করোনাভাইরাস থেকে রক্ষায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সরঞ্জাম তৈরি না করা, এবং বেসরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে টেস্টের সুযোগ না রাখার সরকারি সিদ্ধান্তের আইনী বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে। স্বাস্থ্য সচিব,স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক( ডিজি)সহ সংশ্লিষ্টরা আদালত অবমাননার মুখেমুখি হচ্ছেন। তাদের বিরুদ্ধে আইনী নোটিশ দিয়েছে নাগরিক অধিকার রক্ষায় যুক্ত দুটি সংগঠন। একটি নোটিশে চিকিৎসক-নার্স ও স্বাস্থ্য কর্মিদের কাছে নিরাপত্তা সামগ্রী ঠিক মতো না পৌঁছানোসহ আদালতের দেওয়া নির্দেশনা প্রতিপালন না করায় আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হয়েছে। আরেক নোটিশে বিনামূল্যে করোনা টেস্ট এবং বেসরকারি হাসপাতালে কোনো প্রকার ফি আরোপ না করতে বলা হয়েছে।
রোববার (৩ মে) ই-মেইলের মাধ্যমে পৃথক দুটি নোটিশ পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন নোটিশকারী আইনজীবীরা।
তিন দিনের মধ্যে আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করা না হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক করোনাকে মহামারি ঘোষণার পরেও করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সরঞ্জাম না থাকার বিষয় গত ২০ মার্চ গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়।
ওই সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ জনস্বার্থে একটি রিট পিটিশন দায়ের করে। সংস্থাটির আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জানান, রিটের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের হাইকোর্ট রুল জারি করেন এবং অন্তবর্তী কিছু আদেশ দেন।
আদেশে স্বাস্থ্য সচিবকে দ্রুত পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করতে বলা হয়। কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় পিপিই, গ্লাভস, স্যানিটাইজার, সার্জিক্যাল মাক্স, গাউন, সু-কাভার, স্বাস্থ্য সুরক্ষা যন্ত্রপাতি ও মেডিসিনের তালিকা করে তা তৈরির নির্দেশ দেন।
একইসঙ্গে ওই নিরাপত্তা সামগ্রী সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিকট পৌঁছানোর জন্য নির্দেশ দেন।
নোটিশে বলা হয়, আদালতের নির্দেশ যথাযথভাবে পালিত না হওয়ায় প্রায় ৩ শ-এর বেশি চিকিৎসক, স্বাস্থ্য কর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর দায়-দায়িত্ব তারা এড়াতে পারেন না। এখনো অনেক হাসপাতালে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সামগ্রী পৌঁছায়নি এমন সংবাদও প্রকাশ হচ্ছে।
আদালতের এসব নির্দেশনা যথাযথভাবে পালিত না হওয়ায় স্বাস্থ্য সচিব আসাদুল ইসলাম, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ, অতিঃসচিব (হাসপাতাল) সিরাজুল ইসলাম ও কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শহিদুল্লাহকে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
এদিকে প্রত্যেক নাগরিককে করোনাভাইরাসের বিনামূল্যে টেস্ট এবং বেসরকারি হাসপাতালে করোনা টেস্টে কোনো প্রকার ফি আরোপ না করতে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন আরো দুই আইনজীবী।
রোববার স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডিজি এবং আইইডিসিআরের পরিচালকসহ ৬ জনকে এ নোটিশ পাঠান ব্যারিস্টার হুমায়ুন কবির পল্লব ও ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাউসার।
আইনজীবী হুমায়ুন কবির পল্লব বলেন, “করোনা টেস্টের বাণিজ্যিকীকরণ প্রতিরোধে বিনামূল্যে টেস্ট সাধারণ জনগণের জন্য ব্যবস্থা করার জন্য ল’ এন্ড লাইফ ফাউন্ডেশন এর পক্ষ থেকে ইমেইলের মাধ্যমে এ আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার ইতিমধ্যে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে করোনা টেস্টের অনুমতি দিয়েছে যেখানে সরকার একটি নির্ধারিত মূল্য টেস্টের জন্য দিয়েছেন সেটা হল তিন হাজার পাঁচশত টাকা। যেটা অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধকরণের পরিবর্তে তাদের নিরুৎসাহিত করা হবে। যেহেতু করোনা একটি জাতীয় সমস্যা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে যত বেশি টেস্ট করা সম্ভব হবে অল্প সময়ে তত তাড়াতাড়ি এবং সঠিকভাবে এই করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব। কিন্তু একটি টেস্টের দাম যদি নির্ধারণ করা হয় ৩৫০০ টাকা তাহলে আমাদের সাধারণ মানুষ টেস্টে আগ্রহী হবে না এবং এখানে একটি বাণিজ্যিকীকরণ হবে টেস্ট নিয়ে।’
এটি একটি বৈষম্যমূলক পদক্ষেপ উল্লেখ করে নোটিশে বলা হয়, ‘কিছু মানুষ বিনামূল্যে টেস্ট করতে পারবে আর কিছু মানুষ ৩৫০০ টাকায় টেস্ট করাতে হবে এবং বেসরকারি হাসপাতালগুলো এই বিষয়টি নিয়ে একটি ব্যাপক বাণিজ্য করার সুযোগ পাবে যেটা অনাকাঙ্ক্ষিত এবং অপ্রত্যাশিত। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।’ না হলে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলেও নোটিশে বলা হয়েছে।