বিশ্বে জুড়ে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার জন্য চীনকে আগেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবার ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি, করোনার মতো মহামারি ছড়ানোর দায়ে চীনের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্কই শেষ করে দেয়া হবে।
আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা রবার্ট ও’ব্রায়েন আরো কড়া ভাষায় হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, গত ২০ বছরে চীন থেকে পাঁচ ধরনের সংক্রামক ব্যধির আমদানি হয়েছে। এবার এটা বন্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, সময় এসেছে, সমগ্র বিশ্বের মানুষকে সমস্বরে বলতে হবে, চীন থেকে উৎপন্ন হওয়া সংক্রমণ আর আমরা সহ্য করব না।’
মার্কিন সংবাদ মাধ্যম ‘ফক্স বিজনেস নেটওয়ার্ক’-কে ১৪ মে দেয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, চীন সক্রিয় ভাবে প্রথমেই তা রুখে দিলে, গোটা বিশ্বে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ত না আর তা মহামারির আকারও নিত না। চীনের উদ্দেশে ট্রাম্প বলেন, ‘‘(করোনা-মোকাবিলায়) চীনের ভূমিকায় আমরা একেবারেই সন্তুষ্ট নই। গোটা (করোনা) পরিস্থিতি নিয়েও সন্তুষ্ট নই। কারণ আমাদের বিশ্বাস, একে (করোনা-সংক্রমণকে) গোড়াতেই রোখা যেত। এবং দ্রুত রোখা হলে তা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ত না।
করোনাভাইরাস নিয়ে বিশ্ববাসীকে সতর্ক করেনি চীন। মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা অনেক কম করে দেখিয়েছে। কোভিড-১৯ ভাইরাস উহানের ল্যাবে তৈরি করে ছাড়া হয়েছে— বেজিং-এর বিরুদ্ধে এমন গুচ্ছ গুচ্ছ অভিযোগ তুলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ বার সরাসরি চীনের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা বললেন। চীনের ভূমিকায় অত্যন্ত হতাশ বলে জানিয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সম্পর্কে তাঁর মন্তব্য, ‘‘ওঁর সঙ্গে আমি কথা বলতে চাই না।’’
সাক্ষাৎকারে এ বছরের জানুয়ারিতে চীনের সঙ্গে করা বাণিজ্য চুক্তি বাতিল করার ইঙ্গিতও দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ট্রাম্পের বক্তব্য, ‘‘ওঁদের এটা হতে দেওয়া উচিত হয়নি (করোনাভাইরাস ছড়াতে দেওয়া)। আমি যে বাণিজ্য চুক্তি করেছিলাম, সেটা বিশাল কিছু বলে মনে হয়েছিল। কিন্তু এখন আর সেটা মনে হয় না।’’ রূপকের আশ্রয় নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘কালি শুকিয়ে গিয়েছে এবং মহামারি ছড়িয়ে পড়েছে। এখন আর আগের মতো মনে হয় না।’’
কিন্তু সম্পর্ক শেষ করবেন কী ভাবে? কোন পথে? নির্দিষ্ট কোনও বিষয় স্পষ্ট না করে বলেন, ‘‘আমরা অনেক কিছুই করতে পারি। আমরা সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারি। আর সেটা করলে কী হবে? ৫০০ বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হবে আমেরিকার।’’ চীন থেকে প্রতি বছর প্রায় এই পরিমাণ টাকার পণ্য আমদানি করে। সেটাই উল্লেখ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
হুশিয়ারী জাতীয় উপদেষ্টারঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা রবার্ট ও’ব্রায়েন দাবি করলেন, গত ২০ বছরে চীন থেকে পাঁচ ধরনের সংক্রামক ব্যধির আমদানি হয়েছে। এবার এটা বন্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের জেরে সমগ্র বিশ্বে এখনও পর্যন্ত আড়াই লক্ষ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। সংখ্যাটি কোথায় গিয়ে থামবে, বলা যাচ্ছে না। তাই সময় এসেছে, সমগ্র বিশ্বের মানুষকে সমস্বরে বলতে হবে, চীন থেকে উৎপন্ন হওয়া সংক্রমণ আর আমরা সহ্য করব না।’
বিশ্বের যাবতীয় বড় বড় ব্যধির জন্য চীনকে দায়ী করে ও’ব্রায়েন বলেন, ‘আমরা জানি, করোনা উহান থেকেই এসেছে। সেটা ভাইরোলজি ল্যাব অথবা বাজার থেকে আসতে পারে। যদিও চীনের কাছে এই প্রশ্নের সদুত্তর নেই। গত ২০ বছরে আমরা চীনের কাছ থেকে পাঁচটি সংক্রমক রোগ উপহার পেয়েছি। আমরা পেয়েছি, সিভিয়ার অ্যাকুয়েট রেসপাইরেটরি সিন্ড্রম (সার্স), এভিয়েন ফ্লু, সোয়াইন ফ্লু, কোভিড-১৯ ইত্যাদি। এখন প্রশ্ন, আর কতদিন গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের দ্বারা ছড়িয়ে পড়া রোগের জন্য বিশ্ববাসীকে ভুগতে হবে?’ চারটি রোগের কথা উল্লেখ করলেও পাঁচ নম্বর কোন ভাইরাসের কথা তিনি জানাননি।
এদিাে শুধু অভিযোগেই ক্ষান্ত থাকছে না আমেরিকা। চীনের প্রতি আক্রোশ মেটাতে এবার যাবতীয় অনুমোদন বন্ধ করতে মার্কিন কংগ্রেসে প্রস্তাবনা এনেছেন ন’জন প্রভাবশালী সিনেটর। তাঁদের বক্তব্য, করোনা মহামারী নিয়ে তদন্তে পূর্ণ সহযোগিতা না করলে চীনের বিরুদ্ধে যাবতীয় অনুমোদন বন্ধ করতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাতে ক্ষমতা দেওয়া হোক।