করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সুপ্রিম কোর্টসহ দেশের সব আদালত আপাতত বন্ধই থাকছে। প্রধান বিচারপতিসহ অন্যান্য বিচারপতিদের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত সুপ্রিম কোর্টের ফুল কোর্ট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
রোববার (২৬ এপ্রিল) ভিডিও কনফারেন্সে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের সভাপতিত্বে ফুল কোর্ট সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ফুল কোর্ট সভায় একটি অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে ভার্চুয়াল কোর্ট চালু করতে রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ জানানোর সিন্ধান্ত নেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে, হাইকোর্ট বিভাগের রুলস সংশোধন করে ভার্চুয়াল আদালত স্থাপনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফুল কোর্ট সভা।
ফুল কোর্ট সভায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট উভয় বিভাগের অধিকাংশ বিচারপতি অংশগ্রহণ করেন।
মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণের প্রেক্ষাপটে প্রায় একমাস ধরে আদালত বন্ধ রয়েছে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানির জন্য ছুটির মধ্যে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির আদালত এবং একজন বিচারক দিয়ে হাইকোর্ট বিভাগে কাজ পরিচালনার সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছিল।
ওই সিদ্ধান্তে জেলা ও মহানগরের দায়রা জজ ও মুখ্য বিচারিক হাকিমের সুবিধা মতো সপ্তাহে দুই দিন নিম্ন আদালতে জরুরি জামিন শুনানির সিদ্ধান্তও এসেছিল সুপ্রিম কোর্ট থেকে।
গত ২৩ এপ্রিল সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন চলমান করোনা পরিস্থিতির মধ্যে সীমিত পরিসরে সুপ্রিম কোর্ট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবর স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছিলেন।
এতে বলা হয়, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন আপিল বিভাগের অন্যান্য বিচারপতির সঙ্গে সীমিত পরিসরে আদালত খুলে দেওয়ার বিষয়ে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠক করেন। সে বৈঠক শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে এসব সিদ্ধান্ত নেয় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।
সুপ্রিম কোর্টের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কঠোরভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে অতি জরুরি বিষয়গুলো শুনানির জন্য ছুটিকালীন সময়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান আপিল বিভাগের চেম্বার কোর্টে বসবেন।
তাছাড়া ছুটিকালীন সময়ে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান সব অধিক্ষেত্রের অতি জরুরি বিষয়গুলো শুনানির জন্য হাইকোর্ট বিভাগের কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।
আদালত পরিচালনার কর্মপন্থা নির্ধারণ এবং সামাজিক দূরত্ব অনুসরণের নিয়ম-কানুন বিষয়ে বিচারপতি প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবেন।
এ ছাড়া বিচার প্রার্থীদের কথা চিন্তা করে করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও প্রতি সপ্তাহে অন্তত দু’দিন দেশের সব জেলা ও দায়রা জজ আদালত খোলা রাখার নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।
সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবর স্বাক্ষরিত পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উদ্ভূত করোনা পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের প্রত্যেক জেলার জেলা ও দায়রা জজকে এবং মহানগর এলাকার মহানগর দায়রা জজকে ছুটিকালীন সময়ে তার সুবিধামতো প্রতি সপ্তাহে যে কোনও দুই দিন কঠোরভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে জরুরি জামিন শুনানির জন্য সীমিত আকারে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।
‘চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট/চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নিজে অথবা তার নিয়ন্ত্রণাধীন এক বা একাধিক ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা ছুটিকালীন সময়ে তার/তাদের সুবিধামতো প্রতি সপ্তাহে যেকোনও দুই দিন কঠোরভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে জরুরি জামিন শুনানির (কারাগারে থাকা হাজতি আসামির আবেদনসহ) সীমিত আকারে আদালতের কার্যক্রম পরিচালনার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট/চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ প্রদান করা হলো।’
এছাড়া ‘বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের গত ১১ এপ্রিলের নির্দেশনার ধারাবাহিকতায় পুনরায় উল্লেখ করা হচ্ছে যে, যেসব ফৌজদারি মামলায় আসামিকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত জামিন দেওয়া হয়েছে বা যেসব মামলায় উচ্চ আদালত থেকে অধস্তন আদালতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আত্মসমর্পণের শর্তে জামিন দেওয়া হয়েছে বা যেসব মামলায় নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা/স্থিতাবস্থা/স্থগিতাদেশের আদেশ প্রদান করা হয়েছে, সেসব মামলার আদেশের কার্যকারিতা আদালত নিয়মিতভাবে খোলার তারিখ থেকে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত বর্ধিত হয়েছে বলে গণ্য হবে। সাধারণ ছুটিকালীন সময়ে ওই মামলাগুলোর বিষয়ে কোনও আবেদন শুনানির জন্য গ্রহণ করা হবে না।’
‘একটি মামলার জামিন শুনানিতে কেবল একজন আইনজীবী অংশগ্রহণ করবেন। আদালত প্রাঙ্গণে এবং এজলাস কক্ষে সামাজিক দূরত্বের নিয়ম-কানুন কঠোরভাবে অনুসরণ করা না হলে আদালতের কার্যক্রম স্থগিত করতে হবে। আদালত প্রাঙ্গণে এবং এজলাস কক্ষে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়ে স্ব-স্ব আইনজীবী সমিতির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং কার্যকরী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে আলোচনাক্রমে জেলা ও দায়রা জজ/মহানগর দায়রা জজ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবেন।’
এছাড়া বিজ্ঞপ্তিতে জামিন শুনানিকালে কারাগারে থাকা আসামিদের কারাগার থেকে প্রিজনভ্যান বা অন্য কোনোভাবে আদালত প্রাঙ্গণে ও এজলাস কক্ষে হাজির না করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তবে আদালত খোলা রাখার এ সিদ্ধান্তে আইনজীবীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। বেশিরভাগ আইনজীবী এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানান এবং মনে করেন এর ফলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হবেন আইনজীবীরা। সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে আদালত খোলার সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হয়।।