বাজারে যেতে হয়েছিল। মোহাম্মদপুর কৃষিমার্কেটে। টানা কয়েকদিন ঘরে থেকে থেকে বাইরের জগতটাই যেনো অচেনা হয়ে যাচ্ছে। আতঙ্ক আর বিরক্ত দুটা মিলে মন ও শরীর দুটাই যেনো বিষিয়ে ওঠছে। এক অদ্ভুত শাস্তি ও শিক্ষা মানুষের জন্য দিলেন সৃষ্টিকর্তা। আতঙ্কে মানুষকে এ ভাবে ঘরবন্ধি কখনো থাকতে হয়েছে কী না জানিনা। সভ্যতার ইতিহাস শুরুর পর থেকে এমনটি হয়েছে বলে আমার মনে হয়না।
যাক আমাদের গার্ডেন স্ট্রিটের বাসার গলি থেকে শ্যামলী মূল রাস্তায় পৌঁছে মনে হলো কতোদিন পর এ রাস্তা দেখেছি। যে রাস্তায় দিনে অন্তত বার চারেক পদচিহ্ন দিয়ে যেতাম, মনে হলো সেখানে কতোদিন ধরে আসিনা। শ্যামলী মাঠটির মূল গেট তালাবন্ধ। করোনাভাইরাসের কারণে বন্ধ রাখার নোটিশ টানানো। গেটের ফাঁক দিয়ে মাঠটি দেখলাম। মর্নিং ওয়াকে যেদিন চন্দ্রিমায় যেতে পারিনা সেদিন শ্যামলী মাঠেই দৌঁড়ঝাপ করি। দেখলাম দু সপ্তাহ ব্যবহার না করা মাঠটিতে লকলক করে বেড়ে ওঠছে ঘাস। মনে হলো আমাদের পায়ের চাপে ন্যুয়ে পড়া মাঠের ঘাসগুলো হয়তো স্বস্তির নিশ্বাস নিচ্ছে। মনের কোনে ভেসে ওঠলো চন্দ্রিমা উদ্যানের কথা। বিশাল চন্দ্রিমা উদ্যানে যেখনে একসকালে না গেলে মনে হতো দিনের কি একটা বাকি রয়ে গেছে, সেখানে কতোদিন ধরে যাইনা। কেমন আছে চন্দ্রিমা? তার গাছগাছালি, লতাপাতা,পুকুর,লেক? কতোদিন ধরে দেখা হয় না তাদের সঙ্গে। সকালের বন্ধুদের সঙ্গে। বড্ড স্মৃতিকাতর করে ফেললো চন্দ্রিমা।
যাক হেঁটে হেঁটেই বাজারে গেলাম। প্রথমেই চালের বাজার। দেখলাম চাল কেজিতে ৫ টাকা বেড়েছে। এই সঙ্কটময় মুহুর্তে খুব একটা না বাড়লেও সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক থাকলে আর সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কঠোর নজরদারি থাকলে এটাও হয়তো বাড়তো না। তেল ডালের দাম বেড়েছে। আমদানিনির্ভর হওয়ায় হয়তো তেল ডালের দাম বাড়ানো হয়েছে। তবে তরিতরকারি, মাছ, ব্রয়লার মুরগির দাম ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই আছে। বেড়েছে বলে মনে হয় নি। বরং ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম কমেছে। মুরগি ১২০ টাকা কেজি, ডিম ডজন ৯০ টাকা। স্বাভাবিক অবস্থায় এগুলোর দাম বেশি ছিল। এই সঙ্কটকালে ক্ষুদ্র ব্যবসায়িরা যে এসব নিয়ে আসছেন এজন্যই তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।
ধারণাছিল রাস্তা মনে হয় সুনসান নীরব থাকবে। কিন্তু বের হয়ে দেখলাম প্রচুর লোকজনই আছে৷
রাস্তায় পুলিশ টহল দিচ্ছে। সেনাদের গাড়িও দেখলাম যাচ্ছে। পুলিশ ও সেনাদের গাড়ি দেখে অনেককেই দেখলাম গলির ভেতর আড়ালে চলে যেতে। বুঝলাম এগুলো অকাজের মানুষ। এদেরকে পেটানো উচিত। পুলিশ আর্মি এই অকাজের মানুষগুলোকে পেটালে আমার কোনো আক্ষেপ থাকবে না। এতো অনুনয় বিনয় করার পরও যদি এরা ঘরে না থাকে, সে ক্ষেত্রে এদেরপ্রতি বলপ্রয়োগ করতেই হবে।
আমি ধন্যবাদ জানাই পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে। বিপদের সময় মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তারা প্রখর রোদেও মাঠে রয়েছে। নিজেদের বিপদের কথা জেনেও। মানুষ যাতে নিরাপদে থাকে এটাই তারা নিশ্চিত করতে চায়। আমাদেরও দায়িত্ব রয়েছে তাদেরকে সহায়তা করার। কারণ এই পুলিশ আর্মিরা আমাদেরই ভাই বোন স্বজন।
বাজার ঘুরে একটা বিষয় মনে হলো, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের সরবরাহ ঠিক রাখতে হবে৷ চাল,মাছ, মাংস,তরিতরকারির সরবরাহ ঠিক রাখতে পারলে করোনা ভাইরাসে আমাদের দুর্ভিক্ষে ফেলতে পারবে না। ভাতমাছ পর্যাপ্ত থাকলে আপাতত খেয়েপড়ে আমরা বেঁচে থাকতে পারবো। বিলাসী সামগ্রির দরকার নেই। সেগুলোর দাম বাড়া নিয়েও মাথাব্যাথা নেই। তাই সরকারের কঠোর নজরদারি থাকতে হবে বাজারের প্রতি। শুধু ঢাকা নয় সারাদেশেই এই নজরদারি বাড়াতে হবে যাতে সুযোগসন্ধানী মজুতদাররা কৃত্তিম সঙ্কট সৃষ্টি না করতে পারে ।