনা ইসলাম।
এমপি পাপুলের পারিবারিক ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে পারিবারিকভাবে তারা বিএনপির রাজনীতির সমর্থক। তার বড় ভাই কাজী মঞ্জুরুল আলম কুয়েত বিএনপির প্রভাবশালী নেতা। তাদের পরিবারের কেউ কখনো আওয়ামী লীগ করাতো দূরের কথা সমর্থনও করে না। কিন্তু কাজী শহীদ গত কয়েকবছর ধরে কুয়েতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসছেন। আর তার বড় ভাই আছেন বিএনপির নেতৃত্বে।
এমপি হওয়ার টার্গেট নিয়ে ২০১৬ সাল থেকে এলাকায় আসা-যাওয়া শুরু করেন কাজী শহীদ । করতে থাকেন দান খয়রাত। এলাকার যুবকদের নানাভাবে তার পক্ষে টানেন। মসজিদ মাদ্রাসায় দান করেন। এ ভাবেই এলাকায় সম্পৃক্ত হন।
কিন্তু এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর আর পারতপক্ষে এলাকায় যান না এমনটাই বলছেন স্থানীয়রা। তবে এলাকার এমপি মানবপাচারসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকা এবং কুয়েতে গ্রেপ্তার হয়ে জেলে যাওয়ার ঘটনায় সবাই ক্ষুব্ধ। বিষয়টি এলাকার জনগণের জন্য অপমানকর বলে মনে করা হচ্ছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সবচেয়ে আলোচিত