ঢাকা   শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০   রাত ১:১৪ 

সর্বশেষ সংবাদ

টাকার জোরে স্বামী-স্ত্রী দু’জনই হয়ে যান সংসদ সদস্য, ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা; কুয়েতে গ্রেপ্তার লক্ষীপুরের এমপি পাপলু রিমান্ডে

স্রেফ টাকার জোরে এমপি হয়ে যান লক্ষীপুর -২ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য কাজী শহীদ ইসলাম পাপলু। শুধু তিনি নিজেই নন স্ত্রী’র আবদার মেটাতে সংরক্ষিত আসনে স্ত্রী সেলিনা ইসলামকেও সংসদ সদস্য বানান। দেশের সংসদীয় ইতিহাসে এটা এক বিরল ঘটনা। টাকার কী ক্ষমতা এটা হাড়ে হাড়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন সাংসদ পাপলু ও তার স্ত্রী। টাকা হলে সব সম্ভব এটাও চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন এই এমপি দম্পতি।
এ দিকে মানবপাচার ও অর্থপাচারের ঘটনায় কুয়েতে গ্রেপ্তার এমপি শহীদ ইসলামকে নিয়ে বিব্রত সরকার। দেশের একজন সংসদ সদস্য বিদেশে এ ভাবে গ্রেপ্তার হওয়ায় দেশের ভাবমূর্তিও ক্ষুন্ন হয়েছে। তবে বাংলাদেশের একজন সংসদ সদস্য গ্রেপ্তার হলেও কুয়েত সরকারের পক্ষ থেকে তা বাংলাদেশ দূতাবাসকে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক ভাবে জানানো হয় নি। এ নিয়েও দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। কুয়েতস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে অনানুষ্ঠানিক ভাবে খবরাখবর নেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এদিকে সস্ত্রীক কাজী শহীদের এমপি হওয়া নিয়ে পাওয়া গেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। লক্ষীপুরের রাজনীতিতে অজ্ঞাতকুলশীল কাজী শহীদ ইসলাম হঠাৎ করেই টাকার বস্তা নিয়ে এলাকায় আসলেন, টাকা ঢাললেন আর হয়ে গেলেন এমপি। কোনো দল থেকেও মনোনয়ন নেননি। শুধু লাইন ঘাট ঠিক রেখেছেন। এই যা।
এলাকার পোড়খাওয়া রাজনৈতিক নেতারাও হতভম্ব। চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া তাদের করার কিছুই ছিলোনা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৮ সালের নির্বাচনে মহাজোটের আসন ভাগাভাগি অনুযায়ী লক্ষীপুর-২ আসনটি পড়েছিল এরশাদের জাতীয় পার্টির ভাগে। সে অনুযায়ী সেখানে প্রার্থী হন জাতীয় পার্টি জেলা সভাপতি মোহাম্মদ নোমান । অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আপেল প্রতীক নিয়ে দাঁড়ান কাজী শহীদ। ভোটের কিছু দিন আগে নিরব হয়ে যান জাপা প্রার্থী। এক পর্যায়ে ঘোষণা দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান জাপা প্রার্থী। সমর্থন জানান কাজী শহীদ ইসলাম পাপলুকে। গুঞ্জন রটে পাপলুর সঙ্গে তার সমঝোতা হয়। আর তা হয় বিপুল অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি থেকেও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের চিঠি দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী শহীদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে তাকে সর্বাত্বক সহযোগিতা করার নির্দেশনা দেয়া হয়। নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ক ড. সেলিম মাহমুদ স্বাক্ষর করে রহস্যজনক এই চিঠি পাঠান। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়কের চিঠি পেয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীরা পাপলুর পক্ষে অবস্থান নেন এবং তাকে বিজয়ী করেন।
নিজে এমপি হওয়ার পর তার স্ত্রী সেলিনা ইসলামকেও সংরক্ষিত আসনে এমপি বানানোর ইচ্ছে পোষণ করেন। কিন্তু স্ত্রীকে স্বতন্ত্র এমপি করতে না পেরে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালীদের ধরে স্ত্রীকেও এমপি বানিয়ে নেন। সবকিছু ম্যানেজ করে স্বামী স্ত্রী দুজনই এমপি নির্বাচিত হয়ে দেশের সংসদের ইতিহাসে এক নজিরবিহীন রেকর্ড স্থাপন করেন কাজী শহিদ ও সেলিনা ইসলাম।
এমপি পাপলুর পারিবারিক ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে পারিবারিকভাবে তারা বিএনপির রাজনীতির সমর্থক। তার বড় ভাই কাজী মঞ্জুরুল আলম কুয়েত বিএনপির প্রভাবশালী নেতা। তাদের পরিবারের কেউ কখনো আওয়ামী লীগ করাতো দূরের কথা সমর্থনও করে না। কিন্তু কাজী শহীদ গত কয়েকবছর ধরে কুয়েতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসছেন। আর তার বড় ভাই আছেন বিএনপির নেতৃত্বে।
এমপি হওয়ার টার্গেট নিয়ে ২০১৬ সাল থেকে এলাকায় আসা-যাওয়া শুরু করেন কাজী শহীদ । করতে থাকেন দান খয়রাত। এলাকার যুবকদের নানাভাবে তার পক্ষে টানেন। মসজিদ মাদ্রাসায় দান করেন। এ ভাবেই এলাকায় সম্পৃক্ত হন।
কিন্তু এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর আর পারতপক্ষে এলাকায় যান না এমনটাই বলছেন স্থানীয়রা। তবে এলাকার এমপি মানবপাচারসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকা এবং কুয়েতে গ্রেপ্তার হয়ে জেলা যাওয়ার ঘটনায় সবাই ক্ষুব্ধ। বিষয়টি এলাকার জনগণের জন্য অপমানকর বলে মনে করা হচ্ছে।
নোটিশ দিয়েছে দুদুকঃ এদিকে এমপি কাজী শহীদ ইসলাম পাপলু, তার স্ত্রী এমপি সেলিনা ইসলাম, তাদের কন্যা ও শ্যালিকার সার্বিক তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন, দুদক। গত ১০ জুন এই চিঠি পাঠান দুদক উপপরিচালক মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন। চিঠিতে এই চারজনের বিস্তারিত তথ্য অর্থাৎ নাম এবং পরিবর্তিত ও অপরিবর্তিত ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্র,পাসপোর্ট নাম্বার চাওয়া হয়েছে। দুদক সূত্র জানিয়েছে গত ফেব্রুয়ারী মাসে এমপি পাপলুর বিরুদ্ধে মানব পাচার,হুন্ডি ব্যবসাসহ বিভিন্ন অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। এই অনুসন্ধান শেষ পর্যায়ে বলে দুদক সূত্র জানিয়েছে।
মানবপাচারের অভিযোগে গত ৬ জুন কুয়েতের মুশরিফ আবাসিক এলাকার বাসা থেকে পাপলুকে গ্রেপ্তার করে কুয়েতের সিআইডি। তার জামিন না মঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠানো হয় এবং রিমান্ডে জিজ্ঞসাবাদের অনুমতি দেয় দেশটির আদালত। শুক্রবার তাকে নিয়ে অভিযানে নামে সিআইডি। তার বাসা থেকে ব্যাংকের চেকবই উদ্ধার করে। এতে গত তিন মাসে কুয়েতের পাশাপাশি বাংলাদেশ ও কানাডায় বিপুল পরিমাণ অার্থিক লেনদেনের তথ্য পেয়েছে সিআইডি।
কুয়েতে মুদ্রা পাচার ও মানব পাচারের সঙ্গে যুক্ত থাকায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তার বিরুদ্ধে কয়েকজন বাংলাদেশী সাক্ষী দিয়েছেন বলে জানা গেছে। কুয়েতের পত্র পত্রিকায় এ নিয়ে খবর বের হয়েছে।
এ দিকে বাংলাদেশের একজন আইন প্রণেতা তথা সংসদ সদস্য মানব পাচারের দায়ে কুয়েতে গ্রেপ্তারের ঘটনায় প্রশ্নের মুখে পড়েছে দেশের ভাবমূর্তি। বিষয়টি কুয়েতের সংবাদমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হয়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিডিয়াতেও খবরটি এসেছে। যা নিয়ে লজ্জায় পড়েন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সবচেয়ে আলোচিত