ঢাকা   শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১   সকাল ৭:২২ 

সর্বশেষ সংবাদ

বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা: গণপরিষদ ও সংবিধান

ইহাই হয়ত আমার শেষ বার্তা, আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের জনগণকে আহ্বান জানাইতেছি যে, যে যেখানে আছ, যাহার যাহা কিছু আছে, তাই নিয়ে রুখে দাঁড়াও, সর্বশক্তি দিয়ে হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করো। পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলার মাটি হইতে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও (অনূদিত)।

এভাবেই ছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ মধ্য রাতের পরে পাকিস্তান দখলদার হানাদার বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতারের পূর্ব মূহুর্তে প্রদত্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ওই ঘোষণা মুহূর্তেই বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে দেশময়। সাড়ে সাত কোটি বাঙালি বঙ্গবন্ধুর ওই ঘোষণায় উদ্দীপ্ত হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে। শুরু হয় সশস্ত্র লড়াই-সংগ্রাম। অবশেষে অনেক রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে কাঙ্ক্ষিত বিজয় অর্জিত হয় ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১।

স্বাধীনতা অর্জনের পর ২২ মার্চ ১৯৭২ রাষ্ট্রপতি কর্তৃক বাংলাদেশ গণপরিষদ আদেশ, ১৯৭২ (Constitutent Assembly of Bangladesh order,1972) জারির মাধ্যমে ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে তৎকালিন পূর্ব পাকিস্তানের নির্বাচিত জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যদের নিয়ে গঠিত হয় বাংলাদেশ গণপরিষদ। তবে বহিস্কৃত ও পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্য পোষণকারী সদস্যরা গণপরিষদের সদস্য পদ লাভের অযোগ্য ছিলেন। বাংলাদেশ গণপরিষদ এর প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ১০ এপ্রিল ১৯৭২।

গণপরিষদের প্রথম অধিবেশনে স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন এবং তাদের শপথ গ্রহণের পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্মাহুতি দানকারী লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রতি গণপরিষদের শ্রদ্ধা জানিয়ে এবং তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন। বঙ্গবন্ধুর প্রস্তাব অনুসারে শোক প্রস্তাব গৃহীত হলে নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে এক মিনিট নিরবতা পালনের পর সদস্যরা দাঁড়িয়ে মোনাজাত করেন এবং মাননীয় স্পিকার মোনাজাত পরিচালনা করেন। এরপর জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্পিকারের অনুমতি নিয়ে ‘স্বাধীনতা সর্ম্পকীয়’ প্রস্তাব গণপরিষদে উত্থাপন করেন। কয়েকজন সদস্য উত্থাপিত প্রস্তাবটির উপর মতামত দেন। প্রস্তাবটির উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন-

জনাব স্পিকার সাহেব, আপনার জানা আছে যে, ত্রিশ লক্ষ ভাই-বোনের রক্তের বিনিময়ে এই স্বাধীনতা  আমরা পেয়েছি। এই গণপরিষদের সদস্য হিসাবে নিশ্চয়ই তাদের আত্মত্যাগের কথা আমরা স্মরণ করব এবং মনে রাখব। আমাদের মনে রাখতে হবে, যে রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, সে রক্ত যেন বৃথা না যায়।… দলমত নির্বিশেষে যারা স্বাধীনতার জন্য রক্ত দিয়েছেন, শহীদ হয়েছেন, তাদের ত্যাগের কথা কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরন করে আমাদের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা গ্রহণ করতে হবে। …আজ স্বাধীনতা আমরা পেয়েছি, এর সঙ্গে সঙ্গে আমি চারটি স্তম্ভকে স্মরণ করতে চাই, যে স্তম্ভকে সামনে রেখে আমাদের দেশের সংবিধান তৈরি করতে হবে। জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। আমরা গণতন্ত্র দিতে চাই এবং গণতন্ত্রকে দিতেই আজ আমরা এই পরিষদে বসেছি। কারণ, আজ আমরা যে সংবিধান দেব, তাতে মানুষের অধিকারের কথা লেখা থাকবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ জনগণের জানমাল নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে। …আজ এখানে বসে চারটি স্তম্ভের উপর ভিত্তি করে আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য এমন সংবিধান রচনা করতে হবে, যাতে তারা দুনিয়ার সভ্য দেশের মানুষের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে।

বঙ্গবন্ধুর বক্তব্যের পর স্পিকার সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে ‘স্বাধীনতা ঘোষণা’ সম্পর্কিত প্রস্তাবটি পরিষদের সামনে উপস্থাপন করেন, যা ছিল নিম্নরূপ-

বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ঐতিহাসিক স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলাদেশের যে বিপ্লবী জনতা, কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, যুবক, বুদ্ধিজীবী, বীরাঙ্গনা, প্রতিরক্ষা বিভাগের বাঙালি, সাবেক ই.পি.আর, পুলিশ, আনসার, মুজাহিদ ও রাজনৈতিক নেতা ও কর্মী ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের রক্ত দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা অর্জন করেছেন, আজকের দিনে বাংলাদেশের জনগণের ভোটে নির্বাচিত বাংলাদেশ গণপরিষদ সশ্রদ্ধচিত্তে তাদের স্মরণ করছে। 

১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার যে ঘোষণা করেছিলেন এবং যে ঘোষণা মুজিব নগর থেকে ১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিল স্বীকৃত ও সমর্থিত হয়েছিল এই সঙ্গে গণপরিষদ তাতে একাত্মা প্রকাশ করছে। 

স্বাধীনতা সনদের মাধ্যমে যে গণপরিষদ গঠিত হয়েছিল আজ সে সনদের সঙ্গেও এ পরিষদ একাত্মতা ঘোষণা করছে। 

এক্ষণে এই পরিষদ বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার সেই সব মূর্ত আদর্শ, যথা, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা, যা শহীদান ও বীরদের স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্মত্যাগে উদ্বুদ্ধ করেছিল, তার ভিত্তিতে দেশের জন্য একটি উপযুক্ত সংবিধান প্রণয়নের দায়িত্ব গ্রহণ করেছে।

প্রস্তাবটি গণপরিষদে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। প্রস্তাবটির সহজ পাঠ ও বিশ্লেষণে মূলত চারটি বিষয় সুস্পষ্টভাবে লক্ষ্যণীয়-

এক. বাংলাদেশ গণপরিষদ স্বাধীনতা সংগ্রামে রক্তদানকারী সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের ত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সশ্রদ্ধচিত্তে তাদের স্মরণ করেছে;

দুই. গণপরিষদ ২৬শে মার্চ ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক প্রদত্ত স্বাধীনতার ঘোষণা, যা পরবর্তিতে ১০ এপ্রিল, ১৯৭১ ‘স্বাধীনতা সনদে’ অর্থাৎ ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’ স্বীকৃত ও সমর্থিত হয়েছিল তা অনুমোদন করেছে;  

তিন. গণপরিষদ মুজিবনগর সরকার কর্তৃক জারিকৃত ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’ বা ‘স্বাধীনতা সনদ’ অনুমোদন করেছে; এবং

চার. গণপরিষদ বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার মূর্ত আদর্শ, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা- যা শহীদান ও বীরদের স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্মত্যাগে উদ্বুদ্ধ করেছিল, তার ভিত্তিতে দেশের জন্য উপরোক্ত সংবিধান প্রণয়নের অঙ্গিকার ব্যক্ত করেছিল।

গণপরিষদ কর্তৃক গৃহীত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৫০-এ বিধান করা হয় যে- ‘সংবিধানের অন্য কোন বিধান সত্ত্বেও চতুর্থ তফসিলে বর্ণিত ক্রান্তিকালিন ও অস্থায়ী বিধানাবলী কার্যকর হবে।’ চতুর্থ তফসিল-এর অনুচ্ছেদ ৩(১)-এ উল্লেখ করা হয়-

১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ হইতে এই সংবিধান প্রবর্তনের তারিখের মধ্যে প্রণীত বা প্রণীত বলিয়া বিবেচিত সকল আইন, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র বা যে কোন আইন হইতে আহরিত বা আহরিত বলিয়া বিবেচিত কর্তৃত্বের অধীন অনুরূপ মেয়াদের মধ্যে প্রযুক্ত সকল ক্ষমতা বা কৃত সকল কার্য এতদ্বারা অনুমোদিত ও সমর্থিত হইল এবং তাহা আইনানুযায়ী যথাযথভাবে প্রণীত, প্রযুক্ত ও কৃত হইয়াছে বলিয়া ঘোষিত হইল।

‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’ বা ‘সনদকে’ গণপরিষদ তো বটেই সাংবিধানিকভাবেও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে এবং তা সংবিধানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে উল্লেখ  করা হয়েছে-

“…,

এবং 

যেহেতু এইরুপ বিশ্বাসঘাতকতামূলক আচরণের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বাংলাদেশের জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রনের আইনানুগ অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৭১ সনের ২৬ শে মার্চ তারিখে ঢাকায় যথাযথভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদান করেন এবং বাংলাদেশের মর্যাদা ও অখণ্ড রক্ষার জন্য বাংলাদেশের জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান, 

এবং
২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীর দ্বারা সংবিধানে অনুচ্ছেদ ১৫০ সংশোধন অর্থাৎ প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ৭ মার্চ ১৯৭১-এর ভাষণ, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্য রাত শেষে অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক প্রদত্ত স্বাধীনতার ঘোষণা এবং ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার কর্তৃক জারিকৃত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র-কে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তি সংগ্রামের ঐতিহাসিক ভাষণ ও দলিল উল্লেখে ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ হতে ১৯৭২ সালের ১৬ই ডিসেম্বর অর্থাৎ সংবিধান প্রবর্তন হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সময়কালের জন্য ক্রান্তিকালীন ও অস্থায়ী বিধানাবলী হিসেবে গণ্য করা হয়েছে এবং ওই ভাষণ ও দলিলসমূহ সংবিধানে পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম তফসিল হিসেবে সংযোজিত হয়েছে। 

২৬শে মার্চ ১৯৭১ বঙ্গবন্ধু কর্তৃক স্বাধীনতা ঘোষণা বাংলাদেশ গণপরিষদ কর্তৃক স্বীকৃত ও অনুমোদিত। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৫০ অনুযায়ী মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র এবং ১০ জানুয়ারি ১৯৭১ মুজিবনগর সরকার কর্তৃক জারিকৃত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ও বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ সংবিধানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭খ-এর দ্বারা সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে যা কিছুই থাকুক না কেন, সংবিধানের প্রস্তাবনা, প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ভাগের সকল অনুচ্ছেদ (নবম-ক ভাগে বর্ণিত অনুচ্ছেদ সমূহের বিধানাবলী সাপেক্ষে) এবং একাদশ ভাগের অনুচ্ছেদ ১৫০ সহ সংবিধানের অন্যান্য মৌলিক কাঠামো সংক্রান্ত অনুচ্ছেদ সমূহের বিধানাবলী সংযোজন, পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন, রহিতকরণ কিংবা অন্য কোন পন্থায় সংশোধনের অযোগ্য করা হয়েছে। 

বঙ্গবন্ধু কর্তৃক ২৬শে মার্চ ১৯৭১-এ প্রদত্ত স্বাধীনতার ঘোষণা সম্পর্কে বিতর্ক সৃষ্টি করার যে কোন অপচেষ্টা গণপরিষদের কর্তৃত্ব-কে চ্যালেঞ্জ করার পাশাপাশি সংবিধান লংঘনের শামিল এবং রাষ্ট্রদোহিতা মূলক একটি অপরাধ। 

সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭ক (১) (খ)-এ উল্লেখ আছে- সংবিধান বা এর কোন বিধানের প্রতি নাগরিকের আস্থা, বিশ্বাস বা প্রত্যয় পরাহত করলে বা তা কার্যকর জন্য উদ্যোগ গ্রহণ বা ষড়যন্ত্র করলে-তার এই কার্য ‘রাষ্টদ্রোহিতা’ হবে এবং ঐ ব্যক্তি রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে দোষী হবে।

অনুচ্ছেদ ৭ক(২)- এ উল্লেখ করা হয়েছে কোন ব্যক্তি যদি উপরোক্ত দফা (১)-এ বর্ণিত কার্য করতে সহযোগিতা বা উস্কানি প্রদান করলে কিংবা কার্য অনুমোদন, মার্জনা, সমর্থন বা অনুসমর্থন করে- তবে তার এইরুপ কার্যও একই অপরাধ হবে। 

বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সময় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র’ পনের খণ্ডের সিরিজ গ্রন্থের ২০০৪ সালের পুনর্মুদ্রণকৃত তৃতীয় খণ্ডের প্রথম পৃষ্ঠায় ‘মেজর জিয়াউর রহমান ২৭ মার্চ ১৯৭১ তারিখে প্রথম স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন’ মর্মে বর্ণনা করা হয়। 

বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ দলিলপত্র গ্রন্থ সিরিজের ২০০৪ সালের ওই পুনর্মুদ্রণটির তৃতীয় খণ্ড বাজেয়াপ্ত এবং বাংলাদেশ সৃষ্টির ইতিহাস বিকৃতকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে একটি রিট করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও চিকিৎসক এম এ সালাম।

বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক এবং বিচারপতি মো. মমতাজ উদ্দিন আহমেদ এর সমন্বয়ে গঠিত একটি দ্বৈত বেঞ্চ উক্ত রিট মোকদ্দমাটি শুনানি অন্তে ২১ জুন ২০০৯ তারিখের এক রায়ে ২০০৪ সালে পূর্নমুদ্রিত বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র’ -এর তৃতীয় খণ্ডের ১ম পৃষ্ঠায় ‘মেজর জিয়ার প্রথম স্বাধীনতা ঘোষণা’ শিরোনামে মুদ্রিত বর্ণনা ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল তারিখের স্বাধীনতা ঘোষণাপত্রের সাথে সাংঘর্ষিক বিধায় সাংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৫০ এর সাথেও সাংঘর্ষিক এবং সংবিধান পরিপন্থী মর্মে ঘোষণা করেন; এবং উপরোক্ত খণ্ডটি বাজেয়াপ্ত করার জন্য সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়। সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগের উক্ত রায় সকল কর্তৃপক্ষ ও ব্যক্তি’র জন্য অবশ্যই পালনীয় এবং বাধ্যকর।
যে সকল ব্যক্তি-মহল জেনে বুঝে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কর্তৃক প্রদত্ত স্বাধীনতার ঘোষণাকে বিতর্কিত করার অপতৎপরতা-অপচেষ্টা করেন তারা নিঃসন্দেহে জ্ঞানপাপী, বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু বিরোধী।
৭২-এর সংবিধান গণপরিষদে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিকরণ সংবিধানে স্বাধীনতার ঘোষণা স্বাধীনতার ঘোষণা।
( সৌজন্যে ঃ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)।
লেখক পরিচিতি ঃ এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি, হাইকোর্ট বিভাগ এবং সাবেক চেয়ারম্যান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১, বাংলাদেশ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সবচেয়ে আলোচিত