চার মাসের বেশি সময় পর বুধবার দেশের সব নিম্ন আদালতে স্বাভাবিক বিচার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে আদালতে বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীর সংখ্যা ছিল কম। যারা এসেছেন তারাও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেছেন। মুখে পরেছেন মাস্ক। ঢাকা জজকোর্টেও ছিল একই অবস্থা।
এ দিকে হাইকোর্ট খোলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে বৃহস্পতিবার। প্রধান বিচারপতি ওই দিন ফুলকোর্ট সভা ডেকেছেন, অর্থাৎ সব বিচারপতির সঙ্গে তিনি বৈঠক করবেন। তবে ফুলকোর্ট সভা হবে ভার্চুয়াল। ধারণা করা হচ্ছে আগামি রবিবার থেকে সুপ্রিমকোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগে স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বাভাবিক বিচারকাজ শুরু হতে পারে।
এদিকে নিম্নআদালতে স্বাভাবিক বিচারকাজ শুরু হলেও মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত নির্দেশনা।
গত ৩০ জুলাই প্রধান বিচারপতির বরাতে এ-সংক্রান্ত নির্দেশিকা জারি করে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।
এতে আদালতের বিচারক, আইনজীবী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বিচার প্রার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতে প্রতিরোধমূলক বিভিন্ন ব্যবস্থার বিষয়েও বলা হয়।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে গেল মার্চের শেষ সপ্তাহে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও আদালত ছুটি ঘোষণা করে সরকার।
পরবর্তিতে শারীরিক উপস্থিতি ব্যতিরেকে উচ্চ ও অধস্তন আদালতে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে সীমিত পরিসরে মামলার কার্যক্রম চালু করতে ৯ মে ‘আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ জারির পর ১১ মে থেকে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে অধস্তন আদালতে হাজতি আসামিদের জামিন শুনানি ও উচ্চ আদালতে সীমিত পরিসরে মামলার শুনানি শুরু হয়।
ঘোষিত ছুটি গত ৩০ মে শেষ হলেও নিয়মিত বিচার কার্যক্রম বন্ধই থাকে। তবে অধস্তন বিভিন্ন আদালতে আত্মসমর্পণ ও নালিশি মামলাসহ দেওয়ানি এবং উত্তরাধিকার মামলার আবেদন গ্রহণ ও শুনানি চলে। এরই মধ্যে নিয়মিত বিচার কার্যক্রম চালু করতে আইনজীবীরা মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করেন।তারা
প্রধান বিচারপতি বরাবর কয়েক দফায় চিঠির মাধ্যমে আবেদন জানান।
শেষ পর্যন্ত অধস্তন আদালতে বিচার কার্যক্রম চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা জারি করে। এতে বলা হয় আদালত সংশ্লিষ্ট সবাই শারীরিক ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পাশাপাশি এজলাস, স্বাক্ষীর ডক (স্বাক্ষীর জন্য নির্ধারিত স্থান) এবং কাঠগড়ায় প্রয়োজনীয় অংশে গ্লাস দিয়ে পৃথক প্রতিরোধক প্রকোষ্ঠ প্রস্তুতের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
বিচারক ও আইনজীবীরা সাদা শার্ট বা সাদা শাড়ী/ সালোয়ার কামিজ ও সাদা নেক ব্যান্ড ও কালো টাই পরিধান করবেন।
জেলা জজ/ মহানগর দায়রা জজ/ চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট/ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের প্রবেশ পথে এবং প্রকাশ্য স্থানে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা হিসেবে বেসিন ও সাবান পানির ব্যবস্থা করতে হবে।
আদালতে উপস্থিত প্রত্যেকে যথাসম্ভব নিজ নাক, মুখ ও চোখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকাসহ আদালত প্রাঙ্গণ ও এজলাসকক্ষে প্রত্যেকে মুখাবরণ (ফেস মাস্ক) এবং হাতমোজা পরিহিত অবস্থায় থাকতে হবে।
নির্দেশিকায় বলা হয়, অত্যন্ত জরুরি কারণ ছাড়া আদালত প্রাঙ্গণে আসা থেকে বিরত থাকতে হবে। আদালত প্রাঙ্গণ ও আদালত ভবনে প্রবেশের সময় প্রত্যেকের শরীরের তাপমাত্রা থার্মাল স্ক্যানারের মাধ্যমে পরীক্ষা করতে হবে। আদালত এলাকায় প্রবেশের সময় কেউ জ্বর বোধ করলে কিংবা কারো শরীরে তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার বেশি থাকলে, কোভিডের লক্ষণ যেমন, কাশি, শাসকষ্ট, সর্দি, ঠান্ডাজনিত ঘন ঘন কাঁপুনি, পেশি ব্যাথা, মাথা ব্যাথা, গলা ব্যাথা, স্বাদ বা গন্ধের অনুভূতি নষ্ট হওয়া, ডায়রিয়া ইত্যাদিতে আক্রান্ত কিংবা কোভিড- ১৯ রোগীর সংস্পর্শে এসেছেন এমন কাউকে অবশ্যই আদালত প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।
আদালতের সংশ্লিষ্ট বিচারক শুনানি কার্যক্রমের সময়সূচী ও পদ্ধতি এমনভাবে নির্ধারণ করবেন যাতে আদালত ভবন ও এজলাসে কোনো ঝুঁকিপূর্ণ জনসমাগম না ঘটে। একটি মামলার শুনানি শেষে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এজলাস কক্ষ ত্যাগ করার পর বিচারক পরবর্তী মামলা শুনানির জন্য গ্রহণ করবেন। এ ছাড়া একটি মামলার শুনানিতে সর্বোচ্চ দুজন আইনজীবী অংশ নিতে পারবেন। এজলাসকক্ষে ছয়জনের বেশি ব্যক্তির সমাগম না করাসহ প্রত্যেককে আরেকজনের থেকে কমপক্ষে ছয় ফুট শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে আসন বিন্যাস করতে হবে।
এতে আরো বলা হয়, জামিন শুনানি এবং আমলি আদালতে ধার্য তারিখে হাজিরার জন্য কারাগারে থাকা অভিযুক্ত ব্যক্তিকে প্রিজন ভ্যান বা অন্য কোনোভাবে আদালত প্রাঙ্গণ বা এজলাসকক্ষে হাজির করার আবশ্যিকতা নেই।
এ ছাড়া স্বাস্থ্যবিধি ও শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে তাৎক্ষণিক উদ্ভুত যে কোনো পরিস্থিতি বিচেনায় সংশ্লিষ্ট বিচারক প্রয়োজনবোধে আনুষাঙ্গিক যে কোনো সুরক্ষামুলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এবং আদালত প্রাঙ্গণ ও এজলাস কক্ষে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতে বিচারক সংশ্লিষ্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবেন। পাশাপাশি আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আদালতের কাজ শেষে এজলাস কক্ষ ত্যাগ করতে অনুপ্রাণিত করতে হবে।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনায় আরো বলা হয়, সংশ্লিষ্ট পুলিশ সুপার/ উপ-পুলিশ কমিশনার কোর্ট পুলিশ পদায়ন/ বদলি করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জেলা জজ/ মহানগর দায়রা জজ/ চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট/ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। আদালতে জনসাধারণের ব্যবহার্য স্থানসমূহ, সরঞ্জামাদি, এজলাসকক্ষ, আসবাবপত্র, জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে। আদালত প্রাঙ্গণে সব দোকান বন্ধ রাখার পাশাপাশি কোনো প্রকার ভ্রাম্যমাণ দোকানও বসতে দেওয়া হবে না।