শুধু নিম্ন আদালত নয় হাইকোর্টেও স্বাভাবিক বিচারকাজ শুরু করার দাবি জানিয়েছেন আইনজীবীরা। তারা বলছেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিম্ন আদালতে বিচারকার্যক্রম শুরু হলে তা হাইকোর্টেও সম্ভব।
প্রসঙ্গত কোরবানির ঈদের ছুটি শেষে আগামী ৫ অগাস্ট বুধবার থেকে নিম্নআদালতে স্বাভাবিক বিচার কাজ চলবে বলে বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারকদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রধান বিচারপতি এ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।
তবে মহামারীকালে আদালত প্রাঙ্গণ ও এজলাস কক্ষের সুরক্ষা সংক্রান্ত হাই কোর্ট বিভাগের দেওয়া নির্দেশনা প্রতিপালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে নিম্ন আদালতের পাশাপাশি হাইকোর্টেও স্বাভাবিক বিচারকার্য শুরু করার দাবি জানিয়ে আইনজীবীরা বলছেন, স্বাস্খ্যবিধি মেনে কার্যক্রম চললে কোনো অসুবিধা হওয়ার কথা না। হাইকোর্টের আইনজীবীরাও অর্থিক সমস্যায় আছেন। বিচারপ্রার্থীরাও দুর্ভোগে আছেন।
এ প্রসঙ্গে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন জানান, বারের পক্ষ থেকে বিষয়টি প্রধানবিচারপতিকে অবহিত করা হয়েছে। প্রধানবিচারপতির নেতৃত্বে ফুলকোর্ট সভা হবে। আশা রাখি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসবে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধানবিচারপতি। এবং সিদ্ধান্ত ইতিবাচক হবে বলেই তিনিও মনে করেন।
দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর সরকার গত ২৬ মার্চ থেকে সারা দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে।
তার সঙ্গে মিল রেখে সর্বোচ্চ আদালতসহ দেশের সব আদালতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্ট। সরকারের সাধারণ ছুটির সঙ্গে আদালতের সাধারণ ছুটিও কয়েক দফা বাড়ানো হয়।
এক মাসের বেশি সময় বিচারকাজ বন্ধ থাকার পর ‘ভার্চুয়াল আদালতে’ শুনানির জন্য গত ৯ মে সরকার ‘আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার’ অধ্যাদেশ জারি করে।
পরদিন সর্বোচ্চ আদালতের উভয় বিভাগের বিচারপতিদের নিয়ে ভিডিও কনফারেন্সে ‘ফুলকোর্ট’ সভা করেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
ফুলকোর্ট সভার পর ওইদিনই অধস্তন আদালতে ভার্চুয়াল জামিন শুনানির নির্দেশ আসে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে। তার জন্য তিনটি বিশেষ প্র্যাকটিস নির্দেশনাও জারি করে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।
তার মধ্যে আপিল বিভাগ পরিচালনার জন্য ১৩ দফা, হাই কোর্ট পরিচালনার জন্য ১৫ দফা ও অধস্তন আদালত পরিচালনার জন্য ২১ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এই ‘প্র্যাকটিস নির্দেশনা’র আলোকে ১১ মে থেকে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশের অধস্তন এবং ১২ মে থেকে উচ্চ আদালতে বিচারকাজ শুরু হয়।
এরপর প্রায় তিন মাস ভার্চুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে চলছে দেশের অধস্তন আদালতের বিচারকাজ। তাও সব মামলার বিচার চলছিল না। শুধু জামিন শুনানি এবং নতুন মামলার আবেদন গ্রহণের মধ্যেই এই আদালতের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রয়েছে।
সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাদে আর সব অফিস খুলে দেওয়ার পর আইনজীবীরাও স্বাভাবিক আদালত চালুর দাবি জানিয়ে আসছিলেন।
এর মধ্যেই শারীরিক উপস্থিতির মাধ্যমে স্বাভাবিক বিচারকাজ শুরুর সিদ্ধান্ত দিলেন প্রধান বিচারপতি।
সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবর স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “নির্দেশিত হয়ে জানানো যাচ্ছে যে,বাংলাদেশের মাননীয় প্রধান বিচারপতি সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারপতিগণের সাথে আলোচনাক্রমে এই মর্মে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে, অধস্তন সকল দেওয়ানী, ফৌজদারী আদালত এবং ট্রাইব্যুনালসমূহে আগামী ৫ আগস্ট রোজ বুধবার হতে শারীরিক উপস্থিতিতে স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে।”