ঢাকা   শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০   রাত ৯:০৪ 

সর্বশেষ সংবাদ

“সব দোষ ওই সাংবাদিকের “

ডাকসুর সাবেক ভিপি নূরুল হক নুরু ফেসবুকে লাইভ করে আওয়ামী লীগকে গালাগালি করলো, কোনো প্রকৃত মুসলমান আওয়ামী লীগ করতে পারেনা বলেও জানালো। ঘটনার তিন দিন পর থেকে নূরুর বিরুদ্ধে রাজধানীর শাহবাগ,পল্টনথানাসহ ঢাকার বাইরেও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হলো। কিন্তু নুরু রয়েছে বহাল তবিয়তেই। তাকে গ্রেপ্তার করা হয় নি। বরং পল্টন থানার মামলটি ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, আদালত ৬ জুন প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
অন্যদিকে খুলনার সাংবাদিক আবু তৈয়ব মুন্সী ( একটি টেলিভিশনের ব্যুরো প্রধান) ফেসবুকে খুলনার মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক সম্পর্কে কি একটা লিখেছেন যাতে মেয়র মহোদয়ের সম্মানহানি ঘটে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি মঙ্গলবার বিকেলে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন। আর মামলা দায়েরের কয়েকঘন্টার মধ্যেই রাত সাড়ে ১০ টায় সাংবাদিককে বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
অপরাধ কোনটা বড় বুঝতে পারলাম না। তবে এক যাত্রায় যে পৃথক ফল তা বুঝতে পেরেছি। আইনের প্রয়োগও যে সমানভাবে বা সবার জন্য আইন সমান নয় তাও বুঝতে পেরেছি। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় অন্যেরা যা কিছুই বলুক সাংবাদিক বললে রক্ষা নেই। তাকে মামলা দায়েরের সঙ্গে সঙ্গে গ্রেপ্তার করতে হবে, এটাই হচ্ছে নীতিগত সিদ্ধান্ত ।
“সব মিথ্যা, গুজব ছড়ায় সাংবাদিকরা। সবার সব ভালো কাজে জল ঢেলে দেয় সাংবাদিকরা।” এমন খেদোক্তি অনেক আমলা কামলার মুখে শুনেছি। জনসভা, মিটিং এ সেমিনারে প্রকাশ্যে কথা বললেন সেই কথা সাংবাদিক লিখলে, প্রচার করলে তা যদি ওই ব্যক্তির মনপুত না হয় তা হলেই বলেন, উনার কথা বিকৃতভাবে প্রচার করা হয়েছে, যা বলেননি তা প্রচার করে এডিটেড করে প্রচার করা হয়েছে। কথা বলে অস্বীকার করা এ ক্ষেত্রে নেতা, আমলা সবাই সিদ্ধহস্ত।
এর সর্বশেষ নজির বিএনপির নেতা মির্জা আব্বাস। অনলাইন মিটিংয়ে প্রকাশ্যে তিনি বললেন, তার দলের নেতা ইলিয়াস আলীকে সরকার নয়, বিএনপির লোকজনই গুম করেছে। এমন কী, কি কারণে তাকে গুম করা হয়েছে, কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে সব বললেন। গুম হওয়ার আগের দিন দলীয় কার্যালয়ে কার সঙ্গে ইলিয়াস আলীর ঝগড়া হয়েছে তাও জানালেন। বিচার চাইলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে। এ নিয়ে যখন তোলপাড়, বিএনপির থলের বিড়াল যখন বের হয়ে গেলো তখন মির্জা আব্বাস সবকিছু অস্বীকার করে সুর পাল্টিয়ে তার দায় চাপালেন সাংবাদিকদের ঘাড়ে। বললেন, তিনি এসব বলেন নি, তার বক্তব্য বিকৃতভাবে প্রকাশ করা হয়েছে।
অথচ দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ মির্জা আব্বাসের অনলাইন মিটিংয়ে দেয়া বক্তব্য শুনেছেন। আমরাও স্পষ্ট শুনতে পেয়েছি মির্জা আব্বাসের বক্তব্য।
আরও একটা নজির। লকডাউনে বের হওয়া নিয়ে রাস্তায় পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট ও ডাক্তারের ‘বড়ত্ব” নিয়ে বিতণ্ডার ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হয়েছে। এই ভিডিওর মাধ্যমে আমরা জানতে পারলাম, কথিত প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাদের শ্রেণি দ্বন্দ্ব আর মানসিকতার অবস্থাটি। এলিফ্যান্ট রোডের এই ভিডিও প্রচার না হলে কেউই হয়তো জানতে পারতেন না দেশের প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাদের মনোজগতের খবর। দেশের মানুষের ট্যাক্সের টাকায় তাদের পড়িয়ে, এখন চাকরির বেতন পর্যন্ত জনগণের ট্যাক্সের টাকায় হয়। সেই খবর তাদের নেই, তারা কে কার চেয়ে বড় এ নিয়ে রাস্তায় প্রকাশ্যে ঝগড়া করেন। সেই ঝগড়ার ভিডিও সাংবাদিক কেনো ধারণ করলো, প্রচার করলো এ নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, নৈতিকতা শেখাচ্ছেন। কোথায় সেই সাংবাদিককে ধন্যবাদ দেয়ার কথা, সমাজের কদর্য চিত্রটি তুলে ধরার জন্য, তা না করে উল্টো সাংবাদিককে শূলে চড়ানোর চেষ্টা চলছে। সুযোগ থাকলে হয়তো এই সাংবাদিককেও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার করা হতো।
তাই বলছিলাম, যতো দোষ সব সাংবাদিকদের। চুরি করেন, ডাকাতি করেন, মানবিক বিয়ে করেন, বলৎকার করেন কোনো সমস্যা নেই। খালি সাংবাদিক কিছু লিখুক, সোজা মামলা। আর বেশী ক্ষমতা থাকলে পিটিয়ে হাড়গোড় ভেঙ্গে দেয়া।
সাংবাদিকের পক্ষে আসলে কেউ নেই। সত্য আর বিশ্বাসযোগ্যতা ছাড়া কেউ নেই। দেশের আম জনতা ছাড়া কেউ নেই। এমনও দেখেছি, নেতার কাছে বিচার পায় নি, পুলিশের কাছে বিচার পায়নি, কোথাও বিচার না পেয়ে শেষে আসা হয় সাংবাদিকের কাছে, প্রেসক্লাবে, সংবাদ সম্মেলনে। মনে হয় শেষ ভরসা সাংবাদিক। এর আগ পর্যন্ত সবাই গালি দেয় সাংবাদিককে।
মাঝে মাঝে ভাবি, দেশের রাজনীতি, সংসদের যে অবস্থা তাতে যদি সাংবাদিকরাও লেখা বন্ধ করে দেয় তা হলে আমলা- কামলারা পিসে মেরে ফেলবে সাধারণ মানুষকে। কেউ খবরই পাবে না। ঈশ্বরের কাছে শুকরিয়া আদায় করেন, ভালো হোক খারাপ হোক এখনও এই সাংবাদিকদের কল্যাণেই অন্যায় অনিয়মের কিছু খবরাখবর পান। সাংবাদিকদের পথ রুদ্ধ করে দিয়েন না। এর ফল দেশের জন্য ভালো হবে না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সবচেয়ে আলোচিত