ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১   সকাল ৬:০৫ 

সর্বশেষ সংবাদ

জননেতা নেই

সবকিছু আইনের গতিতে চললে হয় না,চলেও না। রাজনৈতিক সরকারের অনেক সিদ্ধান্ত রাজনৈতিকভাবে নিতে হয়। আমলা-কামলাদের সিদ্ধান্তের দিকে রাজনৈতিক সরকার তাকিয়ে থাকলে সেই সরকার জনবান্ধব হবে না।
অন্য দলেতো নেইই আওয়ামী লীগেও আর জনবান্ধব জননেতা নেই। সামাদ আজাদ নেই,জিল্লুর রহমান নেই, সুরঞ্জিত সেন নেই, আব্দুল জলিল নেই, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম নেই। অন্ধের যষ্টির মতো তোফায়েল আহমদ, আমির হোসেন আমু আছেন। কিন্তু তারা শুধু গণাতেই আছেন, অস্তগামি সূর্যের মতো।

রাজনীতিতে এখন কোনো জননেতা নেই। না আওয়ামী লীগে, না বিএনপিতে। জননেতাদের বাড়ির দড়জা জনতার জন্য উন্মুক্ত থাকতো। দিন রাতে কে আসতো কে যেতো কেউ জানতো না। এলাকার মানুষ, দেশের মানুষ, সাংবাদিক, লেখকরা এসব জননেতার সংস্পর্শে যখন খুশী যেতে পারতেন। সমস্যার কথা বলতে পারতেন। তারা মন্ত্রী মিনিস্টার হলেও জনতা থেকে দূরে যেতে পারতেন না। আমি নিজেও প্রয়াত জননেতা আব্দুস সামাদ আজাদের কলাবাগান ডলফিন গলির বাসা, সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের জিগাতলার বাসায় সরেজমিনে গিয়ে দেখেছি। এলাকার হিসেবে এলাকার মানুষের সঙ্গে যেতাম। তাদের বাসা সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল।
কিন্তু তাদের উত্তরাধিকাররা এর ধারে কাছেও নেই। এই দুই নেতার বাসায় এখন কেউ যায় না। কারণ তাদের উত্তরাধিকাররা কর্পোরেট সংস্কৃতিতে উত্তোরণ ঘটিয়েছেন।
যেটা বলছিলাম, রাজনীতিতে জননেতা তো নেইই, কথা বলার মতো নেতাও নেই। সবাই এখন কর্পোরেট নেতা। স্যুটেড বুটেড নেতা। সবার দড়জা জনতার জন্য বন্ধ। দেখা করতে হলে পিএস,এপিএস, পিআরওর সঙ্গে এপোয়েন্টমেন্ট করতে হয়। নেতারা ফোন ধরেন না, মানুষের কথা শুনেন না। মানুষ তাদের কাছে যাক সেটা তারা পছন্দও করেন না। সেটা যে স্তরের মানুষই হোক। সারাক্ষণ ঘিরে রাখেন সচিব, উপসচিব, পিএস এপিএসরা।
আমি নিশ্চিত সাংবাদিক রোজিনা থেকে উদ্ভুত যে জটিলতা এবং এ থেকে সাংবাদিকদের সঙ্গে সরকারের যে দূরত্ব বাড়ছে আওয়ামী লীগে যদি সেই জননেতারা থাকতেন তা হলে সেটা ২৪ ঘন্টার মধ্যে সমাধান হয়ে যেতো। সাংবাদিক নেতারদের ডেকে নিয়ে সমাধান করে দিতেন। আইনের গতিতে আইন চলুক সেটা বলতেন না। মানুষের পালস বুঝেই তারা সমাধান দিতেন। রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে এখনকার কর্পোরেট নেতাদের মৌলিক পার্থক্য এটাই।
কর্পোরেট নেতা চলেন আমলার কথায় আর রাজনৈতিক নেতা চলেন জনতার কথায়।
কর্পোরেট নেতারা বুঝতে পারছেন না, রোজিনার ঘটনায় সরকারের ক্ষতি কতটুকু হলো। প্রতিপক্ষের হাতে তারা কি অস্ত্র তুলে দিলেন। সাংবাদিক নির্যাতনের কি কি পোষ্টার হবে তার ছবি কিন্তু তৈরী করে দিলেন এই আমলা আর কর্পোরেট নেতারা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া আর একজন মন্ত্রী নেতাও কি নেই যিনি ধমক দিয়ে বলতে পারেন যে এটা ভুল হচ্ছে? দোষি আমলা -সাংবাদিককে ডেকে নিয়ে জবাব চাইতে পারেন? সাংবাদিক নেতাদের ডেকে নিয়ে আদালতের বাইরেই এটা সমাধান করে দিতে পারেন? আগে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা জরুরী তারপর দেখা যাবে কে দোষী আর নির্দোষী। এটাইতো রাজনৈতিক বিচক্ষণতা।
সবকিছু প্রধানমন্ত্রীকে করতে হবে কেনো? প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে কেনো? তা হলে দলের নেতাকে তথ্যমন্ত্রী করা হয়েছে কেনো? তিনি কি শুধু চটকদার কথা বলবেন? তিনি পারেন না দায়িত্ব নিয়ে বিষয়টি সমাধান করে দিতে? তিনি সাংবাদিকদের অভিভাবক না?
জানি এ প্রশ্নগুলোর কোনো উত্তর নেই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সবচেয়ে আলোচিত