তাদের বলা হয়েছিলো করোনার দূর্যোগে আকাশ থেকে একধরনের গজব নেমে আসবে এবং সমস্ত কিছু ধোঁয়াচ্ছন্ন হয়ে যাবে তখন বাংলাদেশ – ভারত সীমান্তে কোন পাহারা থাকবেনা। আগামী চল্লিশ দিন সূর্য উঠবে না, আকাশ ধোঁয়ায় ছেয়ে যাবে, কাফেররা সবাই মারা যাবে, ঈমানদারদের শুধু হালকা কাঁশি হবে, এই রমজানেই ঈমাম মাহাদির আগমন ঘটবে সৌদি আরবে। তাই তারা যেভাবে পারে সেভাবেই যেনো আসার চেষ্টা করে। এই বিশ্বাস নিয়েই নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির ১৭ অনুসারী গত ১৮ মার্চ রওনা হয়। প্রথমে সাতক্ষীরা ও পরে যশোর সীমান্তের কাছে বিভিন্ন মসজিদে অবস্থান করে ভারতে যাওয়ার জন্য। তারা ভারতের কাশ্মীর যাবে, জিহাদে অংশ নেবে, সেখান থেকে যাবে পাকিস্তান, তারপর সৌদিআরব। কিন্তু সাতক্ষীরা ও যশোর সীমান্ত দিয়ে পার হতে না পেরে ঢাকা হয়ে সিলেট সীমান্ত দিয়ে ভারতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সে মোতাবেক তারা ঢাকায় আসে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। জেএমবির ১৭ অনুসারীকে রাজধানীর কাকরাইল এলাকা থেকে সোমবার গ্রেফতার করেছে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট।
এ সময় তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের ১৯টি মুঠোফোন ২ লাখ ৩৪ হাজার বাংলাদেশী টাকা ও ৯২২ আমেরিকান ডলার জব্দ করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জেএমবির সদস্য বলে স্বীকার করে
গ্রেফতারকৃতরা হলো- মোঃ হায়দার আলী (৪৪), মোঃ মাহমুদুল হাসান ওরফে মাসুম, মোঃ জামিরুল ইসলাম (২৪), মোঃ বিল্লাল হোসেন (৩৮), মোঃ শেখ আরাফাত ওরফে জনি (৪৮), মোঃ ইমরুল হাসান ওরফে ইমন (২৫), মোঃ সাইফুল ইসলাম (২৫), মোঃ মোজাম্মেল হক (৩৩), মোঃ শাহজালাল(৩৪), মোঃ আক্তারুজ্জামান (৩০), মোঃ মাহমুদুল হাসান ওরফে সাব্বির (২৩), মোঃ আবিদ উল মাহমুদ ওরফে আবিদ (২২), মোঃ সোহাইল সরদার (৩৩), মোঃ ওবায়দুল ইসলাম ওরফে সুমন (৩০), মাহমুদ হাসান ওরফে শরীফ (১৮), মোঃ মাজেদুল ইসলাম ওরফে মুকুল ( ২৮) ও মোঃ সোহাগ হাসান (২০)।
অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) বিভাগের এডিসি তহিদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, ৪ মে, সন্ধ্যা সোয়া সাতটায় কাকরাইল মসজিদের উল্টোদিকে পাবলিক হেলথ্ কার্যালয়ের সামনে থেকে তাঁদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
তিনি বলেন, জনৈক ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ মোস্তাক বিন আরমান বাংলাদেশ হতে ২০১৭ সালে সৌদি আরবে যান এবং সেখানে অবস্থান করছেন। তিনি জিহাদের পক্ষে ঈমাম মাহাদীর সৈনিক হিসাবে বিভিন্ন বক্তব্য এবং গাজওয়াতুল হিন্দ নামক স্থানে মুসলিমদের পক্ষে জিহাদ করার আহবান জানিয়ে অডিও ভিডিও প্রকাশ করেন। গ্রেফতারকৃতরা তাঁর বক্তব্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে ঈমাম মাহাদীর সৈনিক হিসাবে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে সৌদি আরব যাওয়ার চেষ্টা করেন। গ্রেফতারকৃতরা জানায়, তারা পলাতক রবিউল সৈয়দ মোস্তাক বিন আরমান এর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন এবং গত মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময় তারা পরস্পর যোগাযোগ করে হিজরতের সিদ্ধান্ত নেন। তাবলিগ-জামাতের আড়ালে সাতক্ষীরা বা বেনাপল সীমান্ত দিয়ে তারা ভারত-কাশ্মীর সীমান্ত হয়ে সৌদি আরব পৌঁছাবে।
এডিসি তোহিদ বলেন, সৈয়দ মোস্তাক বিন আরমানের প্ররোচনায় এবং তার সঙ্গে যোগাযোগ করে ইতিমধ্যে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ ছাত্র গত জানুয়ারি মাসে ওমরা পালন করতে গিয়ে আর ফিরে আসেননি। এছাড়াও বিভিন্ন সময় সা’দ, কাউসার, শরীফ, তোফাজ্জল, গিয়াসউদ্দিন, আলী আজম এবং রাশেদ নামে আরও ৭ জন ঈমাম মাহাদির সৈনিক হিসেবে যোগদানের উদ্দ্যেশে সৈাদিআরব হিজরত করেছেন বলে গ্রেফতারকৃতরা জানান।
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে রমনা মডেল থানায় মামলা করা হয়েছে।