ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১   রাত ১১:২৩ 

সর্বশেষ সংবাদ

নৈরাশ্যবাদীদের ধারণা ভুল প্রমাণিত, নিজদের টাকায় পদ্মাসেতু করে ভেঙ্গে পড়েনি দেশের অর্থনীতি


বিড়াল কালো না ধলো সেটা দেখার দরকার নেই। বিড়াল ইঁদুর মারে কি না সেটাই বিবেচ্য।
পদ্মা সেতুর নির্মাণ খরচ লক্ষ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাক, সেতু শেষ পর্যন্ত হয়ে গেলো এটাই সত্য।
প্রকল্পের টাকা লুট হয়, সরকারি মাল দরিয়ায় ঢালা হয় এগুলো চিরন্তন সত্য। বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত যতো টাকা বিদেশী সাহায্য এসেছে তার অর্ধেকও যদি সঠিক প্রয়োগ হতো তা হলে দেশের প্রতিটি পরিবারের একটি করে দ্বিতল পাকা বাড়ি থাকতো, অন্ন বস্ত্রের নিশ্চয়তা হতো।
কিন্তু বিদেশী সাহায্যের ২০ থেকে ৩০ পার্সেন্ট পর্যন্ত প্রকল্পের কাজে ব্যয় হয়, সাধারণ মানুষের কল্যাণে পৌঁছে। বাকিটা নয়ছয় হয় বা লুট হয়। এমন হিসেব বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জেনেছি।
যতো বড় প্রকল্প ততো বেশী লুটপাট,কমিশন। এটা হয় বলেই মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম হয়,অষ্ট্রেলিয়া, কানাডায় বেগম পাড়া হয়, দেশে আমলা কামলারা আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়।
আমরা এসব জানি। মিডিয়ার সুবাদে আরও বেশী জানি,বেশী খবর রাখি ও খবর পাই।
দেশী টাকায় হউক আর বিদেশী টাকায়ই হউক যে কোনো কেনাকাটায় এমন কি একটা আলপিন কিনতে হলেও কমিশন দিতে হয়।
এটা সবাই জানে। দুদক জানে, পুলিশ জানে, আর্মি জানে, সচিব জানেন, মন্ত্রী জানেন।
আমরাও জানি। প্রকল্পের পিডি নিয়োগে কতো কতো তদ্বির,শর্ত নির্ধারণ করা হয় তা যে কোনো প্রকল্পে অনুসন্ধান করলেই জানা যায়। ডিপিএম,ওটিএমের নামে কি দুর্নীতি হচ্ছে তা নিউজের কাজে সংশ্লিষ্ট হলেই বুঝা যায়।
শতভাগ তথ্যপ্রমাণ পেলেও নিউজ করার হিম্মত নেই। নিজে করতে পারিনি, অনেক বাঘা সাংবাদিককে তথ্যপ্রমাণ দিয়েছি। কিন্তু তাদেরও হিম্মত হয়নি নিউজ করার।
তাই কমিশনটাও প্রকল্পের অংশ বলেই আমি ধরে নিয়েছি। এ কারণে এটার এখন আর নিউজ ভ্যালু আছে বলে মনে করি না। সরকারি কেনো? বেসরকারি কেনাকাটাতেও কমিশন লাগে। এক মিডিয়া হাউজে দেখেছি বিকেলের নাস্তা, রাতের খাবার থেকেও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দায়িত্বশীলকে কমিশন দিতে হতো যারা খাবার সাপ্লাই দিতো তাদের। একই অবস্থা পত্রিকা,এনজিওসহ ব্যক্তিমালিকানা প্রতিষ্ঠানে পর্যন্ত।
কাজেই কমিশন, দুর্নীতি, লুটপাট এসব এখন গাসওয়া হয়ে গেছে, স্বাভাবিক হয়ে গেছে।
মিডিয়ায় সময় সুযোগ পেলে খবর হয়। পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে খবর হয়। দুদক উপরের কোনো নির্দেশনা পেলে ডেকে নিয়ে আসে। মিডিয়ার খবর দেখে তারা ডাকে, পরে আর খুব একটা খবর হয় না।
এসব আমরা জানি। খবরের কারবারির অভিজ্ঞতা থেকে জানি। ২০ বছরে চোখের সামনে কতোকিছু লুট হতে দেখলাম। কতোজনকে আঙুল ফুলে কলাগাছ হতে দেখলাম। এখন আর অনুভূতি কাজ করে না।
তারচেয়ে মনে করি, লুট হতে হতে যে কাজটুকু হয় সেটাই দেশের লাভ, আমাদের লাভ। ৫ বছরের কাজ ১০ বছরে হয়েছে। প্রকল্পের খরচ কয়েকগুণ বেড়েছে। আপত্তি নেই। হয়েছে তো। এটাই বোনাস। টাকা লুট হয়েছে। হোক। কারও না কারও পকেটে তো গেছে। সে তো অন্তত পরিবার পরিজন নিয়ে ভালো করে বাঁচতে পারছে। বাঁচুক, সেটাই বা কম কিসে। সে প্রাডো চড়ুক, পাজারো চড়ুক। আমরা যে ৮ নাম্বার বাসে চড়তে পারছি সেটার জন্যই ঈশ্বরের প্রতি কৃতজ্ঞতা।এটা নিয়ে এতো আফসোসের কিছু নেই।
এতো কথা বললাম,কারণ শেষ পর্যন্ত পদ্মা সেতু হয়েছে। শেষ স্প্যান বসেছে। এই সেতু নিয়ে কতো কথা। শেখ হাসিনা সরকারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছিল বিশ্বব্যাংক আর দেশের কিছু মিডিয়া, সিভিল সোসাইটি। তাদের মিথ্যা তথ্য, পরিকল্পিত মিথ্যাচার আমরাও প্রথমে বিশ্বাস করেছিলাম। কিন্ত বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন এবং প্রমাণ করতে বললেন তখন কিন্তু নানা চেষ্টা করেও তারা দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারে নি। ঘৃণাভরে শেখ হাসিনা প্রত্যাখ্যান করলেন বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ণকে। বললেন আমরা নিজেদের টাকায় পদ্মাসেতু করবো। শেখ হাসিনা দেখিয়ে ছাড়লেন তিনি যা বলেন তা করেন। আজ পদ্মাসেতু হয়েছে। বিজয়ের মাসে বাঙালী আরেক বিজয় ছিনিয়ে এনেছে। এটাই সত্য। বৃহস্পতিবার পদ্মাসেতুর সর্বশেষ (৪১তম) স্প্যানটি বসানোর মধ্য দিয়ে যখন নদীর দুই প্রান্ত ছুঁয়ে এক হলো তখন দেশের বেশিরভাগ মানুষ আনন্দে আপ্লুত হলেও অনেকের মনেই দেখেছি বিষাদের ছায়া। যারা বলেছিলেন এ সরকার পদ্মাসেতু করতে পারবে না, করলেও জোড়াতালি দিয়ে একটা করে রাখবে, যারা বলেছিলেন এ সেতু হলেও তারা তা ব্যবহার করবেন না, তারা এখন লজ্জায় মুখ লুকোচ্ছেন। তাদেরই একজন বুদ্ধিজীবী, যিনি একসময় ক্ষমতার শীর্ষ ব্যক্তির মিডিয়াদূত ছিলেন, দেখলাম ফেসবুকে বিশাল লেখা লিখেছেন। পদ্মাসেতুর খরচের হিসাব চাচ্ছেন, জনগণের টাকা কোথায় কিভাবে খরচ হলো হিসাব দিতে বলেছেন।
আমি মনে করি এসব হিসেব নিকেশ চেয়ে লাভ নেই, দরকারও নেই। দরিয়া বাঁধাই করতে টাকা দরিয়ায় ঢালা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত দরিয়া বাঁধাই হয়েছে এটাই নির্ভেজাল সত্য। আপনারা নিজেরা কিছু করতে পারেন না, করেনও না। কাজ করতে হলে হিম্মত লাগে।
আপনারা কখনও ভেবেছিলেন রাজধানীতে মেট্রোরেল হবে? কিন্তু হচ্ছে এটাই সত্য।
আপনারা কখনও ভেবেছিলেন কর্নফুলি নদীর তলদেশে টানেল হবে? কিন্তু হচ্ছে এটাই সত্য।
দেশে অবকাঠামো খাতে গত ১০ বছরে যে উন্নয়ন হয়েছে, হচ্ছে সেটা বিষ্ময়কর। এসব সত্য স্বীকার করতে হবে। বড় প্রকল্পের টাকা নয়ছয় হবে এসব মেনে নিয়েই উন্নয়নের গতি অব্যাহত রাখতে হবে।
পদ্মাসেতু দুর্নীতি নিয়ে যখন বিশ্বব্যাংক আঙুল তুলেছিল তখন দেশের কথিত কিছু বুদ্ধিজীবী, কিছু অর্থনীতিবিদের হায় হায় বক্তব্য এখনও মনে পড়ে। মনে হয়েছিল দেশটা শেষ, শেখ হাসিনা শেষ করে দিয়েছেন। পরে যখন দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারেনি তখন এরা নিশ্চুপ হয়ে যান। কিন্তু শেখ হাসিনা যখন বললেন, কারও সাহায্যে নয়, নিজেদের টাকায় পদ্মাসেতু বানাবেন তখন সেই হায় হায় বিশারদরা যেনো আকাশ থেকে পড়লেন। তারা বলতে থাকলেন নিজেদের টাকায়
এতোবড় প্রকল্প করা সম্ভব না এবং করলে দেশের অর্থনীতির উপর চাপ পড়বে।
কিন্তু তাদের এই ধারণা মিথ্যা প্রমাণিত হলো। ভুল প্রমাণিত হলো। এখন স্বপ্নের পদ্মাসেতু বাস্তবতা। বছরখানেকের মধ্যে যানবাহন চলাচল শুরু হবে। নিজেদের অর্থে পদ্মাসেতু বানিয়ে দেশের অর্থনীতিও ভেঙ্গে পড়ে নি। বরং দেশ এগিয়ে যাবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সবচেয়ে আলোচিত