একজন সংসদ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে অথচ তা বাংলাদেশ সরকারকে অবগত করার প্রয়োজনবোধ করছে না কুয়েত সরকার। বাংলাদেশ দূতাবাস থেকেও যোগাযোগ করে কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। বিষয়টি কুটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত বলে মনে করা হচ্ছে।
লক্ষীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য কাজী শহীদ ইসলাম পাপলুকে গত ৬ জুন মানবপাচার ও বিভিন্ন জালিয়াতির অভিযোগে কুয়েতের মুশরিফ আবাসিক এলাকার নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে কুয়েতের সিআইডি। গ্রেপ্তারের পর তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে এবং ১৬ জুন কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনা হয়েছে এবং এখন বিচার শুরুর প্রক্রিয়া চলছে।
এদিকে দেশের বাইরে একজন সংসদ সদস্য গ্রেপ্তার হয়ে জেলে থাকলেও সংসদকে তা জানানো হয় নি। এ নিয়ে কোনো বিবৃতিও দেয়া হয় নি।
কুটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা, মনে করেন বাংলাদেশের একজন সংসদ সদস্যকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি কুটনৈতিকভাবে জানানোর দায়িত্ব ছিল কুয়েতের। কুয়েতে বাংলাদেশের দূতাবাস রয়েছে। তারা দূতাবাসকে জানাতে পারতো।
এমপি পাপলু গ্রেপ্তারের বিষয়টি কুয়েতের সংবাদমাধ্যম থেকে জেনেছে বাংলাদেশ দূতাবাস। পরবর্তিতে কুয়েতের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু ১৫ দিনেও কুয়েত কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানানোর প্রয়োজনবোধ করছে না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে কুয়েত বাংলাদেশকে পাত্তাই দিচ্ছে না।
কয়েকজন কুটনৈতিক বিশেষজ্ঞের সঙ্গে এ নিয়ে আলাপ করলে তারা বলেন, কুয়েত বাংলাদেশের একজন সংসদ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে ১৫ দিনেও না জানিয়ে কুটনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘন করেছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র দপ্তরের উচিত, কুয়েতের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এর ব্যাখ্যা চাওয়া।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একজন সাধারণ নাগরিকও বিদেশে কোনো অপরাধ করলে তাকে গ্রেপ্তার করা হতেই পারে। কিন্তু বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দূতাবাসকে জানানোর নিয়ম রয়েছে। আর এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের একজন সংসদ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সংসদ সদস্য দেশের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স অনুযায়ী রাষ্ট্রে তার অবস্থান ১২ নম্বরে। অর্থাৎ মন্ত্রীপরিষদ সচিব,তিন বাহিনীর প্রধানের সমমর্যাদায়। এমন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে কোনো দেশ গ্রেপ্তার করলে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট দেশকে জানানোর নিয়ম যেমন রয়েছে তেমনি এটা ভদ্রতাও। কিন্তু কুয়েত নিয়মও মানে নি,ভদ্রতাও দেখায় নি। এটা সংশ্লিষ্ট দেশের প্রতিও অসৌজন্যমূলক আচরণ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একজন অপরাধ করলে তাকে গ্রেপ্তার করা হবে বিচার হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু গ্রেপ্তারকৃতব্যক্তির নিজ দেশকে যেমন বিষয়টি জানাতে হবে তেমনি তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে। যা কুয়েত করছে না।
এদিকে বাংলাদেশ এখন সংসদ অধিবেশন চলছে। নিয়ম অনুযায়ী সংসদ চলা অবস্থায় দেশের ভেতর কোনো সংসদ সদস্যকে গ্রেপ্তার করতে হলে স্পিকারের অনুমতি নিতে হয়। তবে এমপি পাপলু গ্রেপ্তার হয়েছেন দেশের বাইরে। বিষয়টি গণমাধ্যমে আসছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রীও জানেন। কিন্তু বিষয়টি সংসদকে অবহিত করা হয় নি। স্পিকার যেমন অবহিত করেন নি তেমনি কোনো সংসদ সদস্যও পয়েন্ট অব অর্ডারে বিষয়টি জানতে চান নি। এমন কি এমপি পাপলুর স্ত্রী সেলিনা ইসলাম নিজেও সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য। তিনিও বিষয়টি সংসদে জানান নি বা জানতে চাননি।
এমপি পাপলুকে ৮ দিনের রিমান্ড শেষ গত মঙ্গলবার কারাগারে পাঠিয়েছে কুয়েতের আদালত। সিআইডি তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করছে এবং শিগগিরই আদালতে বিচারকাজ শুরু হবে। কুয়েতের আইন অনুযায়ী এ ধরনের অপরাধীদের অপরাধ প্রমাণ হলে ৭ থেকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। বাতিল হতে পারে কুয়েতে তার সব সম্পদ, ব্যবসা বাণিজ্য। পাপলুর বিরুদ্ধে মানব পাচার, মুদ্রা পাচার, ঘুষ দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে।