ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খানসহ দুই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন ১৫ মাসেও দিতে পারে নি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। অথচ ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে এই প্রতিবেদন দিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছিল দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)।
দুদকের এই চিঠি মন্ত্রণালয়ে চাপা পড়ে গেছে । এ নিয়ে মন্ত্রণালয়ের কেউ যেমন কথা বলতে চাচ্ছেন না, দুদকও নিশ্চুপ হয়ে গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন তাকসিম খানের কেরামতিতেই সবকিছু ধামাচাপা পড়ে গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা গেছে, ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান, ওয়াসার পরিচালক ( উন্নয়ন) প্রকৌশলী আবুল কাশেম ও পরিচালক (টেকনিক্যাল) প্রকৌশলী এ কে এম সহিদ উদ্দিনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় নানা দুর্নীতির অভিযোগ জমা পড়ে দুদকে। দুর্নীতি ও অনিয়মের এসব অভিযোগ অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেয় দুদক। এ জন্য অভিযোগের অনুলিপি মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে কিছু তথ্য চাওয়া হয়। ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে এসব তথ্য সরবরাহের জন্য অনুরোধ করে দুদক। গত বছরের ১২ মার্চ দুদক থেকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে এই চিঠি দেওয়া হয়।
দুদকের সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় কোনো তথ্য সরবারাহ না করে ওয়াসার এমডিসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত করার উদ্যেগ নেয়। এ জন্য গত বছরের ২৩ এপ্রিল পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করে মন্ত্রণালয়। স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. জহিরুল ইসলামকে কমিটির আহ্বায়ক করা হয়। কমিটির বাকি চার সদস্য হলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্মসচিব মুহম্মদ ইব্রাহিম, পলিসি সাপোর্ট ইউনিটের দায়িত্বে নিয়োজিত যুগ্মসচিব, নগর উন্নয়ন-২-এর দায়িত্বে থাকা যুগ্ম সচিব এবং পানি সরবরাহের দায়িত্বে থাকা একজন উপসচিব। কিন্তু কমিটি কি তদন্ত করেছে তা কেউ জানতে পারে নি।
কিন্তু কমিটির কেউ এ নিয়ে কথা বলতে চান না। তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে মন্ত্রণালয়ের তদন্ত আর আগায় নি অদৃশ্য কারণে । কোনো প্রতিবেদনও জমা পড়েনি। সবকিছুই চাপা পড়ে যায়।
চিঠির জবাব না পেয়ে গত বছরের ২৭ অক্টোবর দুদক ফের মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় । কিন্তু সেই চিঠিরও কোনো উত্তর দেয়নি মন্ত্রণালয়।
২০০৯ সাল থেকে ঢাকা ওয়াসার এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তাকসিম এ খান। গত ১১ বছর ধরে একই পদে বহাল আছেন। তার দায়িত্ব পালনকালে দুজন মন্ত্রী ৫ বছর করে ১০ বছর দায়িত্ব পালন করে চলে গেছেন। এর মধ্যে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম মারা গেছেন। খন্দকার মোশাররফ হোসেন পাঁচ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু তাকসিম খান ওয়াসার এমডি হিসেবেই রয়েই গেছেন। তার যেমন পদোন্নতিও হয় না তেমনি এ পদ থেকে যানও না। অথচ ওয়াসার এখন লেজেগোবরে অবস্থা। বিভিন্ন প্রকল্পের নামে হাজার কোটি টাকা খরচ করা হলেও সামান্য বৃষ্টিতেই ডুবে যায় রাজধানী, সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে অদৃশ্য এক প্রভাবে বহাল আছেন তাকসিম খান। প্রতিবারই মেয়াদ শেষ হওয়ার পর কোনো এক অদৃশ্য প্রভাবে ফের নিয়োগ পান তিনি। তার নিয়োগ নিয়ে ওয়াসা বোর্ডে পর্যন্ত আপত্তিও ছিল। কিন্তু কোনো কিছুই বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়নি তার জন্য। তার ক্ষমতার প্রভাব এতোই যে মন্ত্রণালয়কেও চুপ থাকতে হচ্ছে। দুদকও নিশ্চুপ।