রাজধানীর কাকরাইল মসজিদ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামাত- উল – মুজাহিদিন বাংলাদেশ, জেএমবির ১৭ সদস্যকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর হকিম সরাফুজ্জামান আনছারীর আদালতে তাদের হাজির করলে বিচারক কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এসময় গ্রেফতারকৃতদের পক্ষে কোনো আইনজীবী দাঁড়াননি, পুলিশও তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবেদন করেনি।
সোমবার জেএমবির এই সদস্যদের রাজধানীর কাকরাইল মসজিদের উল্টোদিক থেকে গ্রেপ্তার করে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট।
সংস্থাটির এডিসি তৌহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে এদের গ্রেপ্তার করা হয়।
এ সময় তাদের কাছ থেকে ১৯ টি মোবাইল ফোন ২ লাখ ৩৪ হাজার বাংলাদেশী টাকা ও ৯২২ আমেরিকান ডলার জব্দ করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জেএমবির সদস্য বলে স্বীকার করে।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- মোঃ হায়দার আলী (৪৪), মোঃ মাহমুদুল হাসান ওরফে মাসুম, মোঃ জামিরুল ইসলাম (২৪), মোঃ বিল্লাল হোসেন (৩৮), মোঃ শেখ আরাফাত ওরফে জনি (৪৮), মোঃ ইমরুল হাসান ওরফে ইমন (২৫), মোঃ সাইফুল ইসলাম (২৫), মোঃ মোজাম্মেল হক (৩৩), মোঃ শাহজালাল(৩৪), মোঃ আক্তারুজ্জামান (৩০), মোঃ মাহমুদুল হাসান ওরফে সাব্বির (২৩), মোঃ আবিদ উল মাহমুদ ওরফে আবিদ (২২), মোঃ সোহাইল সরদার (৩৩), মোঃ ওবায়দুল ইসলাম ওরফে সুমন (৩০), মাহমুদ হাসান ওরফে শরীফ (১৮), মোঃ মাজেদুল ইসলাম ওরফে মুকুল ( ২৮) ও মোঃ সোহাগ হাসান (২০)।
প্রাথমিক জিজ্ঞসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানায়, ভারতের কাশ্মীর,পাকিস্তান হয়ে সৌদিআরব যাওয়ার চেষ্টা করছিল তারা।
এ জন্য গত ১৮ মার্চ তারা রওনা হয়। ভারতে প্রবেশের জন্য প্রথমে সাতক্ষীরা ও পরে যশোর সীমান্তের কাছে বিভিন্ন মসজিদে অবস্থান করে। লক্ষ্য ছিলো তারা প্রথমে ভারতের কাশ্মীর যাবে।সেখানকার জঙ্গিদের সঙ্গেও রয়েছে তাদের যোগাযোগ। কাশ্মীরে জিহাদে অংশ নেবে, সেখান থেকে যাবে পাকিস্তান, তারপর সৌদি আরব। কিন্তু সাতক্ষীরা ও যশোর সীমান্ত দিয়ে পার হতে পারে নি। ফিরে আসে ঢাকায়। অবস্থান নেয় কাকরাইল মসজিদে। সেখান তাবলিগ জামাতের সঙ্গে মিশে যায়। পরবর্তি লক্ষ্য সিলেট সীমান্ত দিয়ে ভারতের আসাম হয়ে কাশ্মীর যাওয়া। সে অনুযায়ী সোমবার তাবলিগের বেশে রওনা হয়। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। কাকরাইল এলাকা থেকে গ্রেফতার করে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট।
অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া এডিসি তহিদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, জনৈক ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ মোস্তাক বিন আরমান বাংলাদেশ থেকে ২০১৭ সালে সৌদি আরবে যান এবং সেখানে অবস্থান করছেন। তিনি জিহাদের পক্ষে ঈমাম মাহাদীর সৈনিক হিসাবে বিভিন্ন বক্তব্য দেন এবং ভারতসহ বিভিন্ন স্থানে মুসলিমদের পক্ষে জিহাদ করার আহবান জানিয়ে অডিও ভিডিও প্রকাশ করেন। গ্রেফতারকৃতরা তাঁর বক্তব্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে ঈমাম মাহাদীর সৈনিক হিসাবে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে সৌদি আরব যাওয়ার চেষ্টা করেন। গ্রেফতারকৃতরা জানায়, তারা পলাতক রবিউল সৈয়দ মোস্তাক বিন আরমান এর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন এবং গত মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময় তারা পরস্পর যোগাযোগ করে ভারত ও সৌদি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তাবলিগ-জামাতের আড়ালে সাতক্ষীরা বা বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে তারা ভারত-কাশ্মীর সীমান্ত হয়ে সৌদি আরব পৌঁছাবে এটাই ছিলো লক্ষ্য।
গোয়েন্দারা জানায়, সৈয়দ মোস্তাক বিন আরমানের প্ররোচনায় এবং তার সঙ্গে যোগাযোগ করে ইতিমধ্যে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ ছাত্র গত জানুয়ারি মাসে ওমরা পালন করতে গিয়ে আর ফিরে আসেননি। এছাড়াও বিভিন্ন সময় সা’দ, কাউসার, শরীফ, তোফাজ্জল, গিয়াসউদ্দিন, আলী আজম এবং রাশেদ নামে আরও ৭ জন ঈমাম মাহাদির সৈনিক হিসেবে যোগদানের উদ্দ্যেশে সৌদিআরব গেছেন বলে গ্রেফতারকৃতরা স্বীকার করেছে।